সিলেটটুডে ডেস্ক

১৭ ডিসেম্বর, ২০১৯ ১৭:১৯

নেদারল্যান্ডসে বিজয় দিবস উদযাপন

নেদারল্যান্ডসের বাংলাদেশ দূতাবাস আনন্দ-উদ্দীপনা ও যথাযথ ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে মহান বিজয় দিবস উদ্‌যাপন করেছে। স্থানীয় বাংলাদেশ কমিউনিটির অংশগ্রহণের সুবিধার্থে এক দিন আগে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে (১৫ ডিসেম্বর রোববার) দিবসটি উপলক্ষে দ্য হেগে দূতাবাস প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠান আয়োজন করা হলেও বিজয় দিবসের নির্ধারিত দিন (১৬ ডিসেম্বর) যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।

দ্য হেগসহ দেশটির অন্য শহরে বসবাসরত বাংলাদেশ কমিউনিটির অনেক সদস্য ও দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের পরিবারের সদস্যসহ অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সম্মানে এক মিনিট নীরবতা পালন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সব মুক্তিযোদ্ধা ও ১৯৭১ সালে সম্ভ্রমহারা বীরাঙ্গনাদের প্রতিও বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। এ ছাড়া দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত বাণী পাঠ করে শোনানো হয়।

আলোচনা পর্বে আওয়ামী লীগের নেদারল্যান্ডস শাখার নেতা ও বাংলাদেশ কমিউনিটির লোকজন অংশগ্রহণ করে জাতীয় জীবনে বিজয় দিবস ও মুক্তিযুদ্ধের তাৎপর্য তুলে ধরেন। তারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা ও স্বাধীনতাযুদ্ধে আত্মদানকারী লাখো শহীদের প্রতিও গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তারা দেশের উন্নয়নে প্রবাসী বাংলাদেশ কমিউনিটি ও বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহের মধ্যে নিবিড় সেতুবন্ধনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ বিনির্মাণে চলমান উন্নয়ন অগ্রযাত্রা গতিশীল রাখতে তারা টেকসই উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে সবাইকে হাতে হাত রেখে কাজ করার আহ্বান জানান। কমন ফান্ড ফর কমোডিটির (সিএফসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে বাংলাদেশ নির্বাচিত হওয়ায় তারা দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলালকে অভিনন্দন জানান।

রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলাল তার বক্তব্যে স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদদের অমূল্য ত্যাগের বিনিময় হিসেবে স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে নতুন নতুন ধারণা এবং উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসার জন্য প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানান। জ্ঞান ও উদ্ভাবনী শক্তিতে নেদারল্যান্ডসের শ্রেষ্ঠত্বের উদাহরণ তুলে ধরে তা আমাদের দেশে স্থানান্তরে সহায়ক ভূমিকা পালনের জন্যও তিনি তাদের প্রতি অনুরোধ করেন। এ ছাড়া, দেশাত্মবোধ ও স্বাধীনতাযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ভবিষ্যতে দেশ পরিচালনায় তরুণ প্রজন্মের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকা আবশ্যক বলে তিনি মন্তব্য করেন।

রাষ্ট্রদূত বেলাল রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে গাম্বিয়া কর্তৃক জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত আন্তর্জাতিক বিচারালয়ে (আইসিজে) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বহুল প্রতীক্ষিত গণহত্যা মামলার শুনানি বিজয়ের এই মাসে শুরু হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন।

রাষ্ট্রদূত বেলাল জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের নিরাপত্তা, মর্যাদা এবং মৌলিক প্রয়োজনসমূহ নিশ্চিত করে দ্রুত তাদের নিজেদের বাসভূমিতে ফিরে যেতে সহায়তা করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। এ ছাড়া, রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি বন্ধ করার প্রতিও তিনি জোর দেন।

দেশটিতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সাফল্যের ইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন, বিশ্ব দরবারে ইতিবাচক ভাবমূর্তির কারণেই বাংলাদেশ প্রথমবারের মত পরবর্তী চার বছরের জন্য কমন ফান্ড ফর কমোডিটিজের (সিএফসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নির্বাচিত হয়েছে।

আলোচনার পর প্রবাসী বাংলাদেশি ও দূতাবাস পরিবারের সদস্যদের অংশগ্রহণে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে দেশাত্মবোধক গান, নাচ, কবিতাপাঠ ইত্যাদির মাধ্যমে স্বাধীনতাযুদ্ধ ও বিজয় দিবসের আবহ তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানের শেষ আকর্ষণ ছিল দেশটিতে বাংলা গানের ব্যান্ডদল ত্রিমাত্রিকের সংগীত পরিবেশনা। বাংলাদেশে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান শুরুর ক্ষণের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সমবেত সুরে জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।

সবশেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীসহ উপস্থিত সব শিশু-কিশোরের মাঝে শুভেচ্ছা পুরস্কার তুলে দেন রাষ্ট্রদূত–পত্নী ড. দিলরুবা নাসরীন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত