সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্ক

০৫ ডিসেম্বর, ২০১৭ ১৬:০৯

‘একজন অসহায় মা বলছি’

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোবাশ্বের হাসান সিজার নিখোঁজ হওয়ার প্রায় এক মাস অতিবাহিত হতে চলেছে। গত ৭ নভেম্বর বিকালে কর্মস্থল থেকে বনশ্রীর বাসার উদ্দেশে রওয়ানা হওয়ার পর থেকে ‘নিখোঁজ’ রয়েছেন মোবাশ্বের হাসান সিজার।

প্রায় এক মাসেও ছেলে মোবাশ্বের হাসান সিজারের কোন খোঁজ না পাওয়া মায়ের আঁকুতি এবার খোলা চিঠির আকারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তুলে ধরেছেন মোবাশ্বেরের বোন তামান্না তাসমিন।

'একজন অসহায় মা বলছি’ শিরোনামের এ লেখাটিতে মোবাশ্বের হাসান সিজারের মা লিখেন--

বাসার কাছে কোনো গাড়ি স্লো হলে মনে হয় সামনে থামবে। হাসিমুখে ও গাড়ি থেকে বের হয়ে উপরের দিকে তাকাবে ভাড়ার জন্যে। ও কিসে করে আসবে? উবার নাকি সি এন জি? আমি চিৎকার করে নিচে নেমে যাবো। নিমিষে ভুলে যাবো আমার অসহনীয় হাঁটুর ব্যাথার কথা। কিন্তু নাহ। আমার এই স্বপ্ন কিছুতেই স্বপ্ন হচ্ছে না।

একই কাপড়ে রয়েছে ২৮ টি দিন। ওর প্যান্ট শার্ট আইরন করিয়ে রেখেছি। ও ঠান্ডা একেবারেই সহ্য করতে পারে না। তাই ওর কাপড়গুলা রোদে দিয়ে রেখেছি। প্রতিদিনই ওর ঘরের আসবাবপত্র, বিছানা সব ঝেড়ে মুছে পরিষ্কার করে রাখছি।

নিম গাছ বাসায় থাকা সাস্থের জন্যে ভালো। ওর ব্যালকনির নিচে লাগানো নিম গাছটা বড়ো হয়ে ছাদ স্পর্শ করছে কিন্তু ওই গাছের বাতাস এখন আর ওর গায়ে লাগছেনা।

ওর অনুপস্থিতিতে আমরা সবাই ম্রিয়মান। আত্মীয়স্বজন, বন্ধু বান্ধব সবাই খোঁজ রাখছে। অতিথিপরায়ণ ও বন্ধুবৎসল এই আমার এখন আর কারো ফোন ধরতে ইচ্ছা করে না। কারো সাথে কথা বলতেও ইচ্ছা করে না। একই কথা কতোবার বলবো?

- নাহ ওর কোনো খবর নাই।

সিজুর আনন্দের দিন হতো যখন আরিয়ানা ঘন্টাখানেকের জন্যে আমাদের বাসায় আসতো। ওর সঙ্গে বাড়ির ইট কাঠগুলাও যেন হেসে উঠতো। ও আমাদের পোষা কোয়েল পাখিগুলাকে খাবার ছিটিয়ে দিয়ে খিলখিল করে হেসে উঠতো। তামান্নার পোষা বিড়ালটাকে বাগে আনতে না পেরে বিরক্ত হতো। লোশনের সঙ্গে পাউডার তৈরী করে আমাদের খেতে দিত। মিছি মিছি সেটা খেয়ে আরিয়ানকে খুশি করতে হতো। ওর অবুঝ দুষ্টামিতে আমাদের বাসায় বয়ে যেত উৎসবের আমেজ আর সে সময় আমার সিজুকে মনে হতো পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ।

জানিনা কেউ ওকে নিয়ে গেছে কিনা। যদি কেউ ওকে নিয়ে থাকেন ,তাহলে বলবো, বিশ্বাস করেন, ও কখনো কারো উপকার ছাড়া অপকারের চিন্তা করতে পারতোনা। আমি মা বলে বলছি না। ও নিখোঁজ হওয়ার পর এতো মানুষের আকুলতা সেটাই প্রমান করে। যদি কেউ আসলেও ওকে আটকে থাকেন, তাদের বলছি, আমি অন্তরের অন্তরস্থল থেকে দোআ করি যেন আল্লাহ আপনাদের মায়েদের আপনাদেরকে নিজ বুকে টেনে নেয়ার অফুরান তৌফিক দেন করেন।

ইদানিং আমার ভয় হয়। আমাদের এই গলিতে যেন মৃত্যুর মিছিল হানা দিয়েছে। ঈদ উল আজহা র আগের দিন না ফেরার দেশে চলে গেলেন আমার দেন পাশের প্রতিবেশী। প্রায় দিন দশেক আগে চির বিদায় নিলেন আমার বাং পাশের বাড়িওয়ালি। তবে এবার কি আমাদের পালা?

ইন-শা-আল্লাহ ও হয়তো ফিরে আসবে। কিন্তু ও এসে কি আমাদের ২ জন (বাবা -মা) কে দেখতে পাবে? আমি আমার চোখ মোছা বন্ধ করে দিয়েছি। চোখ মুছলেও তো পানি মুছে না, ঝরতেই থাকে। শুধু লোকজনের সামনে চোখ মুছে এসে কথা বলি। কথাতো একটাই

- নাহ কোনো খবর নাই

ওর বাবা দীর্ঘশ্বাস ফেলে, আমি বৃথা অশ্রূ সংবরণ করার চেষ্টা করি, মেয়েটা বিষন্ন মুখে আশেপাশে ঘুরে। কেউ কি আছেন যে পারেন একটা হতাশাগ্রস্থ পরিবারকে আশার আলো দেখাতে? কেউ কি পারেন ওকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিতে?

ফিরিয়ে দিন না আমার ছেলেটাকে আমার কোলে। আল্লাহ অশেষ রহমত থাকবে আপনার উপর।

ইতি মোবাশ্বারের আম্মু।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত