উত্তম কুমার দাস, সিকৃবি

২৭ মার্চ, ২০১৮ ১২:২৪

প্রাণিদেহে এন্টিবায়োটিকের বিকল্প ব্যাকটেরিওফায ব্যবহার

সিকৃবির গবেষকদের সাফল্য

বর্তমান সময়ের জন্য সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল এন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স। যে কোন সাধারণ রোগে মহামারী আকারে মানুষ এবং প্রাণি মারা যাচ্ছে। আর এই এন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স, এন্টিবায়োটিকের অবাধ ব্যবহারের কারণে তৈরি হচ্ছে যা প্রাণিদেহ থেকে মানুষের দেহেও প্রবেশ করছে। বিষয়টিকে মাথায় রেখে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি, এনিম্যাল এন্ড বায়োমেডিক্যাল সায়েন্সেস ফ্যাকাল্টির প্যাথলজি বিভাগের প্রফেসর ড. মো. মাছুদুর রহমান কয়েকজন মাস্টার্সের শিক্ষার্থীকে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ২৪-২৫ মার্চ অনুষ্ঠিত ২৪তম বাংলাদেশ সোসাইটি ফর ভেটেরিনারি এডুকেশন এন্ড রিসার্চ (বিএসভিইআর) এসকন ২০১৮-তে প্যাথলজি বিভাগের শিক্ষার্থী নূরজাহান ইয়াসমিন রুনা "বেস্ট ওরাল প্রেজেন্টেটর" হিসেবে পুরষ্কার লাভ করেন। তিনি প্রফেসর ড. মো. মাছুদুর রহমান এর তত্ত্বাবধানে এবং সহযোগী অধ্যাপক ড. মনিরা নূর এর সহ- তত্ত্বাবধানে গবেষণা কাজটি সম্পন্ন করেছেন।

তার কাজটি ছিল এন্টিবায়োটিকের বিকল্প হিসেবে ব্যাকটেরিওফায এর ব্যবহারের উপর। অনেক খামারি তাদের প্রাণির দেহ বৃদ্ধির জন্য এবং রোগ প্রতিরোধের জন্য কম মাত্রায় এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করে থাকেন। যার ফলে প্রাণি দেহে এন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স দেখা দিচ্ছে এবং পরবর্তীতে তা প্রাণি দেহ থেকে মানুষের দেহে প্রবেশ করছে এবং মানুষের দেহেও এন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর তাই এন্টিবায়োটিকের বিকল্প হিসেবে ব্যাকটেরিওফায ব্যবহার করা যেতে পারে।

তাদের গবেষণা ফলাফল থেকে দেখা যায় ব্যাকটেরিওফায ব্যবহারের ফলে প্রাণির দেহ বৃদ্ধিতে কোন সমস্যা হয় নি বরং বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়েছে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যাকটেরিওফায ভাইরাস ইন্টেসটাইনে প্রাণির ক্ষতিকর দুটি ব্যাকটেরিয়া ই কোলি এবং সালমোনেলা এর বৃদ্ধি কমিয়ে দিয়েছে। তাদের গবেষণার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে ব্যাকটেরিওফায এন্টিবায়োটিকের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে তবে এ বিষয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন।

এই গবেষণা প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেম (SAURS)। বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গবেষকগণ এ কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করে তাদের গবেষণা কাজ উপস্থাপন করেন।

এছাড়াও ভারত ও নেপালের গবেষকগণ এ কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করেন এবং তাদের গবেষণা কাজ উপস্থাপন করেন। মোট ৫৩ টি ওরাল প্রেজেন্টেশন এর মধ্যে নূরজাহান ইয়াসমিন রুনা বেস্ট দুই প্রেজেন্টরের মধ্যে জায়গা করে নেন।

এ বিষয়ে তিনি বলেন “আমি খুবই আনন্দিত ও গর্বিত বেস্ট নির্বাচিত হওয়ায়। আমি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই আমার শ্রদ্ধেয় গবেষণা সুপারভাইজার প্রফেসর ড. মো. মাছুদুর রহমান স্যার, কো-সুপারভাইজার ড. মনিরা নূর ম্যাডাম এবং আমার সকল শুভাকাঙ্ক্ষীদের যাদের সহযোগিতায় আমি এই অর্জন করতে পেরেছি। আমি এন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্সের উপর ভবিষ্যতে আরও গবেষণা চালিয়ে যেতে চাই।"

এ বিষয়ে প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মাছুদুর রহমান এর সাথে কথা বলে জানা যায় প্যাথলজি বিভাগ থেকে ২৪তম বিএসভিআর এসকন ২০১৮ তে একটি পোস্টার ও দুটি ওরাল প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করা হয়। বর্তমানে তাঁর তত্ত্বাবধানে অত্র বিভাগে এন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্সের উপর আর ৩ টি গবেষণা প্রকল্প চলমান রয়েছে যার আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেম (SAURS), বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (UGC) এবং জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় (MOST)।

প্রকল্পগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে প্রকল্পগুলোর ফলাফল এন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশাবাদ তার।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত