০৪ আগস্ট, ২০১৯ ০১:১৬
ভাটির জনপদ সুনামগঞ্জের তাহিরপুর। যেখানে বাংলাদেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট নয়নাভিরাম টাঙ্গুয়ার হাওর। বর্ষা মৌসুমে হাওরের অপরুপ সৌন্দর্য্য দেখার জন্য পর্যটকরা ভিড় করেন।
চারিদিকে নীল জল আর মেঘালয় পাহাড়ের অপরূপ দৃশ্যে ঘেরা টাঙ্গুয়ার হাওর। সারি সারি হিজল-করচ, পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত হাওরটি নানা জাতের মাছ, পাখি এবং অন্যান্য জলজ প্রাণীদের এক বিশাল অভয়াশ্রম। প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত হাওরটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠা পানির জলাভূমি। টাঙ্গুয়ার হাওরের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য দেশি-বিদেশি পর্যটকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করেছে। যার কারণে বর্ষা মৌসুমে এখানে পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে।
আর এই ভিড়ের সুযোগে নৌকা মালিকরা ইচ্ছেমত ভাড়া আদায় করছেন পর্যটকদের কাছ থেকে। অত্যধিক নৌকা ভাড়ার কারণে টাঙ্গুয়ার হাওর ঘুরতে এসে ভোগান্তিতে পড়ছেন পর্যটকরা। নৌকা মালিক ও চালকরা সিন্ডিকেট করে পর্যটকদের কাছে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিষয়টি স্বীকার করছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারাও। এখানে যেভাবে নৌকা ভাড়া নিয়ে পর্যটকদের হয়রানি করা হয়, তা অনেকটা মাছ বাজারের মত- এমনটা মনে করছে উপজেলা প্রশাসন।
এ অবস্থায় আগামী ৫ আগস্ট সোমবার স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি এবং ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তারা বসবেন নৌকা মালিকদের সাথে। সে বৈঠক থেকে নৌকার ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী নির্ধারণ করে দেওয়া হবে ভাড়া।
পর্যটক ও স্থানীয় মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, টাঙ্গুয়ার হাওর এলাকায় ঘুরতে এসে পর্যটকরা তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওর, টেকেরঘাট, শহীদ সিরাজ লেক (নিলাদ্রী লেক), বারেক টিলা, যাদুকাটা নদী, লাকমা ছড়া নৌকায় করে ঘুরেন। কিন্তু টাঙ্গুয়ার হাওর ঘুরতে আসা পযর্টকরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন নৌকার মালিক ও চালকদের কাছে।
বছর দু’য়েক আগেও যেখানে প্রতিদিনের (একদিন-একরাত) নৌকা ভাড়া ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা ছিল, সেখানে বছর খানেক ধরে সেটা ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা আদায় করা হচ্ছে। কোনো কোনো দিন এই ভাড়া আরো বেশি আদায় করা হচ্ছে বলে পর্যটকেরা অভিযোগ করেন।
ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক নূরে আলম বলেন, ‘বন্ধু-বান্ধব মিলে ঘুরতে এসেছিলাম টাঙ্গুয়ার হাওরে। কিন্তু মাত্র কয়েক ঘন্টার জন্য নৌকা ভাড়া দিতে হয়েছে ৬ হাজার টাকা। আবার রাতে থাকার জন্য বাড়তি টাকা দাবি করে নৌকার চালক। এত দূর থেকে এসেছি, ফিরে যেতে তো পারবো না, বাধ্য হয়েই টাকা দিতে হয়েছে।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, ইঞ্জিন চালিত নৌকায় কেউ সকাল থেকে সারাদিন, আবার কেউবা সারাদিন ও একরাত হাওরে থাকার জন্য ভাড়া করতে গিয়ে শুরু হয় নৌকার মাঝিদের সাথে দর কষাকষি। একটি নৌকা চালাতে (বড়) সর্বমোট ৩জন লোকের প্রয়োজন। আর ছোট নৌকায় দুজন। এক্ষেত্রে দৈনিক মজুরী জনপ্রতি ৪শত টাকা, তেল খরচ সবোর্চ্চ ১হাজার টাকা হলে হাওরে এক দিনের জন্য সবোর্চ্চ ২২০০-২৫০০টাকা খরচ হয়। সেখানে ৮-৯হাজার টাকার বেশি নিচ্ছে। আর একদিন ও একরাতে হাওরে থাকার জন্য ৫ হাজার সাড়ে ৫ হাজার টাকা সবোর্চ্চ নিলেই যথেষ্ট। সেখানে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা দাবি করে নিচ্ছে নৌকার মালিক ও মাঝিরা। টাঙ্গুয়ার হাওরে সিন্দাবাদ নামে একটি নৌকা ভাড়া দিচ্ছে ঢাকার একটি ট্যুর গ্রুপ। তাদের নৌকা একরাত একদিনের জন্য ভাড়া নিতে হয় ১৮ হাজার টাকায়। এ বিষয়ে সিন্দাবাদ গ্রুপের ইমরান জানান, আমরা মনে করছিনা ভাড়া বেশি। যদি বেশি হত, মানুষ নৌকা ভাড়া নিতো না।
এদিকে নৌকার ভাড়ার ব্যাপারে আগামী সোমবার একটি সভা ডাকা হয়েছে জানিয়ে তাহিরপুরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসিফ ইমতিয়াজ বলেন, এখানে নৌকা মালিকদের ভাড়া নিয়ে প্রচুর অভিযোগ পেয়েছি। মাছের বাজারের মত বানিয়ে একটি পর্যটন স্পটকে তারা সিন্ডিকেট করে ফেলছে। তাই আমরা সোমবার উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি এবং নৌকার মালিকসহ বসে নৌকার ধারণ ক্ষমতা এবং দৈর্ঘ অনুসারে ভাড়া নির্ধারণ করে দেব। যা নৌকার সামনে দৃশ্যমান জায়গায় লাগিয়ে রাখতে হবে।
ভোক্তা অধিকার সুনামগঞ্জ জেলার সহকারি পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ বলেন, এখানে অতিরিক্ত নৌকা ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। প্রশাসন যখন একটা নির্দিষ্ট হার ঠিক করে দেবে, তখন যদি তারা অতিরক্ত ভাড়া আদায় করে, ভোক্তা অধিকার সহজে পদক্ষেদপ নিতে পারবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, হাওরে ঘুরতে এসে পর্যটকরা যাতে ভোগান্তিতে না পড়েন, সে বিষয়টি দেখবে প্রশাসন। কোনভাবেই অতিরিক্ত নৌকা ভাড়া আদায় করা যাবে না। নৌকা ভাড়ার তালিকা আমরা টাঙিয়ে দেব পর্যটকদের সুবিধার্থে।
আপনার মন্তব্য