অনলাইন প্রতিবেদক

২১ মে, ২০১৬ ১২:২২

শ্যামল কান্তিকে হত্যার পরিকল্পনা করে ফেসবুকে পোস্ট

নারায়ণগঞ্জে সাংসদ সেলিম ওসমান কর্তৃক লাঞ্ছিত  শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে 'ইসলাম অবমাননার' অভিযোগে এবার হত্যার পরিকল্পনা করে ফেসবুকে একটি পেজ থেকে উন্মুক্ত পোস্ট করা হয়েছে।

'সালাউদ্দিনের ঘোড়া'  নামক একটি পেজ থেকে শুক্রবার দিবাগত রাতে পোস্ট করে এই শিক্ষককে হত্যা করার ১১টি পদ্ধতি উল্লেখ করা হয়। বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজে পুলিশি নিরাপত্তায় চিকিৎসারত শিক্ষককে কীভাবে এই নিরাপত্তা ভেদ  করে হত্যা করা যায় সে বিষয়ে প্রকাশ্যে আলাপ করা হয়েছে।

শ্যামল কান্তিকে 'টার্গেট লকড' উল্লেখ করে শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা দিয়ে পোস্টটিতে ‎টার্গেটের বর্তমান অবস্থান হিসেবে হাসপাতালে তিনি যে ওয়ার্ডে আছেন তার ঠিকানা দিয়ে বলা হয়, "তার স্ত্রী সবিতা রানী'র সাথে অবস্থান করছে। তার চারিদিকে কয়েক স্তরের পুলিশ দিয়ে ঘেরা।"

এরপর আরেকটি প্যারায় হত্যা করার পরিকল্পনা নিয়ে লেখা হয়,

‪ ‎হত্যা_করার_কিছু_পদ্ধতি:‬  ১। জবাই করে,  ২। জিলহাজের মত মাথায় পেছনে ৬ ইঞ্চি কোপ দিয়ে, ৩। মাথায় ও হার্টে গুলি করে, ৪। খাবারে পয়জন মিশিয়ে, ৫। টয়লেটের কমোডে IED ডিভাইস বসিয়ে, ৬। দূরের ভবন থেকে স্নাইপার রাইফেল ব্যবহার করে, ৭। হ্যান্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে, ৮। সেখানে পাহারায় কোন ঈমানদার পুলিশ ভাই থাকলে শান্ত ভাবে, শ্যামলের মাথার পিছনে যেয়ে মাথায় গুলি করুন।, ৯। নার্স / ডাক্তার থাকলে, কুলাঙ্গার শ্যামলের দেহে বিষাক্ত ইনজেকশন পুশ করুন।, ১০। সাংবাদিক ভাই থাকলে, ক্যামেরার মধ্যে লেন্স ও সার্কিট খুলে সেখানে বোমা বসিয়ে শ্যামলের সাক্ষাৎকার নিতে যেয়ে ক্যামেরা ওর খাটের নিচে রেখে আসুন।, ১১। ... বাকীটা আপনারা নিজেরাই কমেন্টে লিখুন"।



পোস্টটি  শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত  ২৮ জন পছন্দ (লাইক) করে এবং ৬ জন শেয়ার করেছে।

শ্যামল কান্তি ভক্ত নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ করে একটি সংবাদ মাধ্যমে সাক্ষাতকার দেন। ফেসবুকে এভাবে প্রকাশ্যে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে পোস্ট করার পর অনেকেই তার নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে শঙ্কার কথা জানান।

আরও পড়ুন- সেলিম ওসমানের হুমকি, গালাগাল, অশ্রাব্য কথার ফোনালাপ ফাঁস (অডিও)

গত ১৩ মে  ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তোলে নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার পিয়ার সাত্তার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে মারধোর ও কান ধরে উঠ-বস করান জাতীয় পার্টির সাংসদ সেলিম ওসমান। এই ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী তীব্র প্রতিবাদ শুরু হয়। এই প্রতিবাদের মধ্যেই বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি শ্যামল কান্তিকে বরখাস্ত করে কমিটির সভাপতির বোনকে প্রধান শিক্ষক করে। তবে একদিন পর গত বুধবার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা কমিটির তদন্তের পর শিক্ষামন্ত্রী ওই বিদ্যালয় কমিটিকেই বাতিল করে দিয়ে প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে স্বপদে বহাল রাখার ঘোষণা করেন। তদন্ত কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদনেও ধর্ম নিয়ে শিক্ষকের কটূক্তির কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন- সেই ছাত্রের গায়ে নতুন পাঞ্জাবি, মুখেও নতুন কথা


এদিকে যে ছাত্রের বরাত দিয়ে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ আনা হয়েছিল সেই ছাত্র রিফাত তার লিখিত অভিযোগে কেবল মারধোরের কথা উল্লেখ করে, ধর্ম কটূক্তির কথা উল্লেখ করেনি। ঘটনার পর পরই বিভিন্ন টেলিভিশন মিডিয়ায় সাক্ষাতকারে সে ও তার মা অকপটে জানিয়েছিল শিক্ষক ধর্ম নিয়ে কোন কটূক্তি করেন নি। তবে একদিন পরই আবার কথা বদলে ধর্ম অবমাননার কথা জানায় সে। এমনকি শুক্রবার নারায়ণগঞ্জে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে শিক্ষকের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখে এই ছাত্র।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত