সিলেটটুডে ডেস্ক

০২ ডিসেম্বর, ২০১৫ ১৪:৫০

সাকা-মুজাহিদ ছিলেন মানবতার শত্রু, যুক্তরাষ্ট্রে মানবাধিকার শুনানিতে বন্যা

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের ‘টম ল্যানটস হিউম্যান রাইটস কমিশনের শুনানিতে প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত হয়ে দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর শাস্তি কার্যকর প্রশ্নে আলোচকদের উদ্দেশে নিহত ব্লগার, লেখক অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা বলেন- তারা ছিলেন ‘মানবতার শত্রু’।

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় বহু মানুষকে হত্যা করায় তাদের বিচারের বিকল্প ছিল না বলে উল্লেখ করেন বন্যা।

মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) ওয়াশিংটন ডিসির রেবার্ন হাউজ অফিস ভবনে ‘শ্রিংকিং স্পেস ফর সিভিল সোসাইটি’ শীর্ষক এই সিরিজ আলোচনায় এবারের বিষয়বস্তু ছিল ‘হিউম্যান রাইটস ইন বাংলাদেশ’।

এছাড়াও আমন্ত্রিত না হলেও সেখানে উপস্থিত হয়ে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের উপ-প্রধান মাহবুব হাসান সালেহ আলোচকদের বিভিন্ন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে কথা বলেন।

মাহবুব হাসান সালেহ বলেন, বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতের আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে রাজনৈতিক নেতা হিসেবে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়নি। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধ আদালতে প্রমাণিত হওয়ায় তাদের দণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।

যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে যারা সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদকে ‘বিরোধী দলীয় রাজনীতিক’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, তাদের উদ্দেশে বন্যা বলেন, ওই দুইজন ছিলেন ‘মানবতার শত্রু’। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় বহু মানুষকে হত্যা করায় তাদের বিচারের বিকল্প ছিল না।

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে এ আলোচনায় প্যানেল আলোচকদের কেউ চলতি বছরের শুরুতে বিএনপি-জামায়াত জোটের টানা অবরোধ-হরতালে তিন মাসের তাণ্ডবের প্রসঙ্গ না টানায় নিজেই বিষয়টি মনে করিয়ে দেন এই কূটনীতিক।

মাহবুব হাসান আলোচক ও শ্রোতাদের জানান, ওই তাণ্ডবে শতাধিক সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন, অনেকের সহায়-সম্পদের ক্ষতি হয়েছে; এগুলোও মানবাধিকার লঙ্ঘনের উদাহরণ।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এক ঘাতক আদালতের ফাঁসির রায় মাথায় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে রয়েছে। মানবাধিকার নিয়ে এই শুনানিতে ওই প্রসঙ্গ কেউ তোলেননি, যদিও তা আসা উচিৎ ছিল।

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত না হলে ‘মানবাধিকার সমুন্নত রাখা সম্ভব নয়’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

শুনানিতে উপস্থিত একজন একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর ভূমিকা সম্পর্কে প্রশ্ন করেন। এর জবাব কেউ না দেওয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের উপ-প্রধান মাহবুব হাসান সালেহ বলেন, স্বাধীনতাযুদ্ধে ৩০ লাখ বাঙালি শহীদ হন, বহু মা-বোন সম্ভ্রম হারান। এ সংখ্যাই একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের দোসরদের ভূমিকার কথা বলে দেয়।

লেখক, অধিকারকর্মী রাফিদা আহমেদ বন্যা ছাড়াও শুনানিতে প্যানেল আলোচক হিসেবে ছিলেন। এছাড়াও ছিলেন ইউএস কমিশন ফর ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডমের সিনিয়র পলিসি অ্যানালিস্ট শহর চৌধুরী, পেন আমেরিকান সেন্টারের ‘মুক্ত মত প্রকাশ’ কার্যক্রমের পরিচালক কারিন ডয়েশ কারলেকার ও আটলান্টিক কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়া সেন্টারের পরিচালক ভারত গোপালাস্বামী।

অভিজিৎ রায়সহ বাংলাদেশে লেখক-প্রকাশক হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচারের ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা ‘রহস্যজনক’ বলে মন্তব্য করেন বন্যা।

তিনি বলেন, অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ গড়ার স্বার্থেই এ ধরনের নৃশংসতায় লিপ্তদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

চলতি বছর ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অভিজিতের ওপর ওই হামলায় বন্যা নিজেও হামলাকারীর চাপাতির আঘাতে এক হাতের আঙুল হারান। দেশে বেড়াতে এসে স্বামীকে হারানোর কিছুদিন পর যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যান এই মার্কিন নাগরিক।

অনুষ্ঠানের সঞ্চালক যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ইনকোয়ারির পাবলিক পলিসি পরিচালক মাইকেল ডি ডোরা বলেন, গত দুই বছরে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির ‘যথেষ্ট অবনতি’ ঘটেছে। বিশেষ করে মুক্তমনা ৫ ব্লগার-লেখকের হত্যাকাণ্ডের পর জনমনে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে ‘সংখ্যালঘু’ সম্প্রদায়ের ওপর হামলা-নির্যাতনের ঘটনাও বেড়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এ অবস্থায় সরকার কঠোর না হলে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে নেওয়া কঠিন হবে।

উদ্বোধনী বক্তব্যে টম ল্যানটস হিউম্যান রাইটস কমিশনের কো-চেয়ার কংগ্রেস সদস্য জেমস পি ম্যাকগভার্ন বলেন, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের উদ্দেশ্য সঠিক হলেও জাতিসংঘ, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই বিচারের পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দপ্তরের যুদ্ধপরাধ বিষয়ক বিশেষ দূত স্টিফেন জে র‌্যাপসহ অনেকেই দণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া স্থগিত করার আহ্বান জানালেও বাংলাদেশ তাতে সাড়া দেয়নি।

বাংলাদেশে ভিন্নমত পোষণকারীদের ‘দমন-পীড়ন’, গণগ্রেপ্তার, বিরোধী দলকে রাজনৈতিক সমাবেশ করতে ‘না দেওয়া’ ও বিচার বহির্ভূত হত্যার অভিযোগ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন যুক্তরাষ্ট্রের এই কংগ্রেস সদস্য।

শুনানির কো-হোস্ট কংগ্রেসসদস্য জোসেফ আর পিটস ছিলেন অনুপস্থিত। তার জায়গায় বক্তব্য দেন টেক্সাসের কংগ্রেস সদস্য শিলা জ্যাকসন লি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত