সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্ক

০২ এপ্রিল, ২০১৬ ১২:৩৯

‘মানুষের মাথায় ভারত কিংবা বাংলাদেশ বিদ্বেষ ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে’

ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার চলমান ঘৃণা ও বিদ্বেষ প্রসারের ঘটনাকে ক্রিকেট পণ্যায়নের ফল বলে মন্তব্য করেছেন কবি রাহাত মুস্তাফিজ। সাধারণ মানুষের মাথার ভেতরে ভারত কিংবা বাংলাদেশ বিদ্বেষ কৌশলে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি।

শনিবার (২ এপ্রিল) ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে রাহাত মুস্তাফিজ লিখেন পুঁজিবাদের কাছে দৃশ্যমান, অদৃশ্যমান, অলীক কিংবা অলৌকিক সবকিছুই পণ্য। পুঁজিবাদ একহাটে আল্লাহকে বিক্রি করে অন্যহাটে ভগবানকে কিনে এনে দোকানে সাজিয়ে রাখে আরোবেশি মুনাফার আশায়।

তিনি প্রশ্ন রেখে লিখেন, যে দেশপ্রেম নিয়ে আমাদের এতো অহংকার সেই দেশপ্রেমকে বিক্রি করে ওরা মুনাফা লুটছে সে খবর তোমার জানা আছে হে ক্রিকেট ফ্যান?

ইন্ডিয়াকে রেণ্ডিয়া আখ্যা দিয়ে যারা ঘৃণা চাষ করছে তাদের উদ্দেশে রাহাত লিখেন, মনে রাখতে হবে রাস্তার পাশে চটপটি বিক্রেতা যে ভারতীয় নাগরিক কোহলিদের খেলা দেখার জন্য সন্ধ্যার আগেই দোকান বন্ধ করে ইডেনে ঢোকার কিউতে দাঁড়ালো তার সাথে আমাদের মিরপুরের চা বিক্রেতা লোকটি যে কি না মাশরাফি ভক্ত - তার কিন্তু কোনো বিরোধিতার সম্পর্ক নেই। এরা নেহায়েত ক্রিকেট ভক্ত।

রাহাত মুস্তাফিজের ফেসবুক পোস্টের বিস্তারিত-

তোমার বিরোধিতার সাথে আমার বিরোধিতার পার্থক্য আছে। তুমি যখন ভারতের বিরোধিতা করছো সেখানে থাকছে জাতিগত বিদ্বেষ, ঘৃণা। অর্থাৎ একজন ভারতীয় মাত্রই তোমার কাছে ঘৃণার্হ। একজন ভারতীয় মানেই তোমার ভাষায় সে মালু কিংবা রেন্ডিয়া। কিন্তু তোমার ঘৃণা করার কথা ওইসব মুনাফাখোর ক্ষমতাবানদের যারা খেলাটিকে পণ্যে রূপান্তরিত করেছে। তোমার ঘৃণা করার কথা ওদের যারা আধিপত্য খাটিয়ে অন্যায্যভাবে এদেশে তাদের বাজার সম্প্রসারিত করছে। এবং এই সম্প্রসারণে এ দেশের যারা সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে তোমার অবস্থান পরিষ্কার করার কথা।

তোমাকে মনে রাখতে হবে রাস্তার পাশে চটপটি বিক্রেতা যে ভারতীয় নাগরিক কোহলিদের খেলা দেখার জন্য সন্ধ্যার আগেই দোকান বন্ধ করে ইডেনে ঢোকার কিউতে দাঁড়ালো তার সাথে আমাদের মিরপুরের চা বিক্রেতা লোকটি যে কি না মাশরাফি ভক্ত - তার কিন্তু কোনো বিরোধিতার সম্পর্ক নেই। এরা নেহায়েত ক্রিকেট ভক্ত।

এই সাধারণ মানুষের মাথার ভেতরে ভারত কিংবা বাংলাদেশ বিদ্বেষ ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে কৌশলে। একসময়ের শচিন-গাঙ্গুলিভক্ত আমাদের অনেকেই এখন আর ওদের উত্তরসূরিদের সহ্য করতে পারছি না। খেলাটায় আমরা যতো পারদর্শিতা দেখাচ্ছি ততোই বিরোধিতা, বিদ্বেষ, ঘৃণা বাড়ছে। ক্রিকেটে আধিপত্যকারী ভারতীয় মোড়লেরা যারা আবার আইসিসির অলিখিত নিয়ন্ত্রক প্রভু তারা আমাদের মতো উঠতি শক্তিকে অবৈধ উপায়ে দমন করতে তৎপর হয়ে উঠছে।

এসবই ক্রিকেট পণ্যায়নের ফল। পুঁজিবাদের কাছে দৃশ্যমান, অদৃশ্যমান, অলীক কিংবা অলৌকিক সবকিছুই পণ্য। পুঁজিবাদ একহাটে আল্লাহকে বিক্রি করে অন্যহাটে ভগবানকে কিনে এনে দোকানে সাজিয়ে রাখে আরোবেশি মুনাফার আশায়। যে দেশপ্রেম নিয়ে আমাদের এতো অহংকার সেই দেশপ্রেমকে বিক্রি করে ওরা মুনাফা লুটছে সে খবর তোমার জানা আছে হে ক্রিকেট ফ্যান? ক্রিকেট প্রসূত তোমার জাতিয়তাবাদী আবেগ যতোবেশি উগ্র হবে ততো ওদের লাভ। ওরা পাকিস্তান-ভারত ক্রিকেট দ্বৈরথের মতো আরেকটা বাংলাদেশ - ভারত ক্রিকেট যুদ্ধ সৃষ্টি করতে পারলে ওই মুনাফাখোরদেরই লাভ। তোমার আমার লাভ নেই কিছু। বরং একটা টিকিটের জন্য সারারাত লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে টিকেট না পেয়ে মাথা ফাটিয়ে বাসায় ফিরে টিভিতে রেন্ডিয়া রেন্ডিয়া চিৎকার করে ভেতরের অক্ষম আক্রোশ লঘু করাই সার।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত