যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি

২৭ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:৪৬

আবদুল গাফফার চৌধুরীকে নিয়ে অপপ্রচারের নিন্দা

অমর একুশে গানের রচয়িতা প্রবীণ সাংবাদিক আব্দুল গাফফার চৌধুরীর বক্তব্যকে বিকৃত করে অপপ্রচারের নিন্দা জানিয়েছেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত বৃটেনে বসবাসরত সর্বস্তরের প্রবাসী সিলেটীরা।

সংবাদপত্রে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে তারা এই অপপ্রচারের জন্যে মুখোশধারী প্রবাসী এক জামায়াত নেতাকে দায়ী করে নিন্দা জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে তারা বলেন, আমরা গভীর দু:খের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে কতিপয় হীন এবং স্বার্থান্বেষী মহল, সম্প্রতি লন্ডনের একটি বাংলা টেলিভিশনে বিশিষ্ট সাংবাদিক সাহিত্যিক অমর একুশে গানের রচয়িতা জনাব আবদুল গাফফার চৌধুরীর ৮২তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সরল মনে দেওয়া তাঁর বক্তব্যের কিছু অংশকে অপব্যাখ্যা করে বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে কমিউনিটি সংগঠক হিসেবে পরিচিত এক জামায়াত নেতা। এই মিথ্যাচারের সঙ্গে যারা জড়িত তারা সবাই একটি বিশেষ রাজনৈতিক চিন্তাধারায় বিশ্বাসী যা আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পরিপন্থি।

বিবৃতিতে বলা হয়, উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত এবং আলোচনায় অংশগ্রহণকারী আমরা নিম্ন স্বাক্ষরকারী সিলেটবাসীরা এই জঘন্য মিথ্যাচারের প্রতিবাদ এবং তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে, যারা নিছক রাজনীতির স্বার্থে সর্বসাধারণের অনুভূতিকে রাজনৈতিক দাবার গুটি হিসেবে ব্যবহার করে সেইসব হীন মানুষদের আমরা ধিক্কার জানাই।

আমরা স্পষ্ট ভাষায়, সিলেট অঞ্চলের বিলাত প্রবাসী সর্বস্তরের মানুষের জ্ঞাতার্থে বলতে চাই যে, উক্ত অনুষ্ঠানে জনাব আবদুল গাফফার চৌধুরী অত্যন্ত খোলামনে এবং কৃতজ্ঞচিত্তে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে বিলাতে বাংলা ভাষা এবং সংস্কৃতির প্রচার প্রসার ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রবাসী সিলেটবাসীর ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন। প্রকৃত অর্থে এই অনুষ্ঠানে তিনি বাঙালি কমিউনিটির উন্নয়ন সংগ্রামে মধ্যবিত্ত এবং শিক্ষিত সমাজের নানা ব্যর্থতার কথা তুলে ধরে সে ব্যাপারে তাঁর হতাশা ব্যক্ত করেন।

সেখানে আবদুল গাফফার চৌধুরী আরো বলেন যে, চার যুগেরও বেশী সময় ধরে তিনি বিলাতে বসবাস করছেন। এই দীর্ঘ সময়ে তাঁর দুর্দিনে যারা তাঁকে রাজনৈতিক এবং আর্থিকভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন তাঁরা সবাই বিলাত প্রবাসী সিলেটের মেহনতি মানুষ। এই সাধারণ খেটে খাওয়া সিলেটবাসীরাই বিলাতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সংরক্ষণ এবং প্রসারের ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রেখেছেন এবং আজও রাখছেন। অথচ আমাদের সমাজে এক শ্রেণীর তথাকথিত শিক্ষিত এবং সংস্কৃতিবান মানুষ আছেন যারা এই সাধারণ প্রবাসীদের কটাক্ষ করে বলেন ‘‘লাঙল টু লন্ডন‘‘। যারা এ ধরনের কথা বলে বিলাত প্রবাসী সহজসরল সাধারণ মানুষকে নিয়ে হাসি-তামাশা করে তাদের নিন্দা জানানোর উদ্দেশ্যেই তিনি এ বক্তব্যের অবতারণা করেন।

