বিয়ানীবাজার প্রতিনিধি

১৭ জুলাই, ২০১৮ ১৪:০১

লিটু হত্যা: এক বছরেও খোঁজ মিলেনি আততায়ীর

বিয়ানীবাজারে ছাত্রলীগ কর্মী খালেদ আহমদ লিটু (২৫) হত্যাকাণ্ডে এক বছর আজ মঙ্গলবার (১৭ জুলাই)।

২০১৭ সালের এই দিনে বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের ১১৭ নাম্বার কক্ষে লিটুর গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। লিটু হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া চার আসামী রিমান্ড-কারাগার শেষে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। বাকি তিন আসামী এখনো পলাতক। কিন্তু এতসবের পরও নিশ্চিত করে জানা যায়নি আতঙ্ক জাগানিয়া সেই গুলির রহস্য। খোঁজ মিলেনি সেই নি:শব্দ আততায়ীর।

এদিকে গত ১৬ জুন এজাহার নামীয় সাত জনকে অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও বিয়ানীবাজার থানার (ওসি) তদন্ত জাহিদুল হক । তবে কার গুলিতে প্রথমবারের মত লাশের সাক্ষী হয় কলেজ সে বিষয়টিও উল্লেখ হয়নি, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বন্ধুকটিও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি, নিহত লিটু যে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতো তাও এখনো উদ্ধার করতে পারেনি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে পুলিশ।

প্রতিবেদনে অভিযুক্ত আসামিরা হলেন, ফাহাদ আহমদ (২৩), কামরান আহমদ (২৪), এমদাদুর রহমান (২২) , দেলোয়ার হোসেন মিষ্টু (২৮), শিপু আহমদ (২৪), কাওছার (২৫) এবং সাহেদ আহমদ (২৪) ।

জানা যায়, হত্যাকাণ্ডের দিন নিহত লিটুর পিতা খলিল উদ্দিন বাদী হয়ে বিয়ানীবাজার থানায় মামলা দায়ের করেন। কিন্তু প্রতিবেদনে হত্যার সাথে সরাসরি জড়িত কে বা কারা তা বের করতে পারেনি পুলিশ। হত্যার কারণও জানা যায়নি। যদিও এজাহারনামীয় এক ছাত্রলীগ ক্যাডারের দিকে অভিযোগের তীর ছিল তদন্ত সংশ্লিষ্টদের। পুলিশ খোলাসা না করলেও বিয়ানীবাজার উপজেলা জুড়ে এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে আছে নানাকথা।

তদন্ত সূত্র জানায়, ঘটনার দিন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক পাভেল মাহমুদ ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাশেম পল্লব পক্ষের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজে দু’ গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা নিরসন হলে একটি কক্ষে বসে খোশগল্প করছিলেন নিহত লিটুসহ তার গ্রুপের আরো কিছু নেতাকর্মী।

এ সময় হয়তো কেউ গুলি করে পালিয়ে যেতে পারে। নিহত লিটুর মরদেহ অটোরিকশায় করে হাসপাতালে নিয়ে যান ছাত্রলীগের পাভেল মাহমুদ গ্রুপের নেতা কামরান হোসেন, এমদাদ হোসেন এবং আরো দু’একজন। পরে হাসপাতাল এলাকা থেকে তাদেরসহ ফাহাদ আহমদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

এ মামলার আসামী কামরান হোসেন বলেন, পরীক্ষা সামনে রেখে একটি মিথ্যা মামলায় পুলিশ আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। একই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া এমদাদ হোসেন মালয়েশিয়া থেকে দেশে বেড়াতে আসে। মামলার কারণে আমাদের অনেকের ভবিষ্যৎ শেষ হয়ে গেছে।

তবে ঘটনা পরবর্তী সময়ে পুলিশ জানায়, নিজের অস্ত্র থেকে বের হওয়া গুলিতে লিটু নিহত হলে গুলির আঘাত সরল রেখায় না থেকে নিচ থেকে উপরের দিকে থাকতো। কিন্তু নিহতের চোখের নীচের দিকে লাগা গুলির আঘাত ছিল সরলরেখা বরাবর। যার কাছে আগ্নেয়াস্ত্রটি ছিল সে হয়তো লিটুর ডানদিকে কিছুটা আড়াআড়ি অবস্থানে ছিল। তাছাড়া খুব কাছ থেকে গুলি করায় লিটুর মাথার পিছনের খোলস ফেটে মগজ বেরিয়ে মেঝেতে ছড়িয়ে পড়ে। হত্যাকাণ্ডের পর ঘটনাস্থল থেকে একজোড়া জুতা উদ্ধার করে পুলিশ। এছাড়া ময়নাতদন্তে সময় লিটুর মাথায় লাগা গুলিটিও উদ্ধার করা হয়।

ঘটনা পরবর্তী সময়ে বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজ প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কিন্তু দীর্ঘ এক বছর পরেও এ কমিটি ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে কোন প্রতিবেদন দাখিল করেনি।

কলেজের উপাধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম জানান, আমি সে সময়ে অন্যত্র চাকুরী করতাম। তাই আমার তেমন কিছু জানা নেই। তবে তদন্ত কমিটি কোন প্রতিবেদন দাখিল করেনি।

মামলার বাদী লিটুর পিতা খলিল উদ্দিন জানান, তার ছেলের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের সন্ধান দিতে পারেনি পুলিশ। তবে ঘটনার দিন কারা তার ছেলের সাথে কথা বলেছিলেন, তা পুলিশ কললিষ্ট এর মাধ্যমে জানতে পেরেছে। তিনি বলেন, ছেলের হত্যাকাণ্ডে কারা জড়িত, তা পুলিশই ভালো জানে। কারণ তারা মামলার তদন্ত করেছেন। আমি আল্লাহর কাছে আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।

বিয়ানীবাজার থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জাহিদুল হক জানান, লিটু হত্যা মামলায় এজাহার নামীয় সাত আসামীকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হয়েছে।

বিয়ানীবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহজালাল মুন্সি বলেন, আদালতে হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। তবে প্রতিবেদনে কার গুলিতে লিটু নিহত হয়েছিলেন তা নির্ণয় করা যায়নি।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৭ জুলাই বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজ ক্যাম্পাসের শ্রেণীকক্ষ থেকে ছাত্রলীগ কর্মী খালেদ আহমদ লিটুর লাশ উদ্ধার করা হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত