নিজস্ব প্রতিবেদক

২১ মার্চ, ২০১৭ ০০:২৪

ভাড়া করা ভবনে ঝুঁকি নিয়ে বাস করছেন শাবির নবীন শিক্ষকরা

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) নবীন শিক্ষকদের আবাসন সংকট মেটাতে কয়েকটি ভবন ভাড়া নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে একটি ভবন দাঁড়িয়ে রয়েছে ইট নির্মিত ভিত্তির ওপর, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বিভিন্ন সময় ছোটখাটো ভূমিকম্পের কারণে ভবনটির দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে এরই মধ্যে। এর পরও স্থান ও ঝুঁকি নিয়েই সেখানে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন বসবাসরত নবীন ও ব্যাচেলর শিক্ষকরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের বিপরীতে রাস্তার পাশেই সাইফুন কমপ্লেক্সের সাবরিনা, আমির আলী ও আবুল ফজল নামে তিনটি ভবন ভাড়া নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে সাবরিনা নামে চারতলা ভবনটিতে থাকতে হচ্ছে নবীন ও ব্যাচেলর শিক্ষকদের। ইটের পিলারের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা ভবনটি নির্মাণ করা হয় ১৯৯০ সালের আগে। বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া ছোটখাটো ভূমিকম্পের কারণে ভবনের দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে এরই মধ্যে। ভবনটির আটটি ফ্ল্যাটে মোট রুমসংখ্যা ২৪। একেকটি ফ্ল্যাটের জন্য ৯ হাজার টাকা করে প্রতি মাসে ভবনটির ভাড়া বাবদ ৭২ হাজার টাকা পরিশোধ করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

প্রসঙ্গত, ২০০০ সালের পর থেকেই ইট নির্মিত (ব্রিক স্ট্রাকচার) ভিত্তির ওপর বহুতল ভবন তৈরিতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। বেজ ফ্লোর তথা মাটির নিচে রড, সিমেন্ট ও পাথরের শক্ত ভিত তৈরির মাধ্যমে বহুতল ভবন নির্মাণের বিধান রয়েছে। কিন্তু এসব শর্ত না মেনে ইটের ভিত্তির ওপরেই তৈরি হয়েছে ভবনটি। এরই মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটির নানা জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। ফলে এ মুহূর্তে জীবন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন ভবনটিতে বসবাসরত শিক্ষকরা।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আল আমিন রাব্বি বলেন, ভবনটিতে যারা থাকেন, তারা সবসময় একটা আতঙ্কের মধ্যে থাকেন। কিন্তু থাকার জায়গা ও অর্থ সংকটের কারণে নতুন প্রভাষক যারা অন্য জেলা থেকে এসে এখানে যোগ দিচ্ছেন, তারা এখানেই থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। যে কোনো সময় এখানে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

ওই অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে আরো দুটি ভবন রয়েছে। সেগুলো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভাড়া না নিলেও শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসসংলগ্ন বলে নিজেরাই ভাড়া নিয়ে থাকছেন। সেগুলোও ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানান ওই ভবনের শিক্ষার্থীরা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণত ইটের ভিত্তির ওপর নির্মিত ভবন ভূমিকম্পের সময়ে হয় হেলে পড়ে, নয়তো বিভিন্ন তলার ইটের পিলার গুঁড়িয়ে যায়। এজন্য আধুনিক নকশায় বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে মজবুত কলাম ও বিম রাখা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. জহির বিন আলম বলেন, ওই ভবনটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। মাঝারি আকারের ভূমিকম্প হলেও এ ধরনের ভবনের বিভিন্ন তলার পিলারের ইট সরে গিয়ে এক ফ্লোরের ওপর আরেক ফ্লোর বসে যাবে। এতে অনেক প্রাণহানির আশঙ্কাও রয়েছে। ঝুঁকি বিবেচনায় ২০০০ সালের পর থেকেই সরকার এ ধরনের অবকাঠামোয় অনুমোদন দেয়া থেকে সরে এসেছে। এখন ব্রিক স্ট্রাকচারের কোনো বহুতল ভবনের অনুমোদন দেয়া হয় না।

জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার পর ২৬ বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত আবাসন সমস্যা সমাধানের জন্য তেমন কোনো অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়টির। সর্বশেষ ২০১১ সালে ছেলেদের জন্য সৈয়দ মুজতবা আলী ও মেয়েদের জন্য সিরাজুন্নেসা চৌধুরী আবাসিক হল নির্মাণ করা হয়। এর পর এখন পর্যন্ত অন্য কোনো হল নির্মাণ করা হয়নি।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতটি স্কুল ও ২৬টি বিভাগের অধীনে নিয়মিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। এর বিপরীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি আবাসিক হল ও তিনটি হোস্টেল মিলে মোট ৩ হাজার ৪২৪ ছাত্রছাত্রীর থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।

অর্থাৎ ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য কোনো আবাসন ব্যবস্থা নেই। এদের মধ্যে যারা সিলেটের স্থানীয় বাসিন্দা, তারা নিজের বাসা থেকেই ক্লাস করে থাকেন। আর বাকিদের বাড়তি টাকা খরচ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে বিভিন্ন মেস-হোস্টেলে থাকতে হচ্ছে।

শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাড়া করা হোস্টেলে রয়েছেন, তারা মাথা গোঁজার ঠাঁই পেলেও পাচ্ছেন না পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুযোগ-সুবিধা। তিনটি হোস্টেলের কোনোটিতেই ডাইনিং-ক্যান্টিন কিংবা রিডিং রুমের সুবিধা নেই। নেই টিভি রুমও। কোনো-কোনোটিতে দুটির বেশি পত্রিকাও আসে না।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাস জানান, আমাদের আবাসিক সংকট রয়েছে। আমরা ওখানে তিনটি ভবন ভাড়া নিয়েছি। এর মধ্যে একটি ভবন ব্রিক স্ট্রাকচার বলে পরে জানতে পেরেছি। অন্যত্র ভবন পাওয়া গেলে এটি ছেড়ে দেয়া হবে।
সূত্র : বণিক বার্তা

আপনার মন্তব্য

আলোচিত