নিজস্ব প্রতিবেদক ও শাবি প্রতিনিধি

২২ ডিসেম্বর, ২০১৬ ১৫:০৬

বন্দিদশার ২২ ঘন্টা!

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের মুখে তালাবদ্ধ হওয়ার ২২ ঘণ্টা পর বন্দিদশা থেকে মুক্ত হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) ড. আমিনুল হক ভূঁইয়া।

বিশ্ববিদ্যালয় খোলা রাখা ও যথাসময়ে ক্লাস-পরীক্ষা গ্রহণের দাবিতে বুধবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুর ২টার দিকে ভিসির কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। সেই সাথে বিচ্ছিন্ন করে দেন তাঁর কার্যালয়ের বিদ্যুৎ সংযোগ। বিদ্যুৎহীন ও তালাবদ্ধ ভিসির কার্যালয়ের সামনে মোমবাতি ও মশাল জ্বালিয়ে অবস্থান নিয়ে বুধবার দিন থেকে শুরু করে রাতব্যাপী গান-শ্লোগানে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন আন্দোলনকারীরা।

এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় ফের সিন্ডিকেট সভায় বসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রায় ৩ ঘন্টাব্যাপী সভা শেষে জানানো হয়- আজ (বৃহস্পতিবার) থেকেই খোলা থাকবে শাবিপ্রবি। এমন ঘোষণার পর দুপুর ১২টায় শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কার্যালয়ের তালা খুলে তাদের অবস্থান তুলে দেন।

শিক্ষার্থীরা সরে যাবার কিছুক্ষণ পরই উপাচার্য ড. আমিনুল হক ভূঁইয়াকে নিজ কার্যালয় থেকে বেরিয়ে গাড়িযোগে চলে যেতে দেখা যায়।

ফলে টানা ২২ ঘণ্টা পর মুক্ত হন অবরুদ্ধ থাকা উপাচার্য ড. আমিনুল হক ভূঁইয়া।

প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহপরান হলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইমরান খানের অনুসারীদের ধাওয়া করে ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি অঞ্জন রায়, আবু সাঈদ আখন্দ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম গ্রুপ। এ সময় গুলি ছুঁড়ে ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় ছাত্রলীগ। পরে মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নিয়ে ছাত্র হলগুলোতে অভিযান চালিয়ে বেশকিছু দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ।

পরদিন ভোরে ছাত্রদের সকাল ৮ টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সকালে নিজস্ব ক্ষমতা বলে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেন উপাচার্য ড. আমিনুল হক ভূঁইয়া। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার খবর শুনে ক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। তারা শাবির প্রধান প্রবেশ পথের সম্মুখে সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করেন।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আহ্বান করা হয় জরুরী সিন্ডিকেট সভা। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, আগামী ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকবে। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্লাস, পরীক্ষা ও ছাত্রদের ৩টি হল বন্ধ থাকবে। তবে ছাত্রীদের হল খোলা থাকবে এবং ভর্তি কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

তবে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চলমান রাখেন শিক্ষার্থীরা। দুপুর থেকে তারা অবস্থান নেন ভিসির কার্যালয়ের সামনে। কার্যালয়ের ফটকে তালা ঝুলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার দাবিতে শ্লোগান দিতে থাকেন তারা। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উপাচার্য ভবনের বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেন আন্দোলনকারীরা। সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে সন্ধ্যা ৬টায় একবার বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু সিন্ডিকেট সভা না হওয়ায় রাত ৯টার দিকে ফের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তারা।

রাতভর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর বৃহস্পতিবার সিন্ডিকেট সভায় বসে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা রাখার ঘোষণা দেয় শাবি প্রশাসন। এ ঘোষণার সাথে সাথে বিজয় নিশ্চিত হয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের। তারা ভিসির কার্যালয়ের তালা খুলে দেন। বন্দীদশা থেকে টানা ২২ ঘণ্টা পর মুক্ত হন উপাচার্য ড. আমিনুল হক ভূঁইয়া।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত