সিলেটটুডে ডেস্ক

০৭ মে, ২০২৪ ০২:১৪

সান্তিয়াগো বার্নাব্যু দে ইয়েস্তে

সান্তিয়াগো বার্নাব্যু। এই সময়ের অনেকেই এই নাম শুনলে মনে করবেন রিয়াল মাদ্রিদের স্টেডিয়ামের কথা বলা হচ্ছে। হ্যাঁ, এই নামে রিয়াল মাদ্রিদের ঐতিহাসিক একটা স্টেডিয়াম আছে, কিন্তু এই স্টেডিয়াম যার নামে করা তিনি হচ্ছেন ক্লাবটির ক্লাবের সফল প্রেসিডেন্ট, কোচ এবং ফুটবলার।

বলছি, সান্তিয়াগো বার্নাব্যু দে ইয়েস্তের কথা। এই নিবন্ধ তাকে ঘিরেই।

সান্তিয়াগো বার্নাব্যু দে ইয়েস্তে দীর্ঘ ৩৫ বছর লস ব্ল্যাঙ্কোসদের সভাপতির দায়িত্ব সামলেছেন। তার এই সময়ে রিয়াল মাদ্রিদ ছোটবড় মিলিয়ে ৭০টি ট্রফি জিতেছে। তবে শুধু ট্রফির সংখ্যা দিয়ে তার অবদান বোঝা যায় না। বরং স্প্যানিশ ক্লাবটির আজকের রিয়াল মাদ্রিদ হয়ে উঠার গল্পের একক নায়ক ডন সান্তিয়াগো বার্নাব্যু।

সান্তিয়াগো বার্নাব্যু ১৮৯৫ সালে আলবাসেটে-তে জন্মগ্রহণ করেন। তবে ছোটবেলাতেই তার পরিবার রাজধানী রিয়াল মাদ্রিদে পাড়ি জমায়। মাত্র ১৪ বছর বয়সে তিনি রিয়াল মাদ্রিদে ট্রায়াল দেওয়ার সুযোগ পান।

বার্নাব্যুর ইচ্ছা ছিল গোলরক্ষক হিসেবে খেলার, কিন্তু তার ভাই মার্সেলো বার্নাব্যু চাইতেন যেন ফরোয়ার্ড পজিশনে খেলেন। শেষ পর্যন্ত ভাইয়ের ইচ্ছাই পূর্ণ হয়।

১৭ বছর বয়সে সান্তিয়াগো বার্নাব্যু মূল দলে জায়গা করে নেন। একসময় তিনি রিয়াল মাদ্রিদের অধিনায়ক হয়েছিলেন। ১৫ বছর পর ১৯২৭ সালে তিনি খেলা ছেড়ে দেন। অবসর নেয়ার পরেও বার্নাব্যুকে প্রায়ই রিয়াল মাদ্রিদ এর ম্যাচে দর্শক এর ভূমিকায় পাওয়া যেত এমনকি ১৯২৮ সালে তিনি ক্লাব এর কোচ হিসেবেও ছিলেন।

১৯৪০ সালের দিকে রিয়াল মাদ্রিদের অবস্থা ছিল একেবারে নাজুক। এসময় ক্লাবের প্রেসিডেন্ট হন সান্তিয়াগো বার্নাব্যু।

রিয়াল মাদ্রিদের স্টেডিয়াম দুনিয়ার বিখ্যাত স্টেডিয়ামগুলোর অন্যতম। এক সময় মাত্র ১৬ হাজার ধারণক্ষমতার ছিল এই স্টেডিয়াম। তবে সান্তিয়াগো বার্নাব্যু এই স্টেডিয়ামকে লক্ষাধিক ধারণক্ষমতার করে গড়ে তোলেন। এই স্টেডিয়াম খরচের অনেকটাই আসে সমর্থকদের কাছ থেকে। তিনি রিয়াল মাদ্রিদের ফ্যান ক্লাবগুলোকে শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক সমর্থন দিয়েছিলেন। স্টেডিয়াম পুননির্মাণের পাশাপাশি তিনি উন্নত প্রশিক্ষণ সুবিধার ব্যবস্থা করেছিলেন।

সান্তিয়াগো রিয়াল মাদ্রিদকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করেছিলেন। এবং একজন আলাদা ব্যক্তি ক্লাবের প্রতিটি বিভাগের জন্য নিয়োগ দিয়েছিলেন। তার সভাপতিত্বেই প্রথম পেশাদার কোচিং দল গঠন করেছিল লস ব্ল্যাঙ্কোসরা।

সান্তিয়াগো বার্নাব্যুয়ের আমলেই ক্লাবের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি ঘটে। এমন সাফল্যের কারণে তখন ক্লাবে বিশ্ববিখ্যাত খেলোয়াড়দের দলে ভেড়ানোর কাজ শুরু করেন প্রেসিডেন্ট। এরই ধারাবাহিকতায় পাকো হেন্তো, আলফ্রেড ডি স্টেফানো, পুসকাস এর মত খেলোয়াড়রা রিয়াল মাদ্রিদের যোগ দেন।

ইউরোপিয়ান কাপের শুরুর পেছনেও অবদান ছিল বার্নাব্যুয়ের। রিয়াল মাদ্রিদ তখন টানা ৫ টি ইউরোপিয়ান কাপ জিতে নেয়, যেই রেকর্ড ইউরোপিয়ান ফুটবলের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত কেউ ভাঙতে পারেনি।

১৯৫২ সালে সান্তিয়াগো’র প্রচেষ্টায় রিয়াল মাদ্রিদের ক্লাব অ্যান্থেম ‘আলা মাদ্রিদ’ এর সৃষ্টি হয়। তাছাড়া ফুটবলের পাশাপাশি রিয়াল মাদ্রিদের বাস্কেটবল, হ্যান্ডবল ও ভলিবল দলের দিকে মনোযোগ দেন সান্তিয়াগো।

সান্তিয়াগো বার্নাব্যু রিয়াল মাদ্রিদকে যে উচ্চতায় নিয়ে গেছেন সেটা অনেক ইউরোপীয় ক্লাব পারেনি। তার জীবন উতসর্গ করেছিলেন তিনি ক্লাবের জন্যে। একজন খেলোয়াড়, প্রশিক্ষক, পরিচালক এবং সভাপতি হিসাবে প্রতিষ্ঠানের জন্য তিনি তার সর্বোচ্চ দিয়েছেন।

রিয়াল মাদ্রিদ আজ বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্লাব। তার এমন অবদানের কথা ভুলেনি ক্লাবের পরিচালনা পর্ষদ। তারই সম্মানে অল হোয়াইটদের স্টেডিয়ামের নামকরণ করা হয়েছে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর নামে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত