সিলেটটুডে ডেস্ক

৩০ নভেম্বর, ২০১৭ ০১:৪৯

ভূমিমন্ত্রী ছেলের নেতৃত্বে হামলায় ৪ সাংবাদিক আহত

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুরে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় চার টিভি সাংবাদিককে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। বুধবার বিকেলে ভূমিমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর ছেলে শিরহান শরীফ তমালের নেতৃত্ব তার ক্যাডার বাহিনী এ হামলা চালায় বলে অভিযোগ।

দৈনিক সমকাল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এ ঘটনার সময় হামলাকারীরা সাংবাদিকদের ল্যাপটপ ও ক্যামেরা ভাংচুর করে। আহতদের পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ঘটনার প্রতিবাদে বিকেলে পাবনা শহরের ট্রাফিক মোড়ে প্রতিবাদ সভা করেন পাবনায় কর্মরত সাংবাদিকরা। এ সময় ভূমিমন্ত্রীর ছেলে তমালকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারসহ তিন দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন তারা।

আহতদের মধ্যে রয়েছেন- সময় টিভি ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের পাবনা প্রতিনিধি সৈকত আফরোজ আসাদ, এটিএন নিউজের পাবনা প্রতিনিধি রিজভী রাইসুল ইসলাম জয়, ডিবিসি নিউজের পাবনা প্রতিনিধি পার্থ হাসান ও ক্যামেরাপারসন মিলন হোসেন।

এসব বিষয়ে ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ বলেন, ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঈশ্বরদী (পাবনা-৪) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট রবিউল আলম বুদু জানান, একটি প্রকল্প উদ্বোধনের কাজে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী এখানে আসছেন। এ উপলক্ষে তাকে স্বাগত জানিয়ে দলের প্রচারকর্মীরা আশপাশে পোস্টার লাগাচ্ছিলেন। এ সময় ভূমিমন্ত্রীর ছেলে শিরহান শরীফ তমালের নেতৃত্বে ৩০-৪০ কর্মী তাদের মাইক্রোবাস ভাংচুর করে। হামলায় প্রকৌশলী সৈকত আরেফিন চোখে গুরুতর আঘাত পান। এ ছাড়া ছাত্রলীগ নেতা সবুজ, নুর আলম, চালক আকবরসহ কয়েকজন আহত হন। হামলাকারীরা অস্ত্র প্রদর্শনের পাশাপাশি গুলিও করে। গাড়ির মধ্যে গুলির খোসা পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি।

আহত সাংবাদিকরা জানান, বুধবার বিকেলে তারা পেশাগত দায়িত্বের অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সম্পাদক রবিউল আলম বুদুর সমর্থকদের প্রচারগাড়িতে ভূমিমন্ত্রীর ছেলে তমাল ও তার অনুসারী যুবলীগের ক্যাডার বাহিনীর ভাংচুর ও হামলার দৃশ্য ভিডিও ক্যামেরায় ধারণ করছিলেন। এ সময় ক্যাডাররা তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে বেধড়ক মারধর করে। তাদের কারও মোবাইল ফোন, কারও ল্যাপটন, কারও ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে ভেঙে ফেলে আক্রমণকারীরা। আহত সাংবাদিকরা স্থানীয় হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে চাইলে হামলাকারীরা তাতেও বাধা দেয়। শহর থেকে অন্য সহকর্মীরা ও স্থানীয়রা গিয়ে তাদের রক্ষা করেন। পরে তাদের আহত অবস্থায় পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ঘটনার খবর পেয়ে পাবনার সাংবাদিকরা আহত সাংবাদিকদের হাসপাতালে দেখতে যান। পরে হাসপাতাল চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন তারা। শহরের প্রধান রাস্তা আবদুল হামিদ সড়ক অবরোধ করে ট্রাফিক মোড়ে আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় তারা জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহসভাপতি কামাল সিদ্দিকীর সঞ্চালনায় এ সমাবেশে বক্তব্য দেন প্রেস ক্লাবের সভাপতি অধ্যাপক শিবজিত নাগ, সম্পাদক আঁখিনুর ইসলাম রেমন, সাবেক সম্পাদক উৎপল মির্জা, এবিএম ফজলুর রহমান, পাবনা জেলা সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি ও বিটিভি প্রতিনিধি আবদুল মতীন খান, হাবিবুর রহমান স্বপন, জনকণ্ঠের প্রতিনিধি কৃষষ্ণ ভৌমিক, পাবনা সংবাদপত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শহীদুর রহমান শহীদ, কল্যাণ সম্পাদক এসএম মাহবুব আলম, ডেইলি স্টার প্রতিনিধি তপু আহমেদ প্রমুখ।

সমাবেশ থেকে সাংবাদিকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে তিন দিন কালোব্যাজ ধারণ, ভূমিমন্ত্রীর সব সংবাদ বর্জন ও তার পদত্যাগের দাবি করেন নেতারা।

ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আজিম উদ্দিন বলেন, ঘটনাটি লোকমুখে শুনেছি। তবে কোনো অভিযোগ পাইনি। এ ব্যাপারে তদন্ত করে তথ্য উদ্ঘাটন করা হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত