শাবিপ্রবি প্রতিনিধি

১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১৩:২৫

শাবিপ্রবির বাংলা বিভাগে পুনরায় ড্রপ কালচার চর্চা, জিরো টলারেন্সে প্রশাসন

ড্রপের সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে সুচারুভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) প্রশাসন। পূর্ববর্তী সময়ে ড্রপের ফলে শিক্ষা জীবনে পিছিয়ে পড়তেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। ফলে সঠিক সময়ে পাস করে বের হতে না পেরে হতাশায় পড়তেন তারা। তবে এই অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ ও জিরো টলারেন্স জারি করলে এ সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয় কর্তৃপক্ষ।

ড্রপ কালচারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কোন শিক্ষার্থী ন্যুনতম একটি কোর্সেও ড্রপ দিলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে আর শিক্ষক হতে পারবেন না। এছাড়া শিক্ষার্থীরা প্রথম বর্ষের কোর্স শেষ না করে তৃতীয় বর্ষে, দ্বিতীয় বর্ষের কোর্স শেষ না করে চতুর্থ বর্ষে প্রমোশন না পাওয়াসহ বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ফলে ২০১৭ সালের পর থেকে আসতে আসতে ড্রপ কালচার থেকে বেরিয়ে আসে প্রশাসন।

তবে এই অপসংস্কৃতি মোটামুটি নির্মূল হওয়ার পর হঠাৎ করে পুরো ব্যাচ পরীক্ষা না দিয়ে ড্রপ কালচার চর্চা শুরু হয় বাংলা বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীদের। এতে একজন সহপাঠীর অসুস্থতার জন্য পুরো ব্যাচ ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নেয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১৬ জুলাই বাংলা বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তর প্রথম সেমিস্টারের ‘গণমাধ্যম ও চলচ্চিত্র’ শিরোনামে BNG-৫১৩ কোর্সের ফাইনাল পরীক্ষা ছিল। তবে ব্যাচের এক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকায় সহপাঠীরা কয়েকদিন পরীক্ষা পিছিয়ে দিতে বলে। তবে বিভাগের শিক্ষকরা নিয়মিত রুটিনে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তে অটুট থাকলে সে ব্যাচের কোন শিক্ষার্থীই পরীক্ষায় অংশ নেয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, অসুস্থ ওই শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে মেডিকেল সাপোর্টসহ সব ধরণের সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। প্রয়োজনে আলাদাভাবে তার পরীক্ষা নিয়ে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সাথে ফলাফল প্রকাশ করা হতো। তবে ব্যাচের শিক্ষার্থীরা সেটা মেনে না নিয়ে পরীক্ষা পিছানোর জন্য বিভাগকে চিঠি দেয়। বিভাগের শিক্ষকরা সিদ্ধান্ত নেয় পরীক্ষা না পিছিয়ে আগের রুটিনে পরীক্ষা নেওয়া হবে। তাতে কোন শিক্ষার্থী আর পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নিয়ম ভেঙেই শিক্ষার্থীদের গাফিলতিতে ড্রপ সংস্কৃতি চর্চা করে তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী এ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের পরবর্তী ব্যাচের সাথে পরীক্ষা দিয়ে এ কোর্স তুলতে হবে। এর আগে গত ১৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭৩ তম একাডেমিক কাউন্সিলেও এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বাংলা বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, আমাদের এক সহপাঠী দীর্ঘদিন ধরে জ্বর আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল। এতে কয়েকজনের প্ল্যানে তাকে ছাড়া পরীক্ষা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে শিক্ষকরা একই রুটিনে পরীক্ষা হবে বললে আমরা পরীক্ষা দেইনি।

এ বিষয়ে শাবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আগে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্স ড্রপের জন্য শিক্ষার্থীদের বছরের পর বছর পড়ে থাকতে হতো, ঠিকভাবে পাস করে বের হতে পারত না। অনেক প্রচেষ্টার পর আমরা ড্রপ কালচার থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছি। এটা আমাদের জন্য অনেকটা চ্যালেঞ্জের ছিল। শিক্ষার্থীদের মঙ্গলের জন্যই আমাদের এ প্রচেষ্টা। বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ড্রপ কালচার নেই বললে চলে। আমরা কখনো এটাকে প্রশ্রয় দিব না, এটার বিরুদ্ধে সবসময় জিরো টলারেন্স নীতি থাকবে।

বাংলা বিভাগের ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা কোন ধরনের সংস্কৃতি? যে একজন শিক্ষার্থী অসুস্থ বলে কেউ পরীক্ষায় বসবে না। আমরা অসুস্থ এই শিক্ষার্থীকে চিকিৎসা সুবিধাসহ সব ধরনের সহযোগিতা দিব বলেছি। তবে তারা সেটা মেনে না নিয়ে পুরো ব্যাচ পরীক্ষা দেয়নি, এটা কোনভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। আমরা বার বার সতর্ক করার পরও তারা এ অপসংস্কৃতি চর্চা শুরু করেছে। নতুন করে ড্রপ কালচারকে আবার প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী তাদেরকে পরবর্তী সেমিস্টারের সাথে কোর্সটি তুলতে হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত