ডা. না‌জিম অপু

১৭ এপ্রিল, ২০২০ ১৮:৩০

নিয়তির নির্মম পরিহাস!

আর কতটা প্রাণ গেলে পরে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে।

কি হচ্ছে কি এসব চারদিকে? টকশোগুলোতে যে যার ইচ্ছেমত আগডুম বাগডুম বলে যাচ্ছে। এক স্বনামধন্য বয়োজ্যেষ্ঠ সাংবাদিক কত উপদেশ দিচ্ছেন- যেমন ধরেন জানালা দিয়েই রোগী দেখার কৌশল, পিপিই ছাড়াই শুধুমাত্র গ্লাভস মাস্ক পরে এক মিটার দূর থেকে কিভাবে রোগী দেখা যায়!

তারপর আজ একজন বয়োজ্যেষ্ঠ বিশেষজ্ঞ বললেন কিভাবে দম বন্ধ রেখে করোনা রোগীকে কাছ থেকে দেখে নিজেকে রক্ষার কৌশল, ব্লা ব্লা .... ইত্যাদির হাসির খোরাক।

এরপর ধরেন টিভিতে ভিডিও কনফারেন্সগুলো দেখলে শুনলে মনে হয় না দেশে ত্রাণ নিয়ে কোথাও কোন সমস্যা আছে বা জেলা উপজেলা পর্যায়ে কোথাও কোন সমস্যা আছে। লকডাউন সফল ভাবে চলছে, সুশৃঙ্খল ভাবে গরীব দুখী থেকে শুরু করে নিম্নআয় ও মধ্যবিত্তের ঘরে ঘরে নাকি ত্রাণ চলে যাচ্ছে। সকল দিক নির্দেশনা মোতাবেক সফল ভাবে করোনা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম চলছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কথা শুনলেও শুধু আশার বাণী। ' যা যা করার তা স.....ব করা হ.....বে।'

এই 'যা যা' মানে কি কি তা এক এক জন একেক রকম বোঝে। যেমন চিকিৎসকদের পিপিই দরকার, তো কি সমস্যা? লক্ষ লক্ষ পিপিই আছে মজুদ। মাস্কও আছে। কিন্তু সেগুলো যে মানসম্মত কিনা সেটা কিন্তু তাদের দেখার বিষয় না।

আর শুরুর দিকের কথা! তখন তো বোদ্ধারা, বৈদ্যরা বলেছিলেন- করোনা বাংলাদেশে আসবে না, আসলেও তাদের সব প্রস্তুতি আছে, এটা নাকি হাঁচি কাশি ছাড়া আর কিছুই না। আতঙ্কের কিসসু নেই।

প্রশ্ন শুধু আমার মতন নষ্ট মাথাতেই ঘোরে-

কেন বলেছিলেন এসব ফালতু কথা? কেন মানুষকে এত অভয় দিয়েছিলেন যে তারা ছুটি পেয়েই দলবল নিয়ে ফুরফুর করতে করতে ঘুরতে বের হয়ে গেল? কেন এখনও লকডাউন বুঝছে না মানুষজন?

এখনও কেন দিনে হাজার দুয়েক টেস্ট করা হয়? জনসংখ্যাটা হিসেব করলে ভাবতে পারেন যে কত টেস্ট করা দরকার? দুহাজার টেস্টে শতিনেক পজিটিভ তাহলে বেশি না, দশ হাজারে কজন পজিটিভ হতে পারে? আর একটু বেশি হলে?? আর একটু?? তখন যে পজিটিভ কেস আসবে তা শোনার জন্য প্রস্তুত তো? এই স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সামাল দিতে পারবে তো?

ত্রাণ নিয়ে চুরি ডাকাতি কারা করে? কেন করে যেখানে জীবন মৃত্যুর কোন নিশ্চয়তাই নাই? চাল চোরেরা চাল চুরি করেই যাচ্ছে।

ত্রাণ দেয়ার উছিলায় গরীব মানুষগুলোর চেহারা দেখিয়ে ছবি তুলে মিডিয়াতে দিয়েই যাচ্ছে। ছবি ক্যামেরা একশন ছাড়া ত্রাণ নেই। আচ্ছা এত এত মানুষ একসাথে হাতে হাত রেখে একজনকে ত্রাণের প্যাকেট দেবার ছবি প্রতিদিনই দেখছি কেন?

তেলের মজুদ এখন বিছানার নিচে। এটা নিয়ে অবশ্য কোন প্রশ্ন জাগে না। কারণ যে হারে তৈলমর্দন তৈলচর্চা চলছে তাতে এটাই মজুদ করা স্বাভাবিক।

লেখক: রেজিস্ট্রার, হেমাটোলজি, নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ, সিলেট।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত