উজ্জ্বল দাশ

০৭ এপ্রিল, ২০২০ ২০:৪০

ঘরে যান, স্বখাত সলিলে ডুবে মরবেন না

ভালোবাসার ফেরিওয়ালারা ঘুরছে দ্বারে দ্বারে। কেউ বা ব্যক্তিগত উদ্যোগে, কেউবা সাংগঠনিকভাবে, কেউবা যূথবদ্ধ হয়ে, কেউবা দিচ্ছ মাটির ব্যাংক ভেঙে, কেউবা দিচ্ছে মুষ্টির চাল থেকে, কেউবা সরকারের অংশ হয়ে। কেউ দিচ্ছে অসহায় মানুষকে, কেউ দিচ্ছে অসহায় পশুকে। কেউ দিচ্ছে খাদ্য, কেউ দিচ্ছে অর্থ, কেউ দিচ্ছে প্রয়োজনীয় অন্যসব পণ্য। লকডাউনে বাসা যার অবরুদ্ধ ফোন করলে পৌঁছে যাচ্ছে নিত্যদিনের সবজিসমেত পথ্য। কেউ দিচ্ছে সাহায্য তুলে রাখছি ছবি, কেউ দিচ্ছে ছবি ছাড়াই সবই। কেউ নিচ্ছে প্রয়োজনে, কেউ ঘর ভর্তি করছে অপ্রয়োজনে।

তারপরও দিচ্ছে সবাই, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ নামছে, রাস্তার ভিক্ষুক নামছে, নামছে খেটে খাওয়া মানুষ। যার যার অবস্থান থেকে যা পারছে তাই দিচ্ছে বাড়িয়ে। কেউ দিচ্ছে সুসিদ্ধ করে প্যাকেটবন্দি রান্না, কেউ দিচ্ছে আস্ত প্যাকেট করে। কেউবা অগোচরে যাচ্ছে ফেলে সবজির ঢেরি, যার প্রয়োজন সে নিচ্ছে সবই।

বাঙালি! যাপিত জীবনে অসঙ্গতি মতের ভিন্নতা থাকবে না, এটি ভাবনাই অবান্তর। কাউকে বলবেন, অমনি সে সুর সুর করে কাজগুলো করে বসবে! এ হয় না। এ ভাবনাও অমূলক। তাই বলে তাচ্ছিল্যমাখা গালি দেবো, খেদোক্তি করবো সেটিও সুন্দর দেখায় না।

আমরা বাঙালি, জন্মে যাদের দায়বদ্ধতা, তারাই তো দেশের দুর্যোগে ত্যাগের মহিমা ছড়ায়, তারাই তো রাষ্ট্রের ক্রান্তিকালীন সময়ে রাষ্ট্রের প্রতি জন্মঋণ শোধ করার চেষ্টা চালায়। এ রাষ্ট্র কালে কালে যুগে যুগে এরকম সূর্যসন্তানদের জন্ম দিয়েছে। কেউ জন্মঋণ শোধ করার চেষ্টায় কাজ করে যায় নিরন্তর, কেউবা দূরে দাঁড়িয়ে থাকে সুযোগের অপেক্ষায়।

এতো শ্রম এতো ত্যাগ এতো রক্তে কেনা এই বাংলায় বাঙালিদের অবদানটা খেয়াল করেন, তারপর বাঙালি বলে কয়ে যত ইচ্ছে গালমন্দ করেন।

সামান্য কটি বিক্ষিপ্ত মানুষের ভুলে গোটা বাঙালি তুলে নাইবা বকাঝকা করলেন, যে বীরেরা আজ অকুতোভয় সৈনিক সেজে কাজ করে যাচ্ছে সুস্থ সুন্দর এক বাংলাদেশ বিনির্মাণে, জীবন বাজি রেখে ঘুরছে অসহায় মধ্যবিত্তের দ্বারে দ্বারে। নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়াচ্ছে কি না বলতে পারি না, তবে দেশ সেবার মহান ব্রতে নিজেদের উজাড় করে দিচ্ছে, অবলীলায়। তাদের গালি দেবেন না বাঙালি বলে! দেবার আগে শুধু নিজেকে তাদের মতো করে নিয়োজিত করে দেখেন, কেমন লাগে?

আপনারা না পারছেন কোন কাজে আসতে না পারছেন নিজে কোন কাজে সংশ্লিষ্ট হতে, অযথাই ঘরের বাইরে এসে ঘোরাফেরা করে বাঙালি জাতীকে গালি শোনাচ্ছেন।

যান ভাই ঘরের ভেতরে গিয়ে আপাতত অসামাজিক হোন। বেঁচে যদি যান, তবে ঘর হতে দুই পা ফেলে বাইরে এসে সামাজিকতার হাওয়াটা আরও একবার গায়ে লাগাতে পারবেন। দেশ আপনার সাথে বেঈমানি করবে না। আপাতত আপনিও রাস্তার মোড়ে আড্ডা না মেরে ঘরের ভেতর চিৎ হয়ে শুয়ে থাকেন। কর্মসম্পাদনে যারা বাইরে আছেন, কাজ করে যাচ্ছেন নিয়ত, তাদেরকেও সুস্থভাবে কাজ করতে দিন। সবাই সবার দায়িত্বপালনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কেবল, আকাশের চিল হলেন আপনি! হা করে তাকিয়ে বিপদ ডেকে ঘরে আনছেন! কেনো আঙুলের ডগায় চুন নিয়ে মুখ লাল করে আয়েশি হয়ে পান চিবোবেন সদর রাস্তায়? ভুলে যাবেন না, এ দেশটা আপনার বাবার না, আমাদের সকলের।

ঘরে যান!
ঘরে বসুন!!
ঘরে বসে বাঙালিদের গালি শুনানো থেকে বিরত রাখুন!
স্বখাত সলিলে ডুবে মরার এই ইচ্ছেটা কেনো হচ্ছে, বলতে পারেন?

  • উজ্জ্বল দাশ: সংস্কৃতিকর্মী

আপনার মন্তব্য

আলোচিত