সিলেটটুডে ডেস্ক

১৭ অক্টোবর, ২০২১ ০০:১৩

মৌলবাদবিরোধী সুর বজায় রাখুন: পরমব্রত

কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেতা, পরিচালক পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। অভিনয় গুণে তিনি বাংলাদেশেও জনপ্রিয়। এদেশের সিনেমাতেও অভিনয় করেছেন।

এবার কলকাতায় দুর্গা পূজা বেশ ভালোই কাটিয়েছেন এ অভিনেতা। অন্তত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি দেখে সেই ধারণাই পাওয়া যায়। তবে বাংলাদেশে দুর্গা পূজার সময় পূজা মণ্ডপে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় ব্যাথিত হয়েছেন তিনি।

ফেসবুকে লেখা দীর্ঘ স্ট্যাটাসে সে কথাই জানিয়েছেন পরমব্রত। তিনি লেখেন, ‘বাংলাদেশে আমার সমস্ত বন্ধুদের কাছে আমার একান্ত অনুরোধ, কুমিল্লা বা নোয়াখালীতে ঘটে যাওয়া ঘটনার তীব্র নিন্দা করুণ কোনো দ্বিধা না রেখে। দোষীদের কঠোর শাস্তি দাবি করুন।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যকে সুবার্তা বলে উল্লেখ করে পরমব্রত লেখেন, ‘আপনাদের মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে তার বক্তব্যের মাধ্যমে সুবার্তা দিয়েছেন, আপনারাও সেই মৌলবাদ বিরোধী সুর বজায় রাখুন। প্রতি বছরই প্রায় এরকম কিছু না কিছু ঘটে, সত্যি বলছি ভালো লাগে না।’

এসব ঘটনা উদারহণ হিসেবে থেকে যায় এবং রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার পথ মসৃন হয় বলে মনে করেন এ অভিনেতা।

তিনি লেখেন, ‘প্রাণের উৎসