নিজস্ব প্রতিবেদক

৩০ মে, ২০১৬ ১৫:১১

‘আইএম জিপিএ ফাইভ’

ফাইল ছবি

মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি)-তে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা জানে না 'এসএসসি' মানে কি। 'জিপিএ' মানে কি তাও জানে না। এবছর এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীদের সাক্ষাতকার নিয়ে মাছরাঙা টেলিভিশনে প্রচারিত এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে শিক্ষার এমন দুর্দশার চিত্র।

প্রতিবেদনে সাংবাদিক জিপিএ-৫ প্রাপ্ত একজন শিক্ষার্থীকে প্রশ্ন করেন, আমি জিপিএ-৫ পেয়েছি- এই বাক্যের ইংরেজি কি? জবাবে এক শিক্ষার্থী বলে- 'আই এম জিপিএ-৫'। অপারেশন সার্চলাইট কি, এই প্রশ্নের জবাবে জিপিএ-৫ পাওয়া এক ছাত্রী বলে- 'অপারেশন করার সময় যে লাইট জ্বালায় সেটাই অপারেশন সার্চলাইট।'

মাছরাঙা টেলিভিশনের এই প্রতিবেদনটি ভাইরাল হয়ে গেছে ফেসবুকে। প্রতিবেদনটির ভিডিওচিত্র ফেসবুকে শেয়ার দিয়ে কেউ কেউ হাসাহাসি করছেন। আবার অনেকেই পাশের হারের বাম্পার ফলনের আড়ালে বাংলাদেশের শিক্ষার করুণ দিকটি তুলে ধরে দেশর ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এমন প্রতিবেদনের সমালোচনা করে সংবাদের নৈতিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ।

আমিরুল মাহবুব নামক একজন ফেসবুকে লিখেছেন, এ জন্য আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাই দায়ী। জিপিএ ৫ ধারীদের জন্য সত্যিই খুব ব্যথিত।

সাংবাদিক মহিউদ্দিন নিলয় ফেসবুকে এ ভিডিও শেয়ার দিয়ে লিখেছেন- এরা জাতির কি কাজে আসিবে!!

তবে মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের এই প্রতিবেদনের সমালোচনাও করছেন অনেকে। সাংবাদিক জ. ই. মামুন ফেসবুকে লিখেছেন- 'জিপিএ ফাইভ পাওয়া ছেলেমেয়েরা জিপিএর মানে জানে না, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস কবে জানে না বা নেপালের রাজধানী কোথায় জানে না- এই বিষয়গুলো যেভাবে সংবাদে উপস্থাপন করা হয়েছে তা সাংবাদিকতার কোন নীতিমালায় পড়ে, আমার জানা নেই। সাংবাদিকরা যদি পথে পথে মানুষকে সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্নের পরীক্ষা নিয়ে বেড়ান, সেটাকে সাংবাদিকতা বলা যাবে নাকি জনমত জরিপ বলা যাবে তাও আমি নিশ্চিত নই। কিন্তু সাধারণভাবে আমার মনে হয়েছে ওই রিপোর্টের মাধ্যমে বাচ্চাগুলোকে চরম অবমাননা করা হয়েছে। আমি নিশ্চিত, আমাদের সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ এমনকি শিক্ষকদেরও একটি বিরাট অংশ এসব প্রশ্নের শুদ্ধ উত্তর দিতে পারবেন না।'

আরও পড়ুন : জিপিএ ফাইভ এবং আমাদের সাংবাদিকতা

ফারজানা প্রিয়দর্শিনী আফরিন লিখেছেন, 'শিক্ষার মান কতখানি নীচে নেমেছে তা একজন প্রতিবেদকের দ্বারা অল্প কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থীকে প্রশ্ন করা দিয়েই চূড়ান্ত যাচাই করা যায় কিনা। সত্যি করে বলেন তো এই রিপোর্ট দেখার আগে আপনারা কয়জন 'জিপিএ' এর মানে জানতেন!!
সততার সাথে নিজেকেই উত্তরটি দিন।'
 
মাছরাঙা টেলিভিশনটির প্রতিবেদনটিতে মোট ১৩ জন জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সাক্ষাতকার নেওয়া হয়। কেউই বলতে পারেনি এসএসসি ও জিপিএ-এর পূর্ণ রূপ।

এই শিক্ষার্থীরা জানে না, শহীদ মিনার কিংবা জাতীয় স্মৃতিসৌধ কোথায়, অপারেশন সার্চ লাইট কি, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস কবে তাও জানে না এরা।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস কবে জানতে চাইলে- একজন বলে, ১৭ আগস্ট। আরেকজন বলে, ১০ ডিসেম্বর।

আরও পড়ুন : বাচ্চাগুলোকে আর অপমান না করলে হয় না!

রণসঙ্গীত কে রচনা করেছেন, এর জবাবে দু'জন বলে, 'পারি না'। একজন বলে, 'রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর'।  আর বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা হিসেব বলে, কাজী নজরুল ইসলামের নাম।
 
মাউন্ট এভারেস্ট কোথায়?
-ইংল্যান্ডে।
পিথাগোরাস কে?
- একজন ঔপন্যাসিক
নিউটন কোন তত্ত্বের জন্য বিখ্যাত?
-গাছ থেকে যে আপেল পড়ে এই।
বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্রপতির নাম কি?
- জানি না

এই প্রশ্নগুলোর জবাবে এমন অদ্ভুত উত্তর দেয় শিক্ষার্থীরা।

আরও পড়ুন : রিপোর্টটি কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে দেশের গোটা মিডিয়াকেই

মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশকে কয়টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে, নেপালের রাজধানীর নাম কি, কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার সফটওয়্যার এর মানে কি- এসব প্রশ্নেরও উত্তর দিতে পারেনি এই জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরা।

এগুলো না জানার কারণ হিসেবে শিক্ষার্থীরা বলে, আমরা সংবাদ বেশি দেখি না, নিউজ পেপার পরি না। সিলেবাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ, সাইন্সের সাবজেক্ট বেশি পড়ি। বাংলা, সমাজ এগুলো নিয়ে ঘাটি না।'

এ ব্যাপারে প্রতিবেদনটিতে অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন,  শিক্ষার্থীরা যে জিপিএ-৫ পাচ্ছে এটা সত্যিকারের জিপিএ-৫ না। তাদের হাতে জিপিএ-৫ টা তুলে দেওয়া হচ্ছে। এতে শিক্ষার মান বাড়ছে না কেবল সংখ্যা বাড়ছে।

আর ফেসবুকে লায়লা মালেক নামে একজন লিখেছেন, 'যেখানে Google এর মত প্রতিষ্ঠান GPA এর মান মূল্যায়ন না করে ব্যক্তিগত জ্ঞান ও শিষ্টতা মূল বিবেচ্য, সেখানে দেশী প্রতিষ্ঠান ও ব্যাকগুলির চাহিদা জিপিএ-৫। এই ধরনের অবিবেচ্য চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতেই এই দশা।

সরকারের এধরনের শিক্ষানীতি অচিরেই পরিবর্তন না করতে পারলে তোতা পাখি তৈরি হবে আদর্শ মানুষ না হয়ে। অদূর ভবিষ্যতে তাহারাই হয়তো সুযোগ সন্ধানী নেতৃত্বের ভূমিকায় বসে দেশের বারটা বাজাতে পারে।'

আপনার মন্তব্য

আলোচিত