আমরা লক্ষ্য করছি যে, কিছু ব্যক্তি এবং গোষ্ঠী অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য তাঁর বক্তব্যের অপব্যাখ্যা করছে। এই সুযোগে তারা নিজেরা ‘‘অতি সিলেট দরদী‘‘ সাজার ভান করছে। এই স্বার্থান্বেষীগোষ্ঠী প্রবাসী সিলেটবাসীদের বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। সুতরাং আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে এইসব কুচক্রীদের বলতে চাই যে, গত চার যুগ ধরে বিলাতে বাঙালি সমাজের আত্মপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামের সঙ্গে কে বা কারা জড়িত ছিলেন, প্রবাসীদের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে কে কতটুকু অবদান রেখেছেন সে সম্পর্কে প্রবাসী সিলেটবাসীরা অবগত আছেন।

সিলেটের বিলাত প্রবাসীরা ভাল করেই জানেন, দেশের মানুষের আন্দোলন-সংগ্রামে জনাব আবদুল গাফফার চৌধুরী সব সময় ছিলেন সম্মুখসারির যোদ্ধা। অতএব এই অপপ্রচারকারীদের উদ্দেশ্যে আমরা বলতে চাই, আপনারা ‘মার কাছে মাসীর গল্প বলার‘ অপচেষ্টা আর চালাবেন না।

আমরা মনে করি, এই অপপ্রচার এবং মিথ্যাচার সুপরিকল্পিত এবং সুচিন্তিত। আর এর মূল লক্ষ্যবস্তু কোন ব্যক্তি নন বরং আমাদের স্বাধীনতার চেতনা এবং এর ধারকবাহকদের কণ্ঠরোধই এদের আসল লক্ষ্য। তাই বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী সকল বাঙালির প্রতি আমাদের বিশেষ আবেদন, আপনারা এই নির্লজ্জ মিথ্যাচারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান এবং এদের বিরুদ্ধে সর্বস্তরে প্রতিবাদ গড়ে তুলুন।

এখানে বিষয়টি আরো পরিষ্কার করা প্রয়োজন যে এই অনুষ্ঠানে জনাব গাফফার চৌধুরী একটি প্রসঙ্গ এনে বলেছিলেন এক জামায়াত নেতা আমার বিরুদ্ধে লিফলেট প্রচার করে বিলি করেছে। আসলে গাফফার চৌধুরীকে হেও প্রতিপন্ন করতে ওই জামায়াত নেতাই সিলেটবাসীকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। এই জামায়াত নেতার চরিত্র সম্পর্কে সকলেই জানেন। একটি স্বাধীনতাবিরোধী চক্র যে সিলেটবাসীর সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার চেষ্টা করছে তা সকলেই জানেন।

আমরা সেদিন যারা গাফফার চৌধুরীর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম সকলেই সিলেটী। আমাদের চেয়ে সিলেটীদের প্রতি দরদ স্বাধীনতা বিরোধীদের বেশী হওয়ার কথা নয়। সিলেটের সর্বস্তরের মানুষের প্রতি আমাদের অনুরোধ এই কুচক্রী মহলের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেনা।

স্বাক্ষরকারীরা হলেন ইসহাক কাজল - লেখক সাংবাদিক, মতিয়ার চৌধুরী সাংবাদিক সিলেটী গবেষক, সাংবাদিক সৈয়দ আনাছ পাশা, সাবেক কাউন্সিলার ও গবেষক নূরুদ্দিন আহমদ, আনসার আহমেদ উল্লাহ সাংবাদিক মানবাধিকার কর্মী, জামাল খান রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক শাহ মোস্তাফিজুর রহমান বেলাল, খছরুজ্জামান খছরু রাজনীতিবিদ, জুয়েল রাজ সাংবাদিক, আনজুমান আরা অনজু সমাজ কর্মী ও রাজনীতিবিদ, রাজিয়া রহমান শিল্পি, সরওয়ার কবীর সাংবাদিক, নজরুল ইসলাম অকিব রেডিও প্রেজেন্টার ও রাজনীতিবিদ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত