নিজস্ব প্রতিবেদক, মৌলভীবাজার

২০ এপ্রিল, ২০২৪ ২৩:১২

বড়লেখায় সালিসে আমানত রেখে প্রবাসীর চলাচলের রাস্তায় পাকা দেয়াল

অবরুদ্ধ প্রবাসীর স্ত্রী-সন্তান দেড়মাস ধরে বাড়ি ছাড়া, মিলছে না সমাধান

মৌলভীবাজারের বড়লেখায় ভূমি নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য সালিসে উভয় পক্ষের আমানত থাকা অবস্থায় এক প্রবাসীর চলাচলের একমাত্র রাস্তায় পাকা দেয়াল তোলার অভিযোগ উঠেছে তারই (প্রবাসীর) চাচাতো ভাইদের উপর। ঘটনাটি বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের অফিসবাজার এলাকার।

চলাচলের রাস্তা একেবারে বন্ধ হওয়ায় ওই প্রবাসীর স্ত্রী-সন্তান প্রায় দেড়মাস ধরে বাড়ি ছাড়া। অসহায় হয়ে বিষয়টি সমাধানের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে গণমান্য ব্যক্তিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন প্রবাসীর স্ত্রী। তবে কোথাও কোনো সমাধান পাচ্ছেন না।

প্রবাসীর পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের অফিসবাজার এলাকার বাসিন্দা প্রবাসী আমিনুল ইসলাম সুহেল ও সেলিম আহমদ এবং শামীম আহমদ সম্পর্কে চাচাতো ভাই। তারা একই বাড়ির পাশাপাশি ঘরের বাসিন্দা হওয়ায় একটি রাস্তা ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে চলাচল করতেন। প্রায় ৭-৮ মাস আগে (২০২৩ সালে) হঠাৎ করে আমিনুল ইসলাম সুহেলের সাথে ভূমি নিয়ে বিরোধ তৈরি হয় চাচাতো ভাই শামীম আহমদ ও সেলিম আহমদের। এর কয়েক মাস পর প্রবাসে যাওয়ার দিন সকালে সেলিম আহমদ এবং শামীম আহমদ দাবি করেন আমিনুল ইসলাম সুহেল ও তার পরিবার বাড়ির যে জায়গা চলাচলের জন্য ব্যবহার করছেন এটা তাদের (সুহেলর) না। তাই তারা (সেলিম ও শামীম) সুহেলের পরিবারকে এই জায়গা ব্যবহার করতে দেবে না।

তখন ফ্লাইট বাতিল হয়ে যেতে পারে এই আশঙ্কায় আমিনুল ইসলাম সুহেল এক চাচাকে বিষয়টি সমাধান করে দেওয়ার কথা বলে বিদেশ চলে যান। সুহেল প্রবাসে যাওয়ার কিছুদিন পর তাকে (সুহেলকে) না জানিয়ে একদিন বাড়ির সম্পত্তি ভাগবাটোয়ারা জন্য মুহুরি এনে ভাগবাটোয়ারা করা হয়। তবে সুহেল প্রবাসে থাকায় ও তাকে না জানিয়ে ভাগবাটোয়ারা করায় তিনি তাতে আপত্তি জানান। তার আপত্তিতে স্থানীয় মুরব্বিরাও সমর্থন জানিয়ে সুহেল দেশে না আসা পর্যন্ত বিষয়টি যেভাবে ছিল সেভাবে থাকতে উভয় পক্ষকে নির্দেশ দেন। তবে নির্দেশ অমান্য করে ওই রাস্তা ব্যবহার করতে প্রায়ই বাধা দেন শামীম আহমদ। গেল রজমান মাসের এক সন্ধ্যায় আমিনুল ইসলাম সুহেলের ঘরে রাস্তা ব্যবহার করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আনা নিয়ে শামীম আহমদ গালিগালাজ ও মারমুখী আচরণ করেন। এঅবস্থায় ভয়ে-আতঙ্কে আমিনুল ইসলাম সুহেলের স্ত্রী তার ভাই ও স্থানীয় মুরব্বিদের খবর দেন। খবর পেয়ে মুরব্বিরা আসার আগেই সেখানে উপস্থিত হন সুহেলের শ্যালক ও মামা শ্বশুর। তাদের দেখে শামীম আহমদ আরও মারমুখী আচরণ করেন। সেখানে কিছুক্ষণ পর উপস্থিত হন স্থানীয় মুরব্বি আব্দুল কুদ্দুস স্বপন ও ইউপি সদস্য আব্দুল আজিজ লুলাই প্রমুখ।

