সিলেটটুডে ডেস্ক

০২ মে, ২০২০ ২০:৪৮

করোনাকে জয় করলেন ময়মনসিংহের একই পরিবারের ৫ নারী

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় একই পরিবারের ৫ নারী করোনাকে জয় করে বাড়ি ফিরেছে। উপজেলায় প্রথম আক্রান্ত পোশাক শ্রমিক তরুণী ও তার পরিবারকে শনিবার আনুষ্ঠানিক ভাবে ‘করোনা জয়ী’ ঘোষণা করা হয়।   

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ জয় করে সুস্থ হওয়া নারীরা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের কাছ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা পেয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উদ্যোগে খাদ্যসামগ্রী ও নগদ টাকাও দেওয়া হয় প্রথম আক্রান্ত পোশাক শ্রমিক অজুফাকে।   

উপজেলার আঠারবাড়ি রেলওয়ে স্টেশন এলাকার উত্তরবনগাঁও গ্রামে বাসিন্দা আবুল কাশেম অসুস্থ হয়ে অক্ষম হয়ে পড়ায় অভাবের সংসারের হাল ধরতে হয় বড় মেয়ে অজুফা আক্তারকে (২০)। তিন বছর ধরে নারায়ণগঞ্জের একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিকের কাজ করছেন অজুফা। একা সংসারের ভার সামলাতে হিমসিম খাওয়া অজুফার সাথে বছর খানেক আগে ছোট বোন অনুফাও (১৮) পোশাক কারখানায় কাজে যোগ দেন।

পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গত ৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ থেকে বাড়িতে চলে আসেন অজুফা ও ছোট বোন অনুফা। বাড়িতে ফেরার পর শরীরে হাল্কা জ্বর আসায় স্থানীয় বাজারের এক চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ কিনে খান।

কিন্তু নারায়ণগঞ্জ থেকে আসায় এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক শুরু হয়। খবর পেয়ে ১১ এপ্রিল ঈশ্বরগঞ্জ স্বাস্থ্য বিভাগের করোনা ইউনিট অজুফার নমুনা সংগ্রহ করে। পরদিন ১২ এপ্রিল নমুনার ফলাফলে অজুফার শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়। ওই অবস্থায় তাকে বাড়ি থেকে ময়মনসিংহ এসকে হাসপাতালের আইসোলেশনে পাঠানো হয়।

একইসঙ্গে অজুফার পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীদের নমুনা সংগ্রহ করে স্বাস্থ্য বিভাগের টিম। ১৬ এপ্রিল ফলাফলে অজুফার ১০ বছর বয়সী বোন শাপলা, বোন অনুফা, ফুফু আখিনূর ও চাচি আঙ্গুরা বেগমের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। ওই অবস্থায় পরিবারটির চার সদস্যকে বাড়িতে হোম আইসোলেশনে রাখা হয়।

করোনাভাইরাস শনাক্ত হবার পর একই পরিবারের ৫ সদস্য চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে থেকে চিকিৎসা নিতে থাকলে তাদের আরও দুই দফা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় তাদের শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি না পাওয়ায় শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের করোনা জয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।

উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। অজুফাকে শনিবার সকালে ময়মনসিংহের এসকে হাসপাতাল থেকে ও বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নেওয়া ৪ জনকে ঈশ্বরগঞ্জ স্বাস্থ্য বিভাগ ছাড়পত্র দেয়।

পোশাক শ্রমিক অজুফা আক্তার জানান, তার শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে শুরু থেকেই তা বিশ্বাস করতে পারেননি। বিষয়টি জানাজানি হলে অনেকে ফোন করায় তিনি খুব কষ্ট পেয়েছিলেন। তবে দৃঢ় মনোবল নিয়ে চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে এখন তিনি সুস্থ।

করোনা জয়ী একই পরিবারের এই সদস্যদের স্বাগত জানাতে শনিবার বেলা ১২টার দিকে তাদের বাড়িতে যান করোনা প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. নূরুল হুদা খান। পরিবারের সদস্যদের হাতে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান তিনি।

এসময় মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে পরিবারটিকে করোনামুক্ত ঘোষণা করা হয় ।

দুপুরে ময়মনসিংহ এসকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেনের দপ্তরে যান অজুফা। এ সময় তাকে খাদ্য সামগ্রী ও নগদ অর্থ উপহার দেন ইউএনও।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. নূরুল হুদা খান বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবার পরিবারটি তাদের তত্ত্বাবধানে থেকে নিয়ম মেনে চিকিৎসা নেয়। এতে তারা সুস্থ হয়ে ওঠে। অজুফা এসকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠেন। নিয়ম মেনে আক্রান্ত রোগীরা ঘরে থেকে চিকিৎসা নিলে করোনামুক্ত হয়ে উঠবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন বলেন, করোনা একটি যুদ্ধ। নিয়ম মেনে চিকিৎসা নেওয়ায় তারা সুস্থ হয়ে উঠেছেন। ভয় না পেয়ে পরামর্শ অনুসারে চিকিৎসা নিলে সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা বেশি, এক্ষেত্রে পরিবারটি অনুকরণীয় হতে পারে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত