২৭ মে, ২০২০ ২০:৫২
একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য সুরকার, সংগীত পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা সুজেয় শ্যাম সুজেয় শ্যাম বাসায় ফিরেছেন। শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে মঙ্গলবার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর বুধবার বিকেলে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে বাড়ি ফেরার অনুমতি দেন।
সুজেয় শ্যামের বাসায় ফেরার বিষয়টি তার মেয়ে লিজা শ্যাম। তিনি জানান, তার বাবার শারীরিক অবস্থা এখন অনেকটাই ভালো। শ্বাসকষ্টের সমস্যার কারণে ধারণা করা হচ্ছিল তিনি করোনা আক্রান্ত নন তো—মূলত এই উদ্বেগ থেকে দ্রুত হাসপাতাল বদল করে বাবার করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেওয়া হয়। শারীরিক অবস্থা ভালো থাকার কারণে করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার আগ পর্যন্ত বাবাকে বাসায় থাকার পরামর্শ দেন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক।
বিজ্ঞাপন
প্রোস্টেট ক্যানসারের রোগী সুজেয় শ্যাম কয়েক দিন ধরেই অসুস্থ। জ্বর ও শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগছিলেন। রক্তচাপও স্বাভাবিক ছিল না। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে দ্রুত শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল ভর্তি করানো হয়। সেখানে কৃত্রিম উপায়ে তার শ্বাসপ্রশ্বাস প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখা হয়। পরে তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
১৯৪৬ সালে সিলেটে জন্ম নেওয়া সুজেয় শ্যামকে সংগীতে অবদানের জন্য ২০১৮ সালে একুশে পদক দেওয়া হয়। তার আগে ২০১৫ সালে শিল্পকলা পদক পান তিনি। দশ ভাই বোনের মধ্যে সুজেয় শ্যাম ষষ্ঠ। তার বাবা, মা ও ভাই বোনেরাও বেতারে গান করতেন।
গিটার বাদক ও শিশুতোষ গানের পরিচালক হিসেবে ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তান চট্টগ্রাম বেতারে কর্মজীবন শুরু হয় সুজেয় শ্যামের। পরে তিনি ঢাকা বেতারে যোগ দেন।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে থাকাকালে মোট নয়টি গানে সুর করেছিলেন সুজেয় শ্যাম, যেগুলো একাত্তরের জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত গাওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে রয়েছে ‘মুক্তির একই পথ সংগ্রাম’, ‘ওরে শোনরে তোরা শোন’, ‘রক্ত চাই রক্ত চাই’, ‘আজ রণ সাজে বাজিয়ে বিষাণ’। ছিল বিশ্বপ্রিয়র লেখা ‘আহা ধন্য আমার’, কবি দিলওয়ারের লেখা ‘আয়রে চাষী মজুর কুলী’। তার সুর করা গানের মধ্যে ‘রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি’ এবং ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই’ গান দুটি যে কোনো জাতীয় দিবসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে।
বিজ্ঞাপন
১৯৬৯ সালে চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন সুজেয় শ্যাম। ঢাকাই চলচ্চিত্র সংগীতে অবদানের জন্য তিনবার শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক হিসেবে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। বাংলাদেশ বেতারের প্রধান সংগীত প্রযোজক পদ থেকে ২০০১ সালে অবসরে যান সুজেয় শ্যাম।
এরপর ২০০৬ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ বেতারে প্রচারিত ৪৬টি গানের সংকলন নিয়ে ‘স্বাধীন বাংলা বেতারের গান’ শিরোনামে একটি অ্যালবামের সঙ্গীত পরিচালনা করেন তিনি। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালে আরও ৫০টি গানের সংকলন নিয়ে ‘স্বাধীন বাংলা বেতারের গান-২’ নামে আরেকটি অ্যালবামের সংগীত পরিচালনা করেন শিল্পী। ‘টুনাটুনি অডিও’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সংগীত পরিচালক হিসেবেও কাজ করছেন তিনি।
আপনার মন্তব্য