তবে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ায় তারা থানা পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশের উপস্থিতিতে বিরোধপূর্ণ বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য ৪ সদস্যের একটি সালিস কমিটি করা হয়। কমিটির সদস্যরা হচ্ছেন- অফিসবাজার ব্যবসায়ী সমিতিরি সাবেক সভাপতি সমাজসেবক আব্দুল কুদ্দুস স্বপন, ইউপি সদস্য আব্দুল আজিজ লুলাই, সমাজসেবক সিরাজ উদ্দিন ও জয়নুল ইসলাম। কমিটি উভয় পক্ষকে ৫০ হাজার টাকা করে আমানত দেওয়ার প্রস্তাব দেন। পাশাপাশি বিষয়টি সামাধান না হওয়া পর্যন্ত রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে প্রবাসীর পরিবারকে বাধা না দিতে শামীম আহমদ ও সেলিমকে নির্দেশ দেন মুরব্বিরা।

কিন্তু শামীম আহমদরা মুরব্বিদের নির্দেশ মানেননি। প্রবাসীর স্ত্রী বাড়িতে না থাকার সুযোগে রাতারাতি চলাচলের রাস্তায় দেয়াল নির্মাণ করে ফেলেন শামীম আহমদ। এতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে প্রবাসী সুহেলর ঘর। বাড়িতে প্রবেশের রাস্তা একেবারে বন্ধ হওয়ায় প্রবাসী সুহেলের স্ত্রী স্থানীয় মুরব্বিদের বিষয়টি জানিয়ে সন্তানদের নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে যান। এরপর থেকে অসহায় হয়ে বিষয়টি সমাধানের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে গণমান্য ব্যক্তিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন প্রবাসীর স্ত্রী। তবে কোথাও কোনো সমাধান পাচ্ছেন না। বিকল্প রাস্তা না থাকায় বাড়িতে প্রবেশ করতে পারছেন না প্রবাসীর স্ত্রী-সন্তান।

প্রবাসী আমিনুল ইসলাম সুহেলের স্ত্রী বলেন, ‘আমার একটা মেয়ে সামনে এইচএসসি (বিজ্ঞান বিভাগে) পরীক্ষা দেবে। ঘরে তার সকলই বইপত্র রয়েছে। চলাচলের রাস্তা বন্ধ হওয়ায় বাড়িতে প্রবেশ করতে পারছি না। প্রায় দেড় মাস ধরে বাড়ি ছাড়া। অসহায়ের মতো জনপ্রতিনিধি থেকে গণমান্য ব্যক্তিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। কোথাও বিচার পাচ্ছি না।’

অফিসবাজার ব্যবসায়ী সমিতিরি সাবেক সভাপতি সমাজসেবক আব্দুল কুদ্দুস স্বপন বলেন, ‘বিষয়টি সমাধানের জন্য আমাদের কাছে রয়েছে। তবে বিচারে থাকা অবস্থায় শামীম আহমদ রাস্তায় দেয়াল দিয়েছেন বলে শুনেছি। সরেজমিনে দেখিনি আমরা। তবে রাস্তা বন্ধ করাটা অন্যায় হয়েছে। কারণ ওই পরিবারের চলাচলের বিকল্প কোনো রাস্তা নেই।’

অভিযোগের বিষয়ে শামীম আহমদ বলেন, ‘বিরোধ সমাধানের জন্য আমানত সালিসে আছে এটা ঠিক। আমার জায়গায় রাস্তায় পড়েছে। তাই দেয়াল দিয়েছি। এখানে দেয়াল দিলে যদি বিচার করতে হয়, তাহলে পাশে আরেকজন রাস্তা বন্ধ করে বিল্ডিং করছেন তার বিচারও করতে হবে।’

এব্যাপারে বড়লেখা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সঞ্জয় চক্রবর্তী বলেন, ‘চলাচলের রাস্তা বন্ধ করার বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত