সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্ক

২০ এপ্রিল, ২০১৬ ১৮:৪৭

‘জাস্টিস ফর তনু’ বলে আর কাউকে লজ্জা দিলাম না!

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডের এক মাসপূর্তিতে সে হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি, প্রতিবাদ বিভিন্ন জায়গায় থমকে গেছে, এবং বিচার প্রক্রিয়ার গতিপ্রকৃতি নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করে অনলাইন একটিভিস্ট সৈকত ভৌমিক লিখেছেন ‘জাস্টিস ফর তনু’ বলে আর কাউকে লজ্জা দিলাম না!

তনু হত্যাকাণ্ডের পর প্রথম থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সরব থাকা সৈকত লিখেছেন, তনুর জন্যে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের তনু মঞ্চে আজ কেউ দাঁড়ায় না কারণ সবাই জ্বীনের ভয়ে ব্যস্ত হয়ে গেছে নিজস্ব জীবনে আর হাসিমুখে সেলফি তুলে প্রমাণ করে ওরাও চেষ্টা করছে তনুকে ভুলে গিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে ।

তনু হত্যার এক মাস হয়ে যাওয়ার পর তিনি লিখেছেন, এখন তনু কেবলই তাঁর পরিবারের।

সৈকত ভৌমিকের ফেসবুক পোস্টের বিস্তারিত-

তনু আজ একটি ইতিহাস । মা কে বলেছিলো টেইলারের দোকান থেকে জামা টা নিয়ে আসতে । ওর মা আজ সেটি বলে বলেই কান্না করে।

তনুর জন্যে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের তনু মঞ্চে আজ কেউ দাঁড়ায় না কারণ সবাই জ্বীনের ভয়ে ব্যস্ত হয়ে গেছে নিজস্ব জীবনে আর হাসিমুখে সেলফি তুলে প্রমাণ করে ওরাও চেষ্টা করছে তনুকে ভুলে গিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে।

তনুর সংগঠনের সবাইও আজ ব্যস্ত বৈশাখী উদযাপন সহ নানা কর্মসূচীতে আর নিজেদের পদ পদবী নিয়ে যদিও আজ তনুর স্মরণে একটি নাটক প্রদর্শন করা হবে" ধিক্কার" নামে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসের কাঁঠালতলায় বিকাল ৪টায়।

তনুর জন্যে ক্ষোভে ফুসে ওঠা কুমিল্লা শহরের কান্দিরপাড়েও তনুর জন্যে আন্দোলনকারীদের আর পাওয়া যায় না আর তাইতো এখন সেখানে সবাই ব্যস্ত ট্রাফিক জ্যাম পার হয়ে সামনের দিকে যেতে।

তনুর পরিবারও চোখের পানি ফেলে এখন কিছুটা ক্লান্ত কারণ বিচার চাইতে গিয়ে যদি আবার কাটাছেড়া করা হয় তনুর দেহ তবে তা কোন বাবা মায়ের সহ্য হবে?

তনুর জন্যে যারা মানববন্ধন করেছে তাদের অনেকেই আজ মনে দুঃখ নিয়ে ঘরে ফিরে গেছে আর ভাবছে কাল যখন তনুর মতন কাউকে মরতে হয় তবে পরিণতি বোধ হয় হবে একই।

তনুর ব্যাপারে ঢাকার আন্দোলনকারীরাও আজ শান্ত কারণ তাদের কাছে তনু শুধু মাত্র একটি ইস্যু যা বাজারে নিত্যনতুন ভাবে নতুন নতুন ভাবে পাওয়া যায়। এখন যেমন শফিক রহমান কাল হয়তো নতুন কোন নাম।

তনুর হত্যার প্রতিবাদে রাস্তাতে নামা সোহাগও আজ শান্ত জ্বীনের ভয়ে আর সোহাগকে দেখে বাকিরাও শান্ত কারণ কেই বা জেনে শুনে যেতে চাইবে জ্বীনের আড্ডাতে।

তনুর হত্যাকাণ্ডের তদন্তে থাকা সিআইডি দল বলছে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড আর ডাক্তারি রিপোর্ট বলছে হত্যাকাণ্ডের প্রমাণও নাকি পাচ্ছে না।

কিছুদিন পরে হয়তোবা উনারাও শান্ত হয়ে যাবেন আর এই সিস্টেম কে সাথে নিয়ে এগিয়ে যাবেন পরবর্তী কোন তদন্ত নিয়ে।

তনুর হত্যাকাণ্ডের পরে প্রতিবাদ কারীদের পুলিশের পক্ষ (পুলিশ সুপার) থেকে বলা হলো তনুকে মৃত্যুর পূর্বে ধর্ষণ করা হয়েছিলো কিন্তু প্রথম ময়না তদন্তকারী কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক শারমিন সুলতানার করা রিপোর্টের উপর বিভাগীয় প্রধান জানালেন ধর্ষণের কোন আলামত মিলে নি কিন্তু বললেন না আদালতে দেয়ার কথা যে রিপোর্ট তা মিডিয়ার সামনে কেমনে এলো?

আজ ২০ই এপ্রিল । ঠিক এক মাস আগেই হত্যা করা হয়েছিলো তনুকে । আর এই একমাস ধরে হত্যা করা হচ্ছে বিভিন্ন ভাবে তনুর পরিবারকে বিচারের নামে । কখনো জিজ্ঞেস করেছে ওর কারো সাথে কোন সম্পর্ক ছিলো কি না কেউ বা বলেছে সে হিজাবী হয়ে থাকলে কিভাবে তার উপর মানুষের নজর পড়েছে, কেউ বা বলেছে হিজাবী মেয়ে কেনো নাটক করতো, আবৃত্তি করতো।

সবাই শান্ত হয়ে গেছে এই সব ঘটনার প্রেক্ষাপটে শুধু মাত্র তনু বাদে যাকে মৃত্যুর পূর্বে হত্যাকারীরা টানা হিঁচড়া করেছিলো আর মৃত্যুর পরে ওর শরীর নিয়ে টানা হিঁচড়া করে ময়না তদন্তের নামে ময়না তদন্ত কারীরা।

মৃত্যুর মাস খানেক আগে এক কর্মশালাতে তনু জানতে চেয়েছিলো মানবধর্ম সম্পর্কে জানি না জীবিত অবস্থাতে সে তা জানতে পেরেছিলো কি না তবে মৃত্যুর পরে এই এক মাস যা যা হলো তা দেখে আসলে মানবধর্মই লজ্জিত হওয়ার অবস্থা হয়েছে ।

ধীরে ধীরে সব কিছু শান্ত হয়ে উঠবে কিন্তু বিচার হীনতার যে সংস্কৃতি গড়ে উঠছে তাতে কিন্তু অপরাধীরাও একদিন অশান্ত করে তুলবে বাংলার পরিবেশ আর এই কথা যত দ্রুত বুঝে উঠবে সবাই তা ততই ভালো।

তনুর কাছে অপরাধী হয়ে থাকবো সারা জীবন। ক্ষমা করে দিস আমাদের।

Rest In peace Tonu.

বিঃদ্রঃ- ‪#‎Justicefortonu‬ বলে আর কাউকে লজ্জা দিলাম না।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত