সিলেটটুডে ডেস্ক

০১ এপ্রিল, ২০১৬ ১৫:৪৬

এবার ভুভুজেলা নিষিদ্ধের দাবি

এবার পহেলা বৈশাখে কর্কশ সুরের বাঁশি ‘ভুভুজেলা’ নিষিদ্ধের দাবি তুললেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।

শুক্রবার (১ এপ্রিল) সকালে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে ‘পহেলা বৈশাখে ভুভুজেলা নিষিদ্ধ চাই’ দাবি সম্বলিত একটি ব্যানার পোস্ট করেন তিনি। লেখেন ‘দেশীয় বাঁশীর মোহনীয়তা যেন ঢাকা না পড়ে যায়’।

আর কিছুদিন পরেই বাঙালির মহোৎসব বাংলা নববর্ষ। যেখানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব বাঙালি এককাতারে সামিল হবেন। বলা হয়, বর্তমানকালের একমাত্র অসাম্প্রদায়িক উৎসব এটি।

কিন্তু ইদানীং বাঙালির একান্ত নিজস্ব ঐতিহ্যের এই উৎসবটিতে বহিরাগত সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটেছে। অনেক ক্ষেত্রেই কলুষিত হয়েছে। বিশেষ করে রাজধানীতে নববর্ষের উৎসবে যন্ত্রণা হয়ে আসে আফ্রিকা থেকে আমদানি করা কর্কশ বাঁশি ভুভুজেলা। ঐতিহ্যবাহী গ্রাম্যমেলায়ও আজ নলখাগড়া বা বাঁশের বাঁশির স্থান দখল করেছে ক্ষতিকর প্লাস্টিকে তৈরি এ বাঁশি।

শব্দ ও পরিবেশ দূষণসহ নারীর শ্লীলতাহানি ও অশোভন আচরণেও ব্যবহার করা হচ্ছে এই বিশেষ বাঁশিটি। তাই আসন্ন নববর্ষে ভুভুজেলা নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে এখন থেকে সোচ্চার হয়েছেন অনেকে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ইভেন্টও খোলা হয় কিছুদিন আগে। ইতোমধ্যে ‘ভুভুজেলামুক্ত পহেলা বৈশাখ চাই’ নামের একটি ইভেন্ট বেশ সমর্থন পেয়েছে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মাঝে ।

পেজটিতে লেখা ছিল, ‘এই নববর্ষে আমরা ভুভুজেলা নিষিদ্ধ চাই। নববর্ষের এখনো বাকি এক মাসের উপর। অনেকের কাছে বিষয়টা শীতকালে সারিগানের মতো মনে হতে পারে। কিন্তু সত্যি কথাটা হলো, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম। আর ভুভুজেলার বিষ তো আমরা গত পাঁচ-ছয় বছরেই টের পেয়েছি। কেবল নারী নিপীড়ন নয়, ভুভুজেলার দুঃসহ শব্দদূষণে বিরক্ত হননি এমন মানুষ কমই আছেন। তাই, আসুন এখন থেকেই উৎসবে ভুভুজেলা নিষিদ্ধে সোচ্চার হই। নাহলে হয়তো বড়কর্তাদের কান পর্যন্ত আমাদের আওয়াজ পৌঁছাবে না’।

সেখানে আরো লেখা হয়েছে, ‘বিজাতীয় সংস্কৃতির বিকট ভুভুজেলা চাইনা, আমাদের বাঁশের বাঁশিই আমাদের প্রাণের সুর। জঙ্গলে যোগাযোগের জন্য যার উৎপত্তি, এই নগরে তার দরকার নাই। ভুভুজেলা মুক্ত উৎসব চাই। নববর্ষে ভুভুজেলা নিষিদ্ধ হোক’।

এ ছাড়া ‘যৌন নিপীড়নবিরোধী নির্দলীয় ছাত্র জোট’ নামের একটি ফেসবুক ফ্যান পেজে ভুভুজেলা নিষিদ্ধের দাবিতে লেখা হয়েছে বিভিন্ন স্লোগান ও স্ট্যাটাস। পেজটিতে লেখা হয়েছে, ‘সামনেই পহেলা বৈশাখ। নারী নিপীড়নসহ যেকোনো হয়রানি ও শব্দ দূষণ রুখতে এখনই সোচ্চার হোন। ভুভুজেলা কিনবেন না, কেউ বাজালে তাকে নিরুৎসাহিত করুন’।

গত বছরের এই ভুভুজেলার অসহনীয় চিত্রপটে দেখা যায় অসহ্য, বিরক্তিকর এই বাঁশির কর্কশ সুর রমনার বটমূল থেকে টিএসসি পর্যন্ত লাখো মানুষকে চরম যন্ত্রণায় ফেলে। পাশের ব্যক্তিটির কথাও শোনা যাচ্ছিল না এর অত্যাচারে। এদিকে বিজাতীয় সংস্কৃতির ভিড়ে বাঙালি সংস্কৃতির ডুগডুগি, বাঁশি, ঢোল, মাটির তৈজষপত্র ও খেলনা বিক্রি হয়েছে একেবারেই কম। আবার টিএসসিতে নারীদের অর্ধনগ্ন করার সময় আশে পাশের মানুষসহ সবার চিৎকার যাতে না শোনা যায় সেখানে পরিকল্পিতভাবে কয়েকজন মিলে বিকট শব্দে ভুভুজেলা বাজিয়েছে বলে বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রকাশ পায়। আর ভুভুজেলা নিষিদ্ধের দাবি ওঠে গত বছর থেকেই।

ব্রাজিল এবং অন্যান্য লাতিন আমেরিকার দেশে অনেক আগে দূরবর্তী গ্রামের বাসিন্দাদের ডাকার জন্য ভুভুজেলা ব্যবহার করা হতো। ভুভুজেলা নামের এই অদ্ভুত যন্ত্রটি ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত ফুটবল বিশ্বকাপে প্রথম দেখা যায়। বাঁশিটি সকল দর্শকদের আনন্দের খোরাক হিসেবে তখন ব্যবহার শুরু হয়েছিল। লাতিন আমেরিকায় এর উৎপত্তি হলেও ব্রাজিলসহ কিছু দেশে ভুভুজেলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া রিয়েল মাদ্রিদসহ বিখ্যাত ফুটবল ক্লাবগুলো এই শব্দের বিরুদ্ধে ফিফার কাছে অভিযোগ জানিয়েছে।

দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত ফুটবল বিশ্বকাপ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বাংলাদেশে ২০১১ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপে এই ভুভুজেলা যন্ত্রটি সবার কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ক্রিকেটভক্তদের হাতবদল করে আস্তে আস্তে দখল করে নেয় ছোট-বড় সব উৎসব। এমনকি রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস এবং বাঙালি জাতির ইতিহাস-ঐতিহ্যের সংস্কৃতির উৎসব বাংলা বর্ষবরণেও ভুভুজেলা নিজের জায়গাটি দখল করে।

চিকিবৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষের শ্রবণসীমার স্বাভাবিক মাত্রা ৪৫ ডেসিবেল। কিন্তু ভুভুজেলার শব্দ ৬০ ডেসিবলের বেশি হওয়ায় এটি মানুষের, বিশেষ করে শিশুদের শ্রবণশক্তির বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে। এমনকি শ্রবণশক্তি নষ্ট হওয়ারও আশঙ্কা থাকে। ভুভুজেলা উচ্চস্বরে বাজলে রক্তচাপ, কণ্ঠনালীর প্রদাহ, আলসার, মস্তিষ্কের রোগ, কাজ করার ক্ষমতা হ্রাস, বদমেজাজ বা খিটখিটে মেজাজ, ক্রোধ প্রবণতা স্নায়ুবিক দুর্বলতা, রক্তনালীর সংকোচন এবং হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ভুভুজেলা বাজে সাধারণত ৬০ থেকে ৫০ ডেসিবল মানমাত্রায়। এছাড়া এক সঙ্গে অনেকগুলো ভুভুজেলা বাজলে শব্দ উৎপাদনের মাত্রা ১০০ ডেসিবল ছাড়িয়ে যায়। যেটি নীরব, আবাসিক ও মিশ্র এলাকার মানুষের শ্রবণশক্তির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত