রাবি প্রতিনিধি

২১ জুলাই, ২০১৭ ২২:০৭

ইউজিসি’র অভিন্ন শিক্ষক নিয়োগ নীতি প্রত্যাখ্যান রাবি শিক্ষক সমিতির

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়নের যে খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে, তা প্রত্যাখ্যান করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শিক্ষক সমিতি।

শুক্রবার বিকেলে রাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রুহুল আমিন সাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় ইউজিসির অভিন্ন শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। আলোচনার পর সভা মনে করে, উক্ত নীতিমালা উচ্চশিক্ষা বিকাশের প্রতিকূল, জাতীয় চেতনার পরিপন্থি এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রযোজ্য ১৯৭৩ সালের অ্যাক্টের সঙ্গে সংঘাতপূর্ণ। এই বিবেচনায় রাবি শিক্ষক সমাজ এই নীতিমালাকে সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করে। সেই সঙ্গে এটি যাতে রাবিতে কার্যকর করা না হয়, সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়।’

জানা গেছে, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতি বিষয়ে অভিন্ন এক নীতিমালার উদ্যোগ নেয়া হয় ১৯৯৩ সালে। ২০০২ এবং ২০০৪ সালে অভিন্ন নিয়োগ নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত হয়। পরে ওয়ান ইলেভেনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ও একবার এই উদ্যোগ নেয়া হয়। এর মাঝখানে চার, পাঁচ বছর পর পর কখনো নতুন শিক্ষামন্ত্রী অথবা ইউজিসির নতুন চেয়ারম্যান উদ্যোগ নেন ও কমিটি করেন। এখান থেকে নতুন নতুন প্রস্তাব আসে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। সর্বশেষ ২০১৫ সালে ৮ম পে-স্কেলে শিক্ষককের বেতন-ভাতা নিয়ে জটিলতার পর প্রধানমন্ত্রী তা সমাধান করতে অভিন্ন নীতিমালা করার কথা বলেন।

এরপর ইউজিসি এটি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে উদ্যোগ নেয়। অভিন্ন নীতিমালার খসড়ায় বলা হয়েছে, অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেতে কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষককে অপেক্ষা করতে হয় প্রায় ১৫ থেকে ১৬ বছর। আবার কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র ১১ বছরেই অধ্যাপক হয়ে যায়। কোথাও প্রভাষক পদে যোগ দিতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স পর্যায়ে প্রথম শ্রেণি বাধ্যতামূলক। আবার কোথাও যে কোনো একটিতে প্রথম শ্রেণি থাকলেই চলে। স্বায়ত্তশাসিত চারটি বড় ও পুরনো বিশ্ববিদ্যালয় সবচাইতে বেশি সুবিধা ভোগ করে থাকে। এই অভিন্ন নীতিমালা হলে তা বন্ধ হবে।  

ইউজিসির খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, যেসব শিক্ষকের পিএইচডি বা সমমানের উচ্চতর ডিগ্রি থাকবে, তারা প্রভাষক থেকে সহযোগী অধ্যাপক এবং স্বীকৃত জার্নালে ১৪টি প্রকাশনা থাকলে চাকরির ১৬ বছরে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাবেন। এমফিল বা পিএইচডি ডিগ্রি না থাকলে ১৮ বছরে একজন শিক্ষক অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাবেন। পদ থাকলে সরাসরি ১৬ বছরে নিয়োগ পাবেন অধ্যাপক হিসেবে। আর পদশূন্য না থাকলে পদোন্নয়নের মাধ্যমে ১৮ বছরে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাবেন।  

নতুন খসড়া নীতিমালায় বলা হয়, প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেতে একজন শিক্ষককে কমপক্ষে তিন বছরের ক্লাসরুম শিক্ষকতা এবং স্বীকৃত জার্নালে কমপক্ষে দুইটি গবেষণা প্রবন্ধ থাকতে হবে। একইভাবে, সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেতে একজন শিক্ষককে কমপক্ষে সাত বছরের ক্লাসরুম শিক্ষকতা এবং স্বীকৃত জার্নালে কমপক্ষে তিনটি গবেষণা প্রবন্ধ থাকতে হবে। এক্ষেত্রে এমফিল বা পিএইচডি ডিগ্রি থাকলে সাত বছরে, আর না থাকলে চাকরির ৯ বছরে একজন শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির যোগ্য হবেন। এরপর পরবর্তী পদোন্নতি অর্থাৎ অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেতে একজন শিক্ষককে কমপক্ষে আরো আট বছর চাকরি করতে হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত