জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ

১৯ জুলাই, ২০১৭ ০৯:২৭

গরু পালনে স্বাবলম্বী ঝিনাইদহের তৈলটুপি গ্রাম

ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার ভায়না ইউনিয়নের তৈলটুপি গ্রামের প্রায় শতভাগ কৃষাণ-কৃষাণি গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্প গ্রহণ করে স্বাবলম্বী হয়েছে। এ গ্রামের সাড়ে ৪শত কৃষকের মধ্যে চারশত কৃষকই গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। কৃষকদের পাশাপাশি উপজেলার অনেক বেকার যুবকও গরু মোটাতাজাকরণের কাজ করে ধিরে ধিরে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে। প্রতি বছরই একেক জন কৃষক একাধিক গরু এ কাজ করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে আর সেই সাথে এনেছে সংসারে সচ্ছলতা।

এছাড়াও গরুর গোবর জ্বালানির পাশাপাশি জমিতেও ব্যবহার হচ্ছে জৈব সার হিসাবে। গরুর গোবর জমিতে সারের চাহিদাও পূরণ করছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় একাধিক কৃষক পরিবার। হরিণাকুন্ডু উপজেলার ভায়না ইউনিয়নের দারিদ্রপীড়িত একটি গ্রাম তৈলটুপি। এ গ্রামের হতদরিদ্র প্রায় চার শতাধিক কৃষাণ-কৃষাণি তাদের দারিদ্র জয়ের লক্ষ্যে দীর্ঘ ৩০-৪০ বছর ধরে গরু মোটা তাজাকরণের কাজ করে আসছে।

স্থানীয় বিভিন্ন বাজার ও পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে আসা গরুর বাছুর ক্রয় করে ১-৩ বছর ধরে লালন-পালন করে মুসলমানদের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব কোরবানির ঈদের হাটে বিক্রি করে অধিক মুনাফা করছে। সেই সাথে পূরণ করছে স্থানীয় ও দেশের মানুষের মাংসের চাহিদার একাংশ। অধিকাংশ কৃষকই প্রতি বছর এক থেকে দুটি গরু কোরবানি ঈদের ৫/৬ মাস আগে থেকে আধুনিক পদ্ধতিতে মোটা তাজা করতে ব্যস্ত থাকেন। এ কাজে কৃষকদের সাথে কৃষাণি ও তাদের ছেলে মেয়েরাও সহায়তা করে থাকেন। উপজেলার অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক চাকুরির আশায় না ঘুরে গরু মোটা তাজাকরণ পদ্ধতিকে পেশা হিসাবে বেছে নিচ্ছে। এ গ্রামে সবচেয়ে বেশী গরু লালন-পালন করেন আদিল উদ্দিন জোয়ারদার। তার বর্তমানে ৩০-৩৫টি গরু ও ৩ জন রাখাল আছে। পাকা গোয়াল ঘরে গরু রাখেন তিনি।

গরু পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন সকিনা নামে একজন বিধবা মহিলা। ২৫ হাজার টাকা নিয়ে ব্যবসা আরম্ভ করে এখন তার পুঁজি ৩ লক্ষ টাকা। পাশাপাশি ছেলেময়েকে লেখাপড়া করিয়েছেন ও সংসার চালিয়েছেন তিনি।

নাজিম উদ্দিন জানান, ৩০ বছর ধরে তিনি এ কাজ করে আসছেন। ঔষধ ও খাদ্যের দাম দিনদিন বাড়ছে। এতে লাভের পরিমাণ আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তারা ঠিকভাবে আসে না বলে তিনি জানান। গ্রামের গৃহিণীরা জানান, তারা তাদের বাড়ির পুরুষদের গরু লালন-পালনে সহায়তা করে থাকেন। আদিল উদ্দিন জোয়ারদারের গোয়ালের শ্রমিক মাসে ৬ হাজার টাকা বেতনে কাজ করেন।

এ ছাড়াও গরুর গোবর জ্বালানি পাশাপাশি রাসায়নিক সারের ব্যবহার এর পরিবর্তে গোবর জমিতে ব্যবহার দিনদিন বৃদ্ধি সহ জমির উর্বরা শক্তির বাড়ছে এবং ব্যাপক ফসলের ফলন বাড়ছে।

ঝিনাইদহ জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা জানান, ঝিনাইদহ জেলায় প্রচুর গরু মোটা তাজাকরণ করা হয়। এর মধ্যে তেলটুপি গ্রামে বেশী হয়। এদেরকে সরকারিভাবে আর্থিক সাহায্য করা হলে দেশীয় বাজারের মাংসের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি করতে পারত। ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে গ্রামটি সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারত।

কৃষকেরা দাবি করে বলেন, কোন ধরনের সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা তারা পায়না। তারা আশা পোষণ করেন সরকার তাদের এ ব্যাপারে সহায়তা করলে তারা দেশীয় বাজারে মাংসের চাহিদা পূরণ সহ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারবেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত