প্রান্ত রনি,রাঙামাটি

১২ জুলাই, ২০১৭ ০০:১৫

এখনো সহায়তা পায়নি কাপ্তাই হ্রদের জেলেরা

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, বংশ বৃদ্ধি, মজুদ ও ভারসাম্য রক্ষার্থে প্রতিবছর মৎস্য আহরণের ওপর তিন মাসের জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে প্রশাসন। বিনিময়ে কর্মহীন এ সময়ে জেলেদের খাদ্য সহায়তা দেওয়ার কথা। জেলেরা নিষেধাজ্ঞা মেনে মাছ ধরা বন্ধ করে বেকার বসে থাকলেও সময়মতো সহায়তার দেখা মেলে না।

গত ১ মে থেকে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ বন্ধ হয়েছে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার শেষ সময়ে এসেও রাঙামাটির জেলেদের হাতে পৌঁছায়নি কোনও সহায়তা। স্থানীয় প্রশাসনও জানে না জেলার জন্য কী পরিমাণ বরাদ্দ অনুমোদন পেয়েছে বা তা কবে এসে পৌঁছবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কর্মহীন দরিদ্র জেলেরা এ সময় পেটের দায়ে একের পর এক উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে সংসার চালাতে বাধ্য হন।এভাবে জেলেরা তিন মাসে যে ঋণের জালে জড়িয়ে পড়েন, এর জের তাদের সারাবছর ধরে টানতে হয়।

মাছ ধরাই যাদের একমাত্র জীবিকা,তারা কাজ ফেলে ঘরে বসে থাকেন সরকারি খাদ্য সহায়তার প্রতিশ্রুতির ওপর ভরসা রেখে। কিন্তু সেই সহায়তা কোনোবারই সময়মতো পান না জেলেরা। ফলে পরিবার নিয়ে অনাহার, অর্ধাহারে এই তিন মাস পার করতে হয় তাদের। মাঝেমধ্যে যে নামমাত্র সরকারি সহযোগিতা পাওয়া যায় তা দিয়েও সংসার চলে না। তখন নিরুপায় হয়ে তাদের পড়তে হয় ঋণের ফাঁদে।

চলতি মাস শেষে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে। অথচ এখনও তারা কোনও সহায়তা পাননি বলে জানান ইউসুফ উদ্দিন।

ইউসুফ উদ্দিনের সাথে আলাপকালে বলেন, ৯ মাসে জেলেরা যা সঞ্চয় করে, এই তিন মাসে তা বিক্রি করে চলতে হয়। অনেকে বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে সংসার চালায়। এর কিস্তি দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। অনেকে এই ঋণ পরিশোধ করতে বিভিন্নজনের কাছ থেকে মোটা সুদে আবারও ঋণ নেয়। এর জের জেলেদের সারা বছর ধরেই টানতে হয়।

ঋণের কিস্তি তিন মাস স্থগিত রাখার প্রস্তাব রেখে কালা বাসী নামে এক জেলে বলেন,তিন মাস কিস্তি বন্ধ রাখলে জেলেদের জমানো জিনিসপত্র বিক্রি করতে হতো না। উচ্চসুদে ঋণ নেওয়ারও প্রয়োজন হতো না। একই সাথে ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে সরকারের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত সহায়তার দাবি করেন তিনি।

মৎস্য ব্যবসায়ী জালাল আহম্মেদ মিন্টু বলেন, জেলেদের এই তিন মাস যদি পর্যাপ্ত সহায়তা দেওয়া হয় তবে তারা চুরি করে আর মাছ শিকার করবে না। সরকার যে সহায়তা দেয় তা খুবই কম। দেখা যায় এই সময়টাতে জেলেরা পেটের দায়ে আমাদের টাকার জন্য জ্বালাতন করে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান বলেন, নিয়মানুযায়ী এ বছরও মাছ শিকারের ওপর নির্ভরশীল জেলে পরিবারগুলোকে সহায়তা দেওয়া হবে। অনুমোদন হয়ে আসলেই বোঝা যাবে এবার জেলেদের কত কেজি করে চাল দেওয়া যায়।

তিনি আরও বলেন,পাহাড় ধসের কারণে এই বিষয়টি এভাবে দেখা হয়নি। আশা করছি, খুব শিগগিরই জেলেদের মধ্যে এই চাল বিতরণ করা সম্ভব হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত