দিলীপ রায়

১১ এপ্রিল, ২০২০ ১৯:২৫

মানবতার জয় এভাবেই হয়

গন্তব্যস্থল মালীপাড়া, পীরের বাজার, সিলেট।

যাবার কথা ছিল মধ্যদুপুরে। কিন্তু কালীঘাট থেকে মালামাল নিয়ে বের হতেই প্রায় অনেকটা সময় চলে গেল। করোনাকালে সরকারের সমূহ নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে সেখানে লোকে লোকারণ্য।
জ্যাম, জনে জনে, যানে যানে।

যাবার সময় রাস্তায় রাস্তায় কিছু কিছু মানুষকে দেখা গেল। এর মধ্যে কেউ কেউ ত্রাণ খোঁজছিল। কিন্তু আমাদের প্যাকেটগুলো নির্ধারিত মানুষের জন্য নির্দিষ্ট করা ছিল বিধায় তাদের আকুতির কাছে হার মানতে হলো।

বন্ধু সাখাওয়াত হোসেন, সুশান্ত সিনহা সুমন, গণেন্দ্র দাস সহ আমরা যখন মালীপাড়া পৌঁছাই তখন দুপুরের সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে পড়েছে। প্রায় নিরন্ন মানুষগুলো ধৈর্য ধরে অপেক্ষারত তা দেখেই বোঝা গেল।

চারপাশের অবস্হাদৃষ্টে আগেই শাহপরান থানার ওসি সাহেবকে ফোনে জানিয়ে রেখেছিলাম। তিনি বেশ আন্তরিকভাবে বিষয়টিকে গ্রহণ করেছিলেন।

সেখানে বন্ধু সুমনের নির্দেশনায় এত চমৎকার, পরিপাটি আর সুশৃঙ্খল আয়োজন দেখে মনটা ভরে গেল। পুলিশের প্রয়োজনই আর অনুভব করলাম না।

নিত্যান্ত পাড়াগাঁয়ের মতো পরিবেশ। মানুষগুলোর নিকট কোনো ত্রাণ এখনও পৌঁছায় নি। ত্রাণের গাড়ি দেখে তাদের চোখ চিকচিক করছে। কোনো হৈচৈ নেই, কোলাহল নেই।

কোনোরকম ভূমিকা ছাড়াই ত্রাণ বিতরণ শুরু হলো। এক এক করে আসছে। একটি একটি প্যাকেট নিয়ে যাচ্ছে। মাত্র তো ৫১৭ টাকার বিনিময়ে একেকটি প্যাকেট। কিন্তু ত্রাণের প্যাকেট হাতে তাদের কৃতজ্ঞতাসুলভ যে ভুবনভোলানো হাসি সত্যিই অসাধারণ। ভুলবার নয় এ দৃশ্য! কেনো টাকা দিয়ে তা পরিমাপ যোগ্যও নয় হয়তো।

এই খেটে খাওয়া তাৎক্ষণিক কর্মহীন মানুষগুলোর জন্য কিছু একটা করতে পারার আনন্দ নিয়ে যখন ঘরে ফিরি তখন পরিবারের সকলের যে কী পরিমাণ উৎকণ্ঠা দূর হলো তা বলাই বাহুল্য।

বিতরণ কিংবা দানের মাঝে যে আনন্দ তা পার্থিব সকল আনন্দকে যে ছাড়িয়ে যায়! তাদের কী করে বোঝাই, যারা এই আনন্দের অংশীদার হওয়া থেকে চিরকালই বঞ্চিত।

সকল সামর্থ্যবান এবং বিত্তবানকে আহবান জানাই আপনার প্রয়োজন থেকে উদ্বৃত্ত অংশটুকু নিয়ে এই সংকটকালীন সময়ে কর্মহীন, অসহায় মানুষগুলোর পাশে এসে দাঁড়ান। ঘরে তার অভুক্ত শিশুটির একমুটো খাবারের ব্যবস্হা করুন। বাসা থেকে বের হতে না চাইলে যারা ঝুঁকি নিয়ে বের হচ্ছেন তাদের সহযোগিতা নিন।

প্রমাণ করুন, মানবতার জয় এভাবেই হয়।

[দ্র. এমসি কলেজ, গণিত ১৯৯৮-৯৯ ব্যাচের সৌজন্যে এই ত্রাণ কার্যক্রম চলছে।]

 দিলীপ রায়: প্রভাষক, গণিত বিভাগ, এমসি কলেজ, সিলেট।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত