ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোতে ভ্রমণে যে শেনজেন ভিসার প্রয়োজন হয়, তার আবেদনের ক্ষেত্রে নতুন কিছু নিয়ম চালু হচ্ছে। নতুন এসব নিয়ম বাংলাদেশি আবেদনকারীদের জন্যও প্রযোজ্য হবে, যা আগামী ২ ফেব্রুয়ারি থেকেই কার্যকর হবে বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

বিবিসি বাংলা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, নতুন নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসা আবেদনের সাথে এখনকার ৬০ ইউরোর পরিবর্তে ৮০ ইউরো জমা দিতে হবে।

শিশুদের ক্ষেত্রেও আবেদনের সাথে ফি দিতে হবে, যদিও তাদের জন্য এ ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ ইউরো, যা বর্তমানে ৩৫ ইউরো নির্ধারিত আছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভিসা সংক্রান্ত নীতিমালা পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশসহ সব জায়গায় শেনজেনভুক্ত দেশগুলোর যত মিশন আছে, তার সবগুলোতেই এই নতুন নিয়মাবলী কার্যকর হবে।

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এখন থেকে বাংলাদেশি আবেদনকারীরা সম্ভাব্য সফরের ছয় মাস আগেই আবেদন করতে পারবেন। এখন তিন মাস আগে আবেদনের সুযোগ আছে।

শেনজেনভিসাইনফো.কম অনুযায়ী, শেনজেনভুক্ত যেসব দেশের ভিসা অফিস ঢাকায় নেই তারা এ সংক্রান্ত সেবা দাতা প্রতিষ্ঠান বা এক্সটারনাল সার্ভিস প্রভাইডারকে সহায়তা করবে ভ্রমণকারীদের ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে। এক্সটারনাল সার্ভিস প্রভাইডার এজন্য সার্ভিস ফি নিতে পারবে, তবে তা অবশ্যই ভিসা ফি'র বেশি হবে না।

সে কারণে এক্সটারনাল সার্ভিস প্রভাইডার সর্বোচ্চ চার্জ গ্রহণ করলে বাংলাদেশ থেকে আবেদনকারীদের ১৬০ ইউরো পর্যন্ত জমা দিতে হতে পারে। এরবাইরে আপডেটেড ভিসা কোডে নতুন একটি মেকানিজমের কথা বলা হয়েছে, প্রতি তিন বছরে এরা পর্যালোচনা করবে যে ফি আবার পরিবর্তন করা উচিত কি-না।

এছাড়া নতুন এই কৌশলের আওতায় ভিসার মেয়াদ কমানো ও ভিসা প্রসেসিংয়ে সময় বাড়ানোর কথাও বলা হয়েছে।

শেনজেনভিসাইনফো.কম এর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে শেনজেনভুক্ত দেশগুলোর দূতাবাস বা কনস্যুলেটগুলোতে বাংলাদেশিদের প্রায় ৩০ হাজার ৫৭৩ টি আবেদন জমা পড়েছিল। তবে এগুলোর মধ্যে নয় হাজার ৯৭৬টি আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়।

ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে পছন্দনীয় দেশ হলো সুইডেন। গত বছর প্রায় ৭ হাজার ২৫টি আবেদন পড়ে সুইডিশ ভিসার জন্য। এরপর ইতালির জন্য ৬ হাজার ৯৩৫টি এবং জার্মানির ভিসার জন্য পাঁচ হাজার ৮৫৪টি আবেদন জমা পড়ে। ২০১৮ সালে ইউরোপের ভিসা আবেদনের জন্য বাংলাদেশিরা ব্যয় করেছে প্রায় ১৮ লাখ ৩৪ হাজার ইউরো।

উল্লেখ্য, ১৯৮৫ সালে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোকে নিয়ে একটি একীভূত অঞ্চল তৈরি করে সবার যাতায়াত সহজ করা লক্ষ্যে লুক্সেমবার্গের শেনজেন শহরে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ওই চুক্তির আলোকে সেনজেন ভিসা ও সেনজেন এলাকার সৃষ্টি হয়। ৯০ দিনের জন্য বেড়ানো বা ব্যবসা সংক্রান্ত প্রয়োজনে এই ভিসা নিয়ে ইউরোপ ঘুরে আসা যায়।

শেনজেন ভিসার আওতাভুক্ত দেশগুলো হলো—নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, ফ্রান্স, ফিনল্যান্ড, মাল্টা, লুক্সেমবার্গ, লাতভিয়া, লিথুয়ানিয়া, স্পেন, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, হাঙ্গেরি অস্ট্রিয়া, আইসল্যান্ড, ইতালি, এস্তোনিয়া, গ্রিস, চেক রিপাবলিক, জার্মানি, ডেনমার্ক, বেলজিয়াম।

এই দেশগুলো ছাড়াও এই ভিসায় আলবেনিয়া, বসনিয়া, তুরস্ক, বুলগেরিয়া, রোমানিয়া, ম্যাসিডোনিয়া, কসোভো, জর্জিয়া, সাইপ্রাস, ক্রোয়েশিয়ায় কোনও ঝামেলা ছাড়াই ঘোরা যায়।