নিজস্ব প্রতিবেদক

১৭ জানুয়ারি, ২০২০ ১৬:০৩

শ্রুতির পিঠা উৎসবে পৌষ সংক্রান্তির আবহ

পৌষ সংক্রান্তিতে পিঠাপুলির উৎসব বাঙালির লোকায়ত সংস্কৃতি। মাত্র দুদিন আগেই ছিলো পৌষ সংক্রান্তি। তবে তার রেশ এখনও রয়ে গেছে। এই রেশের মধ্যেই নগরীতে পিঠা উৎসবের ইয়োজন করেছে সাংস্কৃতিক সংগঠন শ্রুতি।

শুক্রবার সকালে নগরীর ব্লুবার্ড স্কুল মাঠে  মংগল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন শ্রুতির সংগঠক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা।


এরপর সিলেটের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনে  শিল্পীরা দিনব্যাপী সংগীত, নৃত্য, আবৃত্তি পরিবেশন করেন। পিঠা উৎসবে প্রায় অর্ধশত স্টলে পিঠাপুলির পসরা সাজিয়ে বসেন উদ্যোক্তারা। উৎসবে দেশীয় বিভিন্ন স্বাদ ও উপকরনের পিঠার সাথে পরিচিত হতে নানা বয়সের মানুষের সমাগম ঘটে।

বাঙালির ঘরে ঘরে পিঠা উৎসব শুরু হয় অগ্রহায়নের শুরু হতে। অগ্রহায়ন মানেই কৃষকের গোলায় নতুন ধান। কৃষাণির ব্যস্ততা দিনভর।নতুন চালের পিঠার ঘ্রাণে আমোদিত চারদিক। গ্রামজুড়ে উৎসবের আমেজ। পিঠা উৎসবের সঙ্গে মিশে আছে বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস, ঐহিত্য ও সংস্কৃতি। বাংলার কৃষিজীবী সমাজের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী শস্যোৎসব নবান্ন। অনাদিকাল থেকে কৃষিসভ্যতার ক্রমবিকাশের সঙ্গে সঙ্গে গ্রাম বাংলায় পালিত হয়ে আসছে এ উৎসব। পূর্বে অত্যন্ত সাড়ম্বরে উদযাপিত হতো নবান্ন উৎসব। সকল মানুষের সবচেয়ে অসাম্প্রদায়িক উৎসব হিসেবে নবান্ন উৎসব সমাদৃত ছিলো। অগ্রহায়ণের শুরু থেকেই আমাদের গ্রামবাংলায় চলে নানা উৎসব-আয়োজন। ‘নবান্ন’ শব্দের অর্থ ‘নতুন অন্ন’। নতুন ধান কাটা আর সেই সঙ্গে প্রথম ধানের অন্ন খাওয়াকে কেন্দ্র করে পালিত হয় এই উৎসব। নবান্ন উৎসব হল নতুন আমন ধান কাটার পর সেই ধান থেকে প্রস্তুত চালের প্রথম রান্না উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব। মোগল সম্রাট আকবর অগ্রহায়ণ মাসকেই ঘোষণা করেছিলেন বছরের প্রথম মাস বা খাজনা তোলার মাস। বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। এ যেন সত্যি হৃদয়ের বন্ধনকে আরো গাঢ় করার উৎসব।

শুক্রবার প্রতিবারের মতো ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন শ্রুতি সিলেট আয়োজন করেছিল দিনব্যাপী পিঠা উৎসব ১৪২৬ বাংলা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেনশ্রুতি সদস্য সচিব সুকান্ত গুপ্ত। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম। আরো উপস্থিত ছিলেন বরেণ্য আবৃত্তি শিল্পী এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা ডালিয়া আহমেদ, বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের সিনিয়র সংবাদ উপস্থাপক নিউজ প্রেজেন্টারস সোসাইটি অব বাংলাদেশ এর সভাপতি এবং পদ্মা সেতু প্রকল্পের যুগ্ম-সচিব দেওয়ান সাঈদুল হাসান, ত্রিপুরার বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী স্মিতা ভট্টাচার্য, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক মনির হোসেন।

আলোচনা সভা এবং কথা মালায় অংশনেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ব্যারিষ্টার মোহাম্মদ আরশ আলী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং মুক্তিযোদ্ধা ভবতোষ বর্মণ রানা, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আমিনুল ইসলাম চৌধুরী, গৌতম চক্রবর্তী, সম্মিলিত নাট্যপরিষদের মিশফাক আহমেদ মিশু, রজত কান্তি গুপ্ত  শ্রুতি সমন্বয়ক সুমন্ত গুপ্ত প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, শীত এলেই দিগন্তজোড়া প্রকৃতি হলুদ-সবুজ রঙে ছেয়ে যায়। পাকা ধানের পাশাপাশি প্রকৃতিকে রাঙিয়ে দেয় গন্ধরাজ, মল্লিকা, শিউলি, কামিনী, হিমঝুরি, দেব কাঞ্চন, রাজ অশোক, ছাতিম আর বকফুল। এই শোভা দেখে আনন্দে নেচে ওঠে কৃৃষকের মন।  নতুন ধানের চাল দিয়ে তৈরি করা হয় পিঠা, পায়েস, ক্ষীরসহ হরেক রকম খাবার। সোনালি ধানের প্রাচুর্য আর বাঙালির বিশেষ অংশ নবান্ন  জীবনানন্দ দাশের কবিতায় ফুটে ওঠেছে অনন্য মহিমায়।

কবি জীবনানন্দ দাশ তার কবিতায় লিখেছেন- ‘আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে- এই বাংলায়/ মানুষ নয়- হয়তো বা শঙ্খচিল শালিখের বেশে/ হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে/ কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঁঠাল ছায়ায়।’

 দিনব্যাপী আয়োজনে সমবেত সংগীত পরিবেশন করেন জাতীয় রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদ, গীতবিতান বাংলাদেশ, দ্বৈতস্বর, অন্বেষা, নগরনাট, তারুণ্য, শ্রুতি আবৃত্তি বিভাগ, সুরসপ্তক, মুক্তাক্ষর, সংগীতমুকুল, সংগীত নিকেতন, অনির্বান, সুর ও বানী, নৃত্যাঞ্জলী, থিয়েটার একদল ফিনিক্স, সোপান প্রমুখ একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন বরেণ্য আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, ডালিয়া ইসলাম, দেওয়ান সাঈদুল হাসান, মনির হোসেন, স্মিতা ভট্টাচার্য্য, মাসুম আজিজুল বাসার, মোঃ মুজাহিদুল ইসলাম, সংগীত পরিবেশন করবেন লোক সংগীতশিল্পী শ্যামল পাল, বাউল আব্দুর রহমান, শামীম আহমেদ, গৌতম চক্রবর্তী, প্রদীপ মল্লিক, সোনিয়া রায়, লিংকন দাশ প্রমুখ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত