সিলেটটুডে ডেস্ক

২৫ মে, ২০১৭ ১৫:৪৭

আশ্রয়ের আশায় ভারতে গিয়ে স্কুলের বারান্দায় দিন কাটছে সিলেটের শতবর্ষী বৃদ্ধার

স্বজনেরা তাড়িয়ে দেওয়ায় আশ্রয়ের আশায় গিয়েছিলেন ভারতে। আশ্রয় হয়েছে তাঁর এক স্কুলের বারান্দায়। গত ২৫ দিন ধরে ওই স্কুলের বারান্দায় পড়ে রয়েছেন সিলেটের এক শতবর্ষী বৃদ্ধা।

বৃদ্ধার নাম ঊনমতি বালা। বাড়ি সিলেটের জগন্নাথপুরে। তাঁর বর্তমান 'ঠিকানা' এখন আসামের শিলচরের গাঁধীঘাটে সর্বোদয় ট্রাস্ট পরিচালিত স্কুলের বারান্দা। সেখানে সঙ্গে আছেন তাঁর এক ছেলে রাধিকা বিশ্বাস (৬০)।

দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এ নিয়ে বিরক্ত স্কুল কর্তৃপক্ষ মাঝেমধ্যেই তাদের সেখান থেকে চলে যেতে বলছেন। এদিকে তাঁদের বাংলাদেশে ফেরার রাস্তাও বন্ধ। অসহায় বৃদ্ধা এখন চাইছেন, তাদের জেলে পুরে দেওয়া হোক! তাতে দুইবেলার খাবার জোটানোর চিন্তা অন্তত কাটবে। পরে ফেরানো হোক বাংলাদেশে।

স্কুল কর্তৃপক্ষ চাইছে, বৃদ্ধা যেন নিজেই সেখান থেকে চলে যান। তারা থানা-পুলিশ করতে চান না। ট্রাস্টের সচিব ভাস্কর দত্ত বলেন, "বারান্দায় খাট পেতে দুটো লোক শুয়ে-বসে থাকলে কি স্কুল চালানো যায়? প্রতিদিন বলছি, স্কুল ছেড়ে যেতে। কিন্তু কোথায় কী!"

এলাকার পুরসদস্য শুক্লা দেব বলেন, "থানায় জানানো হয়েছে। কিন্তু ১০০ বছরের বৃদ্ধাকে মানবিক কারণে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে চাইছে না।"

বয়সের ভারে চলাফেরা করার শক্তি হারিয়েছেন ঊনমতি। তাকে এখন শুয়ে-বসেই দিন কাটাতে হয়। তিনি জানান, আধ একর জমি ছিল বাংলাদেশে। ছিল গরু-বাছুর। খাওয়া-পরার সমস্যা ছিল না। দেবরের ছেলে রমাকান্ত বিশ্বাসের আশ্বাসে সব বিক্রি করে ছেলেকে নিয়ে চলে আসেন ভারতে।

বৃদ্ধার দাবি, জমি ও গবাদি পশু বিক্রির টাকা-পয়সা রমাকান্তের কাছে গচ্ছিত রেখেছিলেন তারা। ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়া যে সহজ নয়, তা বুঝতে মা-ছেলের বেশি দিন সময় লাগেনি।

ছেলে রাধিকা জানান, নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর খবর রটেছিল— হিন্দুরা সীমান্ত পার হলে আর ভয় নেই। মোদী সবাইকে নাগরিকত্ব দেবেন। তাতে ভরসা করেই বছরখানেক আগে দু’জন চোরাপথে ভারতে ঢোকেন। রাধিকা ভেবেছিলেন, মাকে রেখে বাংলাদেশ থেকে নিয়ে আসবেন স্ত্রী, দুই ছেলে, এক মেয়েকে। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। চোরাপথে বাংলাদেশে ফেরাও কঠিন হয়ে ওঠে।

রাধিকা অভিযোগ করেন, বছর পার হওয়ার আগেই উল্টো কথা বলতে শুরু করেন খুড়তুতো ভাই। টাকা-পয়সা রেখে তাড়িয়ে দেন তাদের। পরে দু’জনে ঘরভাড়া নেন। হাতে যে সামান্য টাকা ছিল, তা কিছু দিনেই ফুরিয়ে যায়। ভারতীয় নাগরিকত্ব পাইয়ে দেওয়ার নামে এক দালালও প্রচুর টাকা নিয়ে যায়। টাকা ফুরিয়ে গেলে তারা আশ্রয় নেন সর্বোদয় বিদ্যালয়ের বারান্দায়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত