মাসকাওয়াথ আহসান

২০ এপ্রিল, ২০১৬ ১৭:১৩

ক্ষমতার ঘেউ ঘেউ বৃষ্টি

তাহলে কী ব্যাপারটা এই; জনগণ তার রাজস্ব-রেমিট্যান্স-শ্রমে-ঘামে-অর্থে হুতু-তুতসি রাজনৈতিক গোত্রের প্রতিশোধের পুনরাবৃত্তিকর ঘটনাগুলো দেখতে থাকবে। প্রতিটি সাধারণ নাগরিকের গুম, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, উচ্ছেদের এক একটি ট্র্যাজেডিকে একটি করে প্রতিশোধের কুস্তি প্রদর্শনী দিয়ে ঢেকে দেয়া হবে। ঠিক কতদিন চলবে এই ইস্যু সাফাই-এর খেলা।

জনগণের টাকায় মোটাতাজা হওয়া এই হুতু-তুতসি ষাঁড়ের লড়াই জনমানুষের অনেক বেশী সময় আর জীবনের শুল্ক নিয়ে নিচ্ছে; খুব একঘেয়ে এবং তিক্ত এই বলীবর্দ ষাঁড়গুলোর শিং বাগিয়ে একে অপরের দিকে তেড়ে যাবার দৃশ্যগুলো।

হুতুরা যখন ক্ষমতায় ছিলো তখন তুতসিদের সঙ্গে যে যে অন্যায় করেছে; তুতসিদের গুণে গুণে ঠিক ততগুলো প্রতিশোধ নিতে হবে। কিন্তু হুতুরা জনমানুষের সঙ্গে যে অন্যায় করেছে তার প্রতিশোধের কাজটা তুতসিদের প্রতিশোধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অগ্রাধিকার নয়। ওরা আছে নিজেকে নিয়ে।

আশ্চর্যজনকভাবে তুতসিরাও জনমানুষের সঙ্গে হুতুদের মতই অন্যায় করে চলেছে। যখনই ছোটখাটো মানুষেরা সে অন্যায়ের প্রতিবাদে মুখর হয়; ঠিক তক্ষুনি তুতসিদের প্রতিশোধের নেশা চাপে হুতুদের প্রতি। এতে প্রতিশোধও হয়; নিজেদের অন্যায়টিকে জাদুকর ডেভিড কপারফিল্ডের মত লুকিয়ে ফেলা যায়।

হুতুদের দুর্নীতি-ধর্ম নিয়ে রাজনীতি-বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড-সংখ্যায় কম মানুষের সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন-জনমানুষের দাবী ঢেকে দিতে তুতসিদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের নেশা; এই সমস্ত রোগের উপসর্গ তুতসিদের শরীরে।

হুতুদের জাস্টিফিকেশানের বিনিময়ে খাদ্য (জাবিখা) প্রকল্পের লোকেরা যেমন জনদাবীকে উপেক্ষা করে নিজের অন্যায় অস্বীকার করতো; তুতসিদের জাবিখার লোকেরা ঠিক একই কাজ করে।

এই যে ক্ষমতায় থাকলেই শরীরে চর্বি হয়; দেমাগ হয় হুতু-তুতসিদের; ধরাকে সরা জ্ঞান করে সাধারণ মানুষের জীবন-সম্ভ্রম-সম্পদের ইজারাদার হবার দম্ভ জাগে; ঠিক কবে এই বর্বরতা থামবে।

হুতু-তুতসিদের প্রতিশোধের তালিকা এতো লম্বা যে সেইসব প্রতিহিংসা চরিতার্থ করে জনমানুষের দাবীকে গুরুত্ব দেবার সময় আসার ব্যাপারটা যেন এক অনন্ত অসম্ভব প্রতীক্ষার ব্যাপার হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

গোবর নিকানো উঠোনের সালিশ

গ্রামে হুতু-তুতসিরা দ্বি-দলীয় রাজনৈতিক জুয়া খেলার ছক্কা-পাঞ্জাটা চালিয়ে যেতে চায়। এজন্য তারা গ্রামের কিছু শিক্ষিত লোককে বা মত মোড়লকে গোত্রভুক্ত করে। ঐ একজন অশিক্ষিত ইউপি চেয়ারম্যান যেমন একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়ে ঘুরে; যার পকেটে কাগজ-কলম থাকে। চুল থাকে পরিপাটি করে আঁচড়ানো। যে কথাটা চেয়ারম্যান সাহেব গুছিয়ে বলতে পারবে না; সেটা বলে দেবে ঐ মাস্টর।

গ্রামের তরুণদের মধ্যে কেউ চেয়ারম্যান সাহেবের কোন অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে; ঐ মাস্টর তার বাড়িতে তরুণকে ডেকে পাঠায়। একটা মজলিশ-এ-সুরা বসায় নিজের গোবর নিকানো উঠোনে।

সেখানে প্রতিবাদী তরুণ পৌঁছানোর আগে পর্যন্ত রগড় চলে। প্রাক-বৃদ্ধা নবিতুন বেগম সে রগড়ে অগ্রগামী হয়; কতগুলো চ্যাংড়া যুবক নবিতুনের রগড়ে লুটোপুটি খায়। বিনোদনহীন জীবনে এ যে চুলকানি উৎসব।

মাস্টর সাহেব আনন্দে আত্মহারা হয়। ইউপি চেয়ারম্যানকে ফোন করে আবেগী হয়ে ওঠে; মাইনসে আপনের সঙ্গেই আছে। ঐ চ্যাংড়ার নেতা হওনের শখ হইছে; মিটাইয়া দিতেছি; সে গ্রামবিরোধী ষড়যন্ত্র করতেছে।

 গোবর নিকোনো উঠোনের কোণায় পিচিক করে পানের পিক ফেলে নবিতুন বলে, সে হুতুগো টেকাটুকা খাইছে নিশ্চয়ই। তুতসি তরুণরা নবিতুন বু-র তথ্যে আরো উন্মত্ত হয়ে ওঠে। হেই আউক আইজ; খাইয়ালামু।

 এমন সময় ভিলেজ পলিটিক্স বোঝা এক তালেবর ঘাড় গুঁজ করে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে, ঐ প্রতিবাদী পোলার নাটের গুরু যারা তারা সাবধান হইয়া যান; আপনেগো সবাই চেনে। ভয়ে কাঁপতে থাকে গোবর নিকানো উঠোনের প্রতিটি গোবরকণা।

চেয়ারম্যান সাহেবের ফোন আসে, মাস্টর হজ্ঞলরে কইয়া দেও আমি হেই বেত্তমিজডারে একঘইরা ঘোষণা দিলাম।

চারপাশে গুবরে পোকাদের মাতম ওঠে, একঘইরা, একঘইরা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত