যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি

২৫ অক্টোবর, ২০১৫ ১২:৩৫

কারা, কেন হামলা করল সে বর্ণনা দিলেন বিচারপতি মানিক

‘‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার ছেলে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ইন্ধনেই লন্ডনে পূজামণ্ডপ পরির্দশনের সময় তার ওপর হামলা হয়েছে। অপহরণের জন্যই যুবদল কর্মীরা তার ওপর এ হামলা চালায়।’’

লন্ডনে কারা, কেন হামলা করল সে বর্ণনা দিলেন বিচারপতি মানিক।  

লন্ডন স্থানীয় সময় শনিবার (২৪ অক্টোবর) সকালে গ্রেটার লন্ডনের ডেগেনহামস্থ নিজ বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী অভিযোগ করে আরও বলেন, ‘একজন বিচারপতি হিসেবে সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতেই আমি আমার দায়িত্ব পালনের সময় কিছু আলোচিত মামলার রায় দিই। এসব রায়ের কোনো কোনোটি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ও তার দলের রাজনীতির জন্য সুখকর হয়নি। আর এজন্যই বারবার আমার ওপর হামলার চেষ্টা করছে তারা।’

‘শুধু আমিই নই, একটি মামলার বাদী তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর ওপরও লন্ডনে হামলা হয়েছে।’ মন্তব্য করেন শামসুদ্দিন চৌধুরী।

তিনি বলেন, ‘কর্নেল তাহের হত্যা মামলার রায়ে জিয়াউর রহমানকে একজন ঠাণ্ড‍া মাথার খুনি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এরপর থেকেই বিএনপির শীর্ষ নেতাদের ইন্ধনে আমার ওপর বারবার হামলার চেষ্টা করা হয়। সর্বশেষ গত বুধবার লন্ডনে পূজামণ্ডপ এলাকা থেকে ‌আমাকে অপহরণের চেষ্টা করা হয়।’

‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এখন লন্ডনে। তার ছেলে তারেক রহমান দীর্ঘদিন ধরেই এখানে অবস্থান করছেন। সুতরাং আমার ওপর এই হামলা তাদের অজ্ঞাতসারে হয়েছে, এটি আমি বিশ্বাস করি না,’ বলেন শামসুদ্দিন চৌধুরী।

অবসরপ্রাপ্ত এই বিচারপতি বলেন, ‘এর আগে ২০১২ সালেও লন্ডনে বাসার সামনে আমার ওপর হামলা করে বিএনপি কর্মীরা। তাদের একজন এখন বাংলাদেশের কারাগারে আছে।’

তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি ঢাকায় একটি বেসরকারি টেলিভিশনে কর্নেল তাহের ও বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জিয়ার জড়িত থাকা, বাঙালি সৈন্যদের চাপে বাধ্য হয়ে তার মুক্তিযুদ্ধে যাওয়াসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে একটি সাক্ষাৎকার দিই। যা প্রচার হওয়ার পর বিএনপি আবারও আমার ওপর প্রচণ্ডভাবে ক্ষেপে উঠে। এরই প্রেক্ষিতে লন্ডনে এই হামলা চালানো হয়েছে।’

ঘটনাটি স্থানীয় পুলিশ তদন্ত করছে জানিয়ে শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘হামলাকারীরা যুবদলের কর্মী বলে কমিউনিটি সোর্স জানিয়েছে। অন্যান্য সূত্রও একই তথ্য দিচ্ছে।’

বাংলাদেশের হাইকমিশনার বিষয়টি নিয়ে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন বলেও জানান শামসুদ্দিন চৌধুরী।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হামলার ঘটনায় আমি তারেক রহমান সম্পর্কে সন্দেহের কথা ব্রিটিশ পুলিশকে জানিয়েছি। তবে, এ হামলার নেপথ্যে জামায়াতেরও ইন্ধন থাকতে পারে।’

অবসরপ্রাপ্ত এই বিচারপতি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধ মামলায় জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিলে আমরা মোট পাঁচজন বিচারক ছিলাম। এরমধ্যে একমাত্র আমিই সাঈদীর ফাঁসির পক্ষে আমার মতামত দিই। এ নিয়ে জামায়াতও আমার ওপর ক্ষিপ্ত। তারা নিজেরা প্রকাশ্যে না এসে বিএনপি কর্মীদের দিয়ে এসব হামলা করাচ্ছে বলে সন্দেহ করছি।’

হামলার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি আমার-মেয়েসহ ওইদিন ঢাকা থেকে লন্ডনে আসি। হিথ্রো বিমানবন্দরে নেমে সেখান থেকে সরাসরি পূর্ব লন্ডনের ইয়র্ক হলের পূজামণ্ডপে যাই। এরপর সেখানে চলা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার জন্যে মাইকে ঘোষণা দিয়ে আমাকে অনুরোধ জানানো হয়।’

‘বক্তব্য দিয়ে প্রায় ঘণ্টাখানেক আমি অনুষ্ঠানে ছিলাম। এরপর সেখান থেকে বাসায় ফিরতে মণ্ডপ হলের উল্টো দিকের রাস্তায় হেঁটে গাড়ির দিকে যাচ্ছিলাম। ওই সময় একজন যুবক আমি বিচারপতি মানিক কিনা জানতে চায়। তার পেছনে আরও ৪-৫ জন ছিল।’

শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘অপ্রীতিকর বিষয় আঁচ করতে পেরে আমি ঘুরে রাস্তার অন্যপাশে চলে যেতে চাই। এসময় আমাকে কিল-ঘুষি মারতে থাকে তারা। এক পর্যায়ে জোর করে তাদের গাড়িতে তুলতে চেষ্টা করে। তবে আমি রাস্তায় পড়ে গেলে ব্যর্থ হয় তারা। বিষয়টি টের পেয়ে অন্যান্য লোকজন ছুটে এলে তারা পালিয়ে যায়।’

দায়িত্ব পালনকালে বেশ কয়েকটি মামলার রায় দিয়ে দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোচিত হন বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী। এরমধ্যে কর্নেল তাহের হত্যা, বিজিএমইএ ভবন স্থানান্তর, সপ্তম সংশোধনী, সুচিত্রা সেনের বাড়ি পুনরুদ্ধার মামলা উল্লেখযোগ্য।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত