নিজস্ব প্রতিবেদক

২২ ডিসেম্বর, ২০১৬ ১১:১০

সিন্ডিকেট সদস্যদের নিয়ে বৈঠকে অবরুদ্ধ উপাচার্য

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যেই শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভা শুরু হয়েছে। আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল ১১ টার দিকে উপাচার্য কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন সিন্ডিকেট সদস্যরা।

টানা দ্বিতীয় দিনের মতো অব্যাহত রয়েছে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। বুধবার দুপুর থেকেই অবরুদ্ধ রয়েছেন উপাচার্য ড. আমিনুল হক ভূঁইয়া।

বুধবার সিন্ডিকেটের বৈঠকে ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। এদিন বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীর আন্দোলনের প্রেক্ষিতেই আজ আবার সিন্ডিকেট বৈঠক ডাকা হয়।

এরআগে বুধবার রাতভর উপাচার্য ভবন অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করছে শাবি শিক্ষার্থীরা।

দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

ঘটনার সূত্রপাত হয় মঙ্গলবার রাতে। ওই রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহপরান হলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইমরান খান অনুসারীদের ধাওয়া করে ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি অঞ্জন রায়, আবু সাঈদ আখন্দ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম গ্রুপ। এ সময় গুলি ছুঁড়ে ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় ছাত্রলীগ। এনিয়ে উত্তেজনার মধ্য মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নিয়ে ছাত্র হলগুলোতে অভিযান চালায় পুলিশ। এসময় বেশকিছু দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

অভিযানের পর বুধবার ভোরে ছাত্রদের সকাল ৮ টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সকালে নিজস্ব ক্ষমতা বলে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেন উপাচার্য ড. আমিনুল হক ভূঁইয়া। হল ঘোষণার নির্দেশে সকালেই বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি হল ছাড়ে ছাত্ররা।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আহ্বান করা হয় জরুরী সিন্ডিকেট সভা। বুধবার দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে এ সভা শেষে সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. কবির হোসেন জানান, আগামী ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্লাস, পরীক্ষা ও ছাত্রদের ৩টি হল বন্ধ থাকবে। তবে ছাত্রীদের হল খোলা থাকবে এবং ভর্তি কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।

এদিকে, সকালে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা শোনার পরই বিক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। ছাত্রলীগের বিরোধের দায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা নেবে না জানিয়ে প্রথমে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে তারা। এতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের প্রতিবাদে ও খুলে দেওয়ার দাবিতে শ্লোগান দিতে থাকে শিক্ষার্থীরা। এসময় উপাচার্যের বিরুদ্ধেও শ্লোগান দিতে শোনা যায়।

প্রায় শ’ তিনেক শিক্ষার্থী সড়কে অবস্থান নেওয়ায় বন্ধ হয়ে পড়ে যান চলাচল। দেখা দেয় দীর্ঘ যানজট। যানজটে আটকা পড়া পরিবহণ শ্রমিকরাও এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিতে থাকেন। এসময় পরিবহন শ্রমিকরা একত্রিত হয়ে লাঠিসোটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের দিকে তেড়ে আসতেও দেখা যায়। দুপক্ষের এই মুখোমুখি অবস্থানে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এসময় পুলিশ পরিবহন শ্রমিকদের নিবৃত্ত করলে উত্তেজনা সংঘাতে রূপ নেয়নি।

পরে বেলা দেড়টার দিকে মহাসড়ক ছেড়ে উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয় আন্দোলনকারীরা। উপাচার্য কার্যালয়ের ফটকে তালা ঝুলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার দাবিতে শ্লোগান দিতে থাকে তারা। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উপাচার্য ভবনের বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় তারা।

সন্ধ্যা ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার ইশফাকুল হক এসে কথা বলেন শিক্ষার্থীদের সাথে। এসময় তিনি জরুরী সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করা হয়েছে জানিয়ে শিক্ষার্থীদের উপাচার্য ভবনের তালা খুলে দিতে এবং বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করতে অনুরোধ করেন। তাঁর অনুরোধ রাখে শিক্ষার্থীরা। তবে রাত ৯টা পর্যন্ত সিন্ডিকেট সভা বসেনি।

এ ব্যাপারে রেজিস্ট্রার ইশফাকুল হক সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সিন্ডিকেট বৈঠক আহ্বান করা হলেও সিন্ডিকেট সদস্যরা আসতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। রাতে তাঁরা বৈঠকে আসার 'সাহস করতে পারছেন না' বলে জানিয়েছেন তিনি।

রাত নয়টা পর্যন্ত বৈঠক শুরু না হওয়ায় উপাচার্য ভবনে আবার তালা ঝুলিয়ে বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় শিক্ষার্থীরা।

এরপর রাতভর চলে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। রাতে হল থেকে প্রচুর সংখ্যক ছাত্রীরা এসেও যোগ দেন এ বিক্ষোভে।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র সারোয়ার তুষার বলেন, ছাত্রলীগের দুইপক্ষে উত্তেজনা দেখা দেওয়ায়ই যদি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিতে হয় তাহলে এই প্রশাসনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় চালানো সম্ভব নয়। তিনি বলেন, শাবির ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির সাথে জড়িতদের আড়াল করতেই তড়িঘড়ি করে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

সারোয়ার বলেন, ছাত্রলীগের দায় সব শিক্ষার্থীরা বহন করবে না। আমরা বৃহস্পতিবারের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। এ ব্যাপারে উপাচার্য সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা না দিলে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার ইশফাকুল হক বলেছেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। হল থেকে বহিরাগতদের বের করে ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয় চালু করা হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত