নিজস্ব প্রতিবেদক

২৬ ডিসেম্বর, ২০১৬ ১৮:২৯

এখনো অবরুদ্ধ সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যক্ষ

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সকাল থেকে অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যক্ষ। ১২ দফা দাবিতে সোমবার সকাল থেকে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ শিক্ষকদের তালাবদ্ধ করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থীরা। কেটে দেওয়া হয়েছে এই ভবনের বিদ্যুৎ ও টেলিফোন লাইন।

শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, দাবি পুরণ হওয়ার আশ্বাস না পেলে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তাঁরা।

২০০৮ সালে সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে শুরু হয় শিক্ষা কার্যক্রম। তবে আট বছর পেরিয়ে গেলেও এখানে এখন পর্যন্ত নেই স্থায়ী কোনো শিক্ষক। আট বছর ধরেই বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ধার করে’ আনা শিক্ষক দিয়ে চলছে এই কলেজটির কার্যক্রম। স্থায়ী শিক্ষক না থাকাসহ এমন নানা সমস্যায় ভূগছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীভুক্ত এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। দীর্ঘদিন ধরে এসব সমস্যা সমাধানের দাবি জানিয়েও কোনো সুফল না পেয়ে সোমবার সকাল আন্দোলনে নেমেছে কলেজটির শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, আট বছরেও এই কলেজে স্থায়ী শিক্ষক নেওয়া হয়নি। খন্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে চলছে কার্যক্রম। এসব খন্ডকালীন শিক্ষকদের বেশিরভাগই অদক্ষ। তাছাড়া এরাও নিয়মিত ক্লাস নেন না। ফলে একটি সেমিস্টার শেষ হতে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সময় লেগে যায়।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, কলেজের উন্নয়নের জন্য বাজেট আসলেও তা উন্নয়নে ব্যয় হয় না। বরং কর্মকর্তারা তা ভাগবাটোয়ারা করে নেন। অথচ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সেমিস্টার ও হলের জন্য অতিরিক্ত ফি নেওয়া হয়।

এই কলেজের শিক্ষার্থী রতন সরকার বলেন, আমাদের কাছ থেকে হলের জন্য অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হলেও হলে কোনো বিছানা নেই। নেই ফ্যান-টেলিভিশন। তাছাড়া পানিসহ নানা সমস্যা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই ওয়াইফাই সংযোগ। নেই পরিবহন সুবিধা। অথচ এসবের জন্য টাকা নেওয়া হয়।

তুষার মজুমদার নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের সেমিস্টারে ফি দিতে ইসলামি ব্যাংকের শিওর ক্যাশের মাধ্যমে। এতে প্রতি হাজারে দশ টাকা করে বেশি দিতে হয়। এছাড়া পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় এখানে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা সমস্যাও রয়েছে। তবু নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তারক্ষী। স্থায়ী শিক্ষক না থাকায় কলেজে নিয়মিত ক্লাস হয় না বলে জানান তিনি।

এসব সমস্যা সমাধানে ১২ দফা দাবি জানিয়ে সোমবার সকাল থেকে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল হালিম, রেজিস্ট্রার মো. সেলিমসহ শিক্ষকদের প্রশাসনিক ভবনে অবরুদ্ধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা। তারা ফটকে তালা ঝুলিয়ে এই ভবনের সামনে অবস্থান নেয়। এরপর সন্ধ্যায় এই ভবনের বিদ্যুৎ ও টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় শিক্ষার্থীরা।

এসব অভিযোগের ব্যাপারে ইঞ্জিনিয়ার কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল হালিম বলেন, আমিও অস্থায়ী ভিত্তিতে আছি। সকল শিক্ষকই এখানে অস্থায়ী। শিক্ষক নিয়োগের দায়িত্ব মন্ত্রনালয়ের। তবে নিয়মিত ক্লাস না হওয়া ও সময় বেশি লাগার অভিযোগটি সত্য নয়। হল এবং সেমিস্টারের ফিও আমাদের এখানে তুলনামূলক কম।

তিনি বলেন, হলে কিছুটা সমস্যা আছে। বিছানারও কিছু সঙ্কট রয়েছে। আমাদের বাজেট না থাকায় এখনই বিছানা কিনতে পারছি না। তবে ছোটখাটো সমস্যাগুলো দ্রুতই সমাধান করা হবে।

অধ্যক্ষ বলেন, ওয়াইফাই সংযোগ প্রদানের বিষয়টি প্রক্রিয়াধিন আছে। দ্রুতই সংযোগ প্রদান করা হবে। আর ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা প্রদানের সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা চলছে।  
তবে পরিবহন বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনো ফি নেওয়া হয় না বলে জানান তিনি।
এছাড়া অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমাদের সব তথ্য উন্মুক্ত আছে। যে কেউ তা খতিয়ে দেখতে পারবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত