২৭ এপ্রিল, ২০২০ ১৯:৩৫
লকডাউনের মধ্যেই ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল ফেরেন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সেই শিক্ষার্থী (২১)। তিনি শ্রীমঙ্গলের একটি চা বাগানের বাসিন্দা এবং শ্রীমঙ্গল সরকারী কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
গত ২২ এপ্রিল তিনি পরিবারসহ ঢাকার যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়া এলাকা থেকে শ্রীমঙ্গল আসেন, পরদিন ২৩ এপ্রিল পরিবারের সকল সদস্যের করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সেই নমুনা পরীক্ষার ফল রোববার রাতে আসে, পরিবারের সবার পরীক্ষার ফল নেগেটিভ আসলেও আক্রান্ত নারীর পরীক্ষার ফল পজিটিভ আসে।
এদিকে লকডাউনের মধ্যেই ঢাকা থেকে কিভাবে শ্রীমঙ্গল আসলেন আক্রান্ত নারীর পরিবার এ নিয়ে উপজেলা জুড়ে শুরু হয়েছে আলোচনা। গত ১৩ এপ্রিল মৌলভীবাজার জেলাকে লকডাউনের আওতায় আনেন জেলার ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন।
বিজ্ঞাপন
তার জারি করা ওই আদেশে স্পষ্ট করে লেখা ছিলো লকডাউন চলাকালীন সময়ে মৌলভীবাজার জেলায় প্রবেশ বা জেলা থেকে প্রস্থান কোনোটাই করা যাবে না এমনকি উপজেলা থেকে উপজেলায়ও চলাচল করা যাবে না। কিন্তু এই লকডাউনের মধ্যেও এই পরিবারটি শ্রীমঙ্গলে প্রবেশ করে লকডাউনের কার্যকারিতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।
একটি সূত্র জানিয়েছে আক্রান্ত শিক্ষার্থী পরিবারসহ ঢাকা থেকে আসার জন্য কয়েকটি পরিবহন ব্যবহার করেছেন এবং কিছুটা পথ হেঁটেও এসেছেন তবে আরেকটি সূত্র জানিয়েছে যে আক্রান্ত নারীর পরিবার এ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গলে এসেছেন।
সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই করার জন্য আক্রান্ত নারীর পরিবারের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা কেউ ফোন রিসিভ করেন নি। এদিকে প্রথম থেকেই লকডাউন কার্যকর করার ক্ষেত্রে প্রশাসন যথেষ্ট সচেষ্ট না থাকারও অভিযোগ উঠেছে।
লকডাউন কার্যকর করার পর থেকেই শ্রীমঙ্গল শহরে প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন শহর থেকে লোক ঢোকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিশেষ করে বিভাগের সবচেয়ে করোনা উপদ্রুত এলাকা হবিগঞ্জ জেলা থেকেও প্রতিনিয়ত শ্রীমঙ্গল লোক ঢুকছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
উপজেলার প্রাণি চিকিৎসক জীবন দেব জানান, লকডাউনের মধ্যে হবিগঞ্জের বানিয়াচং থেকে সোমবার সকালেও আমার পাশের বাসায় দুই জন লোক এসেছেন এবং তারা অবাধে চলাফেরা করছেন। একই ধরনের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে শ্রীমঙ্গলের অধিকাংশ এলাকাগুলো থেকে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শ্রীমঙ্গলের প্রবেশমুখ লছনা এলাকায় পুলিশের টহল টিম থাকে কিন্তু এলাকাটি পাহাড়ি হওয়া বিভিন্ন জেলা ও ঢাকা থেকে আগত লোকেরা সহজেই পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে শ্রীমঙ্গল শহরে ঢুকে পড়ছে। এছাড়া কিছু সংখ্যক মানুষ আবার হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে গাড়ী থেকে নেমে রেললাইন ধরে হেঁটে আসারও খবর পাওয়া গিয়েছে।
শ্রীমঙ্গল চৌমোহনার একজন ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী সিলেটটুডেকে জানিয়েছেন,গত পরশু দিন তিনজন লোক ঢাকার সাভার থেকে হেটে রওয়ানা দিয়ে একদিন একরাত হেটে রওয়ানা দিয়ে ভোররাতে চৌমোহনা এসে পৌঁছান।
এদিকে গত দুদিন আগে শ্রীমঙ্গলের বাডস রেসিডেনসিয়াল এর স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষের স্ত্রী লকডাউনের মধ্যেই ব্যক্তিগত গাড়ী নিয়ে ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল ভাড়াউড়া চা বাগানে উনার বাসায় উঠেন পরে স্থানীয় এলাকাবাসী পুলিশকে খবর দেয় পুলিশ এসে উনাকে কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলে।
বিজ্ঞাপন
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, শহরে ঢোকার একাধিক রাস্তা থাকায় বিভিন্ন গ্রামের রাস্তা ও অলি গলি দিয়ে লোকজন শহরে ঢুকে পরছেন। তাদের ঠেকানোটা আমাদের জন্য কষ্টকর হয়ে পরেছে।
স্থানীয় গনমাধ্যমকর্মী শিমুল তরফদার সিলেটটুডেকে বলেন, ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে শ্রীমঙ্গলে করোনাভাইরাস নিয়ে মানুষ আসছে। লকডাউন হলেও জেলার সাথে সড়ক যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। ঔষধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকান ছাড়াও অন্যান্য সব ধরনের দোকান খোলা রেখে ব্যবসা চলছে। অপ্রয়োজনে মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে। এতে ঝুঁকি বাড়ছে করোনার।
করোনা প্রতিরোধে এখনই সম্মেলিত প্রচেষ্টা দরকার জানিয়ে তিনি বলেন, লোক দেখানো লকডাউন বাদ দিয়ে শ্রীমঙ্গলকে করোনা থেকে বাঁচাতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে আলোচনা করা জরুরী, শুধু আলোচনাই নয়, প্রশাসনকে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার আহ্বান করেন তিনি। তাদের নিয়ে আজকালকের মধ্যে বসে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরি বলেও মনে করেন তিনি।
এ ব্যাপারে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন বলেন, আমরা খবর পেয়েছি বিচ্ছিন্নভাবে কিছু মানুষ ফাঁক-ফোকর দিয়ে জেলায় প্রবেশ করছে। আমরা আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করছি, যাতে কেউ জেলায় প্রবেশ করতে না পারে।
আপনার মন্তব্য