গোলজার আহমেদ

১৭ মে, ২০১৬ ২১:৩৭

কলিযুগ নয় বছর তিনেক আগের গল্প...

আমি প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তির ধারে কাছেরও কেউ নই বা তার সাথে আমার তুলনা করাটা নেহাত বোকামি ছাড়া কিছুই নয়- তারপরও কিছু কথা বলতে চাই- কারণ আমিও বছর দুই এক কোন একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় ছিলাম বলে।

আমি যে বিদ্যালয়ে পড়াতাম, সেই বিদ্যালয়ের সব চেয়ে কনিষ্ঠ শিক্ষক ছিলাম আমি। বিদ্যালয়টিতে ১ম শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত প্রত্যেক শিক্ষার্থীর এক মাত্র অপ্রিয় শিক্ষক ছিলাম আমি। তবে অপ্রিয় হলেও বিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষার্থী আবার আমাকেই বেশি পছন্দ করতো এটা আমি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি।

আবার এমনও পরিবেশ ছিল আমার মান্যবর সহকর্মী বা শিক্ষকরা আমাকে প্রথম দিকে খুব অপছন্দ করলেও তারা ধীরে ধীরে আমাকে এতটা আপন করেছিল যে তাদেরকে আমি এখনো ভুলতে পারিনি বা তারাও আমাকে ভুলতে পারেননি বা পারবেন বলেও মনে হচ্ছে না।

কিছু কারণ বলি - আমি বিদ্যালয়টিতে যোগদান করার ৪/৫ মাসের মাথায় সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বিদ্যালয়টিতে অনেক নিয়ম পরিবর্ত ন করতে পেরেছিলাম। বিশেষ করে নিয়মানুবর্তিতার বেলায়। শিক্ষার্থীদের কাছে একরকম ত্রাস হিসেবে আমার পরিচয় ছিল। আমি তাদেরকে শাসন করতে গিয়ে কারো গায়ে হাত তুলেছি, কাউকে স্কেল দিয়ে পিটিয়েছি কাউকে আবার কান ধরা সহ প্রাথমিক শাস্তি দেয়া যায় তা সব করেছি।

বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদেরকে শাস্তি দেয়ার বেলা খুব কিপটে থাকলেও আমি সবসময় উদার ছিলাম। আমার এহেন কার্যকলাপে এক সময় শিক্ষক শিক্ষার্থী এমনকি অভিভাবকেরাও বিরক্ত ছিলেন। কিন্তু তা ছিল সাময়িক সময়ের জন্য।

সরকারের কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও আমি আমার কাজ চালিয়ে গেছি- আর অবশ্যই সে ক্ষেত্রে আমাকে সহযোগিতা করেছেন আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক, স্কুল পরিচালনা কমিটি এবং অভিভাবকেরাও।

অবশেষে যখন আমি বিদ্যালয়টি থেকে বিদায় নেই তখন সবাই ই খুব অনুতপ্ত এবং আমার বিদায়ে কষ্টও লেগেছে তাদের। কই তারাতো কেউ আমাকে কান ধরে উঠবস করায়নি বা আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আনে নি। এখনো আমি যখন স্কুলের বারান্দায় পা দেই সকল ছাত্রছাত্রী হাসি মুখে আমার কাছে এসে দাঁড়ায় আর এখনো বলে স্যার মিস করি আপনাকে।

বিদ্যালয়ের প্রত্যেকজন শিক্ষক এখনো আমাকে দেখলে শত কষ্টের পরও হাসি মুখে সামনে দাড়িয়ে জিজ্ঞেস করেন আমি কেমন আছি । আর এবার যখন দেখি একজন শ্যামল কান্তি, যে কি না একজন ছাত্রকে পিটানোর দায়ে জনসম্মুখে কান ধরে উঠবস করতে হয় আবার চাকুরীচ্যূত হন।

তখন আমারও মনে হয় আমি নিজে ঐ বিদ্যালয়টিতে গিয়ে সবার সামনে কান ধরে উঠবস করি আর নিজের পাপমোচন করে বলি - শিক্ষকরা মা বাবার সমতুল্য কথাটি পুরোপুরি ভুল, বেমানান, মিথ্যা, বানোয়াট ইত্যাদি ইত্যাদি।

গোলজার আহমেদ : সাংবাদিক, আবৃত্তিশিল্পী।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত