নিজস্ব প্রতিবেদক

২২ ডিসেম্বর, ২০১৬ ১৭:৩৯

শাবি আন্দোলনের ঘটনাক্রম

প্রায় ২৪ ঘন্টা টানা আন্দোলনের পর দাবি আদায় করে নিয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শাবি প্রশাসন।

দাবি আদায়ের পথে নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে শিক্ষার্থীদের এই ২৪ ঘন্টার আন্দোলন। তার কিছু খন্ড চিত্র তুলে ধরা হলো।

মঙ্গলবার সন্ধ্যা : ৬টার দিকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহপরান হলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইমরান অনুসারীদের ধাওয়া করে হল থেকে বের করে দিয়েছিলো শাবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি  অঞ্জন রায় ও আবু সাঈদ আখন্দ এবং শাবি ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম সবুজ গ্রুপ। এসময় গুলি ছোড়া ও ককটেল ফোটানোর মতো ঘটনা ঘটে।

তখন থেকেই ক্যাম্পাসে উত্তেজনা দেখা দেয়।

মঙ্গলবার মধ্যরাত : মধ্যরাতে পুলিশের অভিযানে শাবি হল থাকে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছিলেন সিলেট মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার বসুদেব বনিক। রাতভর এ নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে  ভোর ৫টার দিকে ছাত্রদের হল ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয় শাবি কর্তৃপক্ষ আর ছাত্রীদের বৃহস্পতিবারের মধ্যে হল ছাড়তে বলা হয়।

বুধবার সকাল : বুধবার (২১ ডিসেম্বর) ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ও উত্তেজনার জের ধরে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবি) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা এবং সকল পরীক্ষা স্থগিতের নির্দেশ দেয় শাবি কর্তৃপক্ষ। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের এক জরুরি সভায় অনির্দিষ্টকাল বন্ধের নির্দেশ প্রত্যাহার করে নিয়ে আগামী ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ থাকবে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সকল ক্লাস ও পরীক্ষা এ রকম একটি ঘোষণা আসে। একই সময় পর্যন্ত বন্ধ থাকবে ছাত্রদের ৩টি হল। তবে ছাত্রীদের হল খোলা থাকবে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।

বুধবার দুপুর : হল এবং সকল ক্লাস পরীক্ষা বন্ধের প্রতিবাদে সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করেছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা শাবির মূল প্রবেশপথ সংলগ্ন সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কে অবস্থান নেয় এবং সড়ক অবরোধ করে শ্লোগান দিতে থাকে। তখন অবরোধকারী শিক্ষার্থীরা জানান, অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের নির্দেশ প্রত্যাহার এবং সকল ক্লাস-পরীক্ষা যথাসময়ে নেয়ার দাবিতে তারা রাজপথে নেমেছেন। তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

পরবর্তীতে বৃহস্পতিবারের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার দাবিতে উপাচার্য ভবন ঘেরাও করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। দুপুর দেড়টায় সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কের অবরোধ তুলে নিয়ে উপাচার্য ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছিলো তাঁরা।

দুপুর ২টার দিকে উপাচার্য ভবনের ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয় শিক্ষার্থীরা এবং আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র সারওয়ার তুষার বৃহস্পতিবারের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া ও শাবির ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন জালিয়াতিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছিলেন। উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। সে সময় উপাচার্য অধ্যাপক ড. আমিনুল হক ভূঁইয়া নিজ কার্যালয়েই ছিলেন।

বুধবার বিকেল : বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আমিনুল হক ভূঁইয়ার অফিস কক্ষে বুধবার দুপুর ২টার দিকে তালা ঝুলানোর পর বিকেলে ৪টা নাগাদ বিদ্যুৎ ও ডিশ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিলো আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তখন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র সারওয়ার তুষার জানিয়েছিলেন, উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় চালুর ঘোষণা প্রদানের পূর্ব পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে।

বুধবার সন্ধ্যা : বুধবার সন্ধ্যা ৬ টায় শাবি কর্তৃপক্ষ সিন্ডিকেটের এক জরুরি সভায় বসবে বলে ঘোষণা করলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা উপাচার্য কার্যালয়ের তালা খুলে দিয়ে বিদ্যুতের পুনঃসংযোগ দেয়। কিন্তু পরবর্তীতে সভা না বসায় বুধবার রাত নয়টার ফের তালা লাগিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় এসময় হলের তালা ভেঙ্গে প্রচুর সংখ্যক ছাত্রী আন্দোলনে যোগ দেয়।

বুধবার সারারাত : গানে-শ্লোগানে বুধবার সারারাত উপাচার্য কার্যালয়োর সমানে অবস্থান করে শিক্ষার্থীরা। শীতে জবুথবু অনেককে এসময় আগুন পোহাতে ও চাদর মুড়ি দিয়ে ফ্লোরেই শোয়ে পড়তে দেখা যায়।

বৃহস্পতিবার সকাল : বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টার দিকে উপাচার্য কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন সিন্ডিকেট সদস্যরা।

দুপুর ১২ টা : সিন্ডিকেট বৈঠক শেষে সিন্ডিকেট সদস্য ড. কবির হোসেন দেন সেই ঘোষণা- সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে আজ (বৃহস্পতিবার) থেকেই খুলছে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া ২৫ ডিসেম্বর ছাত্রদের তিনটি হল খুলে দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার দুপুর : সিন্ডিকেট থেকে ঘোষণা আসার পর দুপুর ১২টার দিকে খুলে দেয়া হয় উপাচার্য ভবনের তালা, প্রায় ২২ ঘন্টা পর মুক্ত হন উপাচার্য আমিনুল হক ভূঁইয়া ও অন্যান্যরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিল করে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত