নিজস্ব প্রতিবেদক

২২ ডিসেম্বর, ২০১৬ ১১:৪২

শাবিতে শিক্ষার্থীদের বিজয়

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পিছু হটলো শাবি প্রশাসন। মেনে নিলো সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি। আজ থেকেই খুলছে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়। বৃহস্পতিবার সকালে জরুরী সিন্ডিকেট সভা শেষে এ তথ্য জানিয়েছেন সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. কবির হোসেন।

তিনি জানান, আজ থেকে ক্লাস-পরীক্ষা যথারীতি চলবে। এছাড়া ২৫ ডিসেম্বর ছাত্রদের তিনটি হল খুলে দেওয়া হবে।

এরআগে বুধবার সিন্ডিকেটের সভা শেষে ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা ও তিন ছাত্র হল বন্ধের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন ড. কবির হোসেন।

এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। বুধবার দুপুর থেকে উপাচার্য ড. আমিনুল হক ভূঁইয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখে তাঁরা। টানা আন্দোলনে অবশেষে দাবি আদায় করে নিলো শিক্ষার্থীরা।

এদিকে, দাবি মেনে নেওয়ার ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিল করছে শিক্ষার্থীরা।

ঘটনার সূত্রপাত হয় মঙ্গলবার রাতে। ওই রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহপরান হলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইমরান খান অনুসারীদের ধাওয়া করে ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি অঞ্জন রায়, আবু সাঈদ আখন্দ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম গ্রুপ। এ সময় গুলি ছুঁড়ে ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় ছাত্রলীগ। এনিয়ে উত্তেজনার মধ্য মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নিয়ে ছাত্র হলগুলোতে অভিযান চালায় পুলিশ। এসময় বেশকিছু দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

অভিযানের পর ভোরে ছাত্রদের সকাল ৮ টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সকালে নিজস্ব ক্ষমতা বলে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেন উপাচার্য ড. আমিনুল হক ভূঁইয়া। হল ঘোষণার নির্দেশে সকালেই বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি হল ছাড়ে ছাত্ররা।

উদ্ভূত পরিস্থিতি আহ্বান করা হয় জরুরী সিন্ডিকেট সভা। দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে এ সভা শেষে সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. কবির হোসেন জানান, আগামী ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্লাস, পরীক্ষা ও ছাত্রদের ৩টি হল বন্ধ থাকবে। তবে ছাত্রীদের হল খোলা থাকবে এবং ভর্তি কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।

এদিকে, সকালে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা শোনার পরই বিক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। ছাত্রলীগের বিরোধের দায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা নেবে না জানিয়ে প্রথমে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে তারা। এতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের প্রতিবাদে ও খুলে দেওয়ার দাবিতে শ্লোগান দিতে থাকে শিক্ষার্থীরা। এসময় উপাচার্যের বিরুদ্ধেও শ্লোগান দিতে শোনা যায়।

প্রায় শ’ তিনেক শিক্ষার্থী সড়কে অবস্থান নেওয়ায় বন্ধ হয়ে পড়ে যান চলাচল। দেখা দেয় দীর্ঘ যানজট। যানজটে আটকা পড়া পরিবহণ শ্রমিকরাও এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিতে থাকেন। এসময় পরিবহন শ্রমিকরা একত্রিত হয়ে লাঠিসোটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের দিকে তেড়ে আসতেও দেখা যায়। দুপক্ষের এই মুখোমুখি অবস্থানে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এসময় পুলিশ পরিবহন শ্রমিকদের নিবৃত্ত করলে উত্তেজনা সংঘাতে রূপ নেয়নি।

পরে বেলা দেড়টার দিকে মহাসড়ক ছেড়ে উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয় আন্দোলনকারীরা। উপাচার্য কার্যালয়ের ফটকে তালা ঝুলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার দাবিতে শ্লোগান দিতে থাকে তারা। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উপাচার্য ভবনের বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় তারা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত