সিলেটটুডে ডেস্ক

০৭ নভেম্বর, ২০১৮ ১৬:০১

নির্দলীয় উপদেষ্টা সরকারের প্রস্তাব নাকচ

পুরনো ছবি

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদলে একজন উপদেষ্টা ও ১০ সদস্যের উপদেষ্টাবিশিষ্ট নির্বাচনকালীন সরকার গঠন বিষয়ক জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে সরকার।

ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট দ্বিতীয় দফা সংলাপে গণভবনে এসে লিখিতভাবে এই প্রস্তাব দেয়। আওয়ামী লীগ ঐক্যফ্রন্টের এ প্রস্তাব নাকচ করে দেয়। এ ছাড়া সংসদ ভেঙে দেওয়া, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবির বিষয়ে সরকার ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট একমত হতে পারেনি।

বৈঠকের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সংসদ ভেঙে দিয়ে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন চায়। কিন্তু এটা হলে তৃতীয় পক্ষ সুযোগ নিতে পারে বলে তাদের জানানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তাদের সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন। নির্বাচন পেছানোর কথা না বলতে ঐক্যফ্রন্টকে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

কাদের বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ও ১০ জন উপদেষ্টার বিষয়ে প্রস্তাব মানা হবে না, কারণও নেই।

ঐক্যফ্রন্টের প্রস্তাবের জবাবে আওয়ামী লীগ বলেছে, এটা সংবিধানসম্মত না। এই দাবি মেনে নিলে সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি হবে। এ সুযোগে তৃতীয় পক্ষে ঢুকে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

এ ছাড়া সংসদ ভেঙে দেওয়া, খালেদা জিয়ার মুক্তি, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তাদের ৭টি দাবি আবারও জানিয়েছে।

বেলা ১১টা ১০ মিনিটের দিকে শুরু হওয়া দ্বিতীয় দফা সংলাপ বেলা দুইটায় শেষ হয়। দুই পক্ষের পৃথক অবস্থানে কোনো পক্ষই ঐকমত্যে আসতে পারেনি বলে বৈঠক সূত্র জানিয়েছে। বেলা সোয়া দুইটার দিকে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা গণভবন থেকে বের হন।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ সেলিম গণভবন থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন—ঐক্যফ্রন্ট তফসিল পেছানোর কথা বলেছে। তবে আওয়ামী লীগ বা সরকার বলেছে, এটা নির্বাচন কমিশনের ব্যাপার।

পরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন চাইছে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করতে প্রধানমন্ত্রী ঐক্যফ্রন্টকে নিশ্চয়তা দিয়েছেন। সেনাবাহিনীর বিচারিক ক্ষমতা থাকবে না। তবে সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকবে। সাত দফার বেশির ভাগই প্রধানমন্ত্রী মেনে নিতে সম্মত হয়েছেন।

খালেদা জিয়ার মুক্তি না, জামিন চেয়েছে ঐক্যফ্রন্ট। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ বলেছে, এটা আদালতের বিষয়।

সংলাপে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের পক্ষে অংশ নেন— দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের; উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ; সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম; সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম; ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন; জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু; আইনমন্ত্রী আনিসুল হক; আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মণি ও আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম এবং দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবাহান গোলাপ।

অন্যদিকে, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে সংলাপে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে অংশ নেন বিএনপি মহাসচিব ও ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর; বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ; জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন; গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু ও নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী; নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ও এস এম আকরাম এবং জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতা সুলতান মোহাম্মদ মুনসুর আহমেদ।

এর আগে, ১ নভেম্বরের সংলাপে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে তাদের সাত দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। সংলাপ শেষে গণভবন থেকে বেরিয়ে উভয় পক্ষের নেতাদের বড় একটি অংশই গণমাধ্যমে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানান। তাতে একদিকে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় জোট এই সংলাপকে ‘খোলামেলা’ ও ‘ফলপ্রসূ’ বলে অভিহিত করলেও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা সংলাপে ‘আশাপ্রদ’ কিছু দেখেননি বলেই জানান।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত