রাবি প্রতিনিধি

২৪ ডিসেম্বর, ২০১৬ ১৭:৫৯

‘নেতাদের সুপারিশেই বিশ্ববিদ্যালয় জামায়াতীকরণ করা হয়’

‘আপনারা নেতারা বলছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্বল প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়কে জামায়াতীকরণ করছে, নিয়োগ বাণিজ্য করছে। অথচ ২০১০ সালে ফারুক হত্যা মামলার প্রধান আসামীকে আপনাদের সুপারিশেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সাংবাদিকের রিপোর্টের ভিত্তিতে সংসদে তা নিয়ে ব্যাপক তোলপাড়ও সৃষ্টি হয়। যা আপনাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিলো। তার মানে আপনাদের সুপারিশেই নিয়োগ বাণিজ্য হয়। যা স্পষ্ট করে নেতাদের সুপারিশেই বিশ্ববিদ্যালয় জামায়াতীকরণ করা হয়।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধে স্থানীয় ও মহানগরীয় নেতাদের বাধা দেওয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবনসহ প্রধান ফটকগুলো অবরুদ্ধ করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনে এসব কথা বলেন হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সায়মন রহমান।

শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১১ টায় বহিরাগতদের প্রভাব ও হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

এ সময় তিনি আরো বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আর আমাদের জেলখানার আসামীর ন্যায় অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নেতাদের তেল মালিশ করতে পছন্দ করে, তেল মালিশ করে তারা ক্ষমতায় আসে বলেই গতকাল আমাদের এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শক্ত হলে এমন ঘটনা ঘটতো না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন ছাত্রলীগ আইনের বাহিরে নয় তবে নেতারা কি আইনের ঊর্ধ্বে? আপনারা আপনাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করুন যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বায়ত্তশাসিত থাকে। আপনারা দ্রুত হস্তক্ষেপ করে সুষ্ঠু বিচার করুন।

মানববন্ধনে অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী প্রদীপ মার্ডি বলেন, আজ এমন একটি সংকটময় সময় যখন বহিরাগত সন্ত্রাসীরা এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবনসহ প্রধান ফটকগুলো অবরুদ্ধ করে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান যেখানে প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। আজকে যদি সকল শিক্ষার্থী ওই সব বহিরাগত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে একটু হুংকার ছাড়তো তবে তারা এই সাহস পেতো না। বিশ্ববিদ্যালয় তথা শিক্ষার্থীদের অভিভাবক স্বরূপ মাননীয় উপাচার্য, উপ-উপাচার্যকে হুমকি দেওয়া, প্রধান ফটক গুলোতে তালা লাগিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ঢুকতে না দেওয়া হচ্ছে অথচ প্রশাসন কেনো কঠোর হস্তক্ষেপ করেনি। অন্যদিকে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করলে পুলিশ প্রশাসন আমাদের বাধা দেয়, আমাদের ওপর গুলি চালায় অথচ গতকালের ঘটনায় পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করে।

এ সময় পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী মিনহাজুল আবেদীন বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কোনো নেতারা স্থানীয়দের নিকট হতে ইজারা নেয়া নয়। আমরা মেধা দিয়ে এখানে পড়তে আসছি কারো দয়ায় আসিনি। কারো ব্যক্তিগত জায়গা-জমিতে পড়তে আসিনি।

২রা ফেব্রুয়ারি ন্যায্য দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করলে প্রক্টর ও পুলিশ দিয়ে আমাদের ওপর চড়াও হয়েছিলেন কিন্তু আজ কেন আপনারা নিশ্চুপ? যখন বহিরাগতরা আমাদের অবরোধ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অপমান করে তাতে কি আপনাদের আমাদের মান-সম্মান যায় না? আমি মনে করি এর চেয়ে অপমানজনক ঘটনা ইতিহাসে আগে কখনো ঘটেনি। ২রা ফেব্রুয়ারির ঘটনায় মামলা করা হয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের নামে অথচ মূল ঘটনা কি ছিলো তা আপনারা জানেন। আপনারা সব জেনেও সেই শিক্ষার্থীদের বাড়ি থেকে এমনকি বিভাগ থেকে গ্রেপ্তার করাচ্ছেন। আপনারা এখনো সতর্ক হয়ে যান, নইলে কীভাবে আন্দোলন করতে হয় তা সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানেন। আপনারা এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করবেন না যাতে আমাদের মাঠে নামতে হয়।

ইতিহাস বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল অন্তর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়ে আমাদের দেখতে হয় বহিরাগত টোকাইরা যারা বিশ্ববিদ্যালয় ভবনগুলো তে কি লেখা আছে তা পড়তেই জানে তারা এসে তালা লাগিয়ে যায়। আমরা বলতে চাই সকল শিক্ষার্থী যদি থু-থু দেয় তাতেই তারা ভেসে যাবে। এখনি সময় বহিরাগত দালালদের এটা বুঝিয়ে দেওয়ার। তাদের হুশিয়ার করতে চাই এখানে তাদের অস্তিত্ব থাকবে না যদি সাধারণ শিক্ষার্থীরা মাঠে নামে।আজ এই প্রশাসনের দুর্বলতার কারণেই তারা এ সুযোগ পাচ্ছে। এ সময় তিনি দ্রুত রাকসু নির্বাচনের দাবি রাখেন যাতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবিপূর্ণ হয়।

মানববন্ধনে নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী লিটন দাস বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয় কারো ব্যক্তিগত নয়, এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিটি সাধারণ শিক্ষার্থীর। যা চলে খেটে মানুষের কষ্টের টাকায়, তাদের ট্যাক্সের টাকায়। এখানে বহিরাগত স্থানীয় কারো বা নেতাদের হস্তক্ষেপ করার অধিকার নেই। আমরা এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

এ সময় প্রায় অর্ধ-শতাধিক সাধারণ শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়ে বহিরাগত টোকাই সন্ত্রাসী ও নেতাদের কর্মকাণ্ডের প্রতি নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং আগামী ২৬ ডিসেম্বর কর্মসূচীর ঘোষণা করেন।

প্রসঙ্গত, গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাটালগ, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ও গ্রন্থাগার সহকারী পদের নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ করে দেন রাবি শাখা ছাত্রলীগ ও মহানগর আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা। পরীক্ষা বন্ধ করতে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবন ও ফটকগুলোতে তালা লাগায়। শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ঢুকতে ও বের হতে বাধা প্রদান করে। এমনকি পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র ছিঁড়ে লাঞ্ছিত করে তাড়িয়ে দেয় নেতাকর্মীরা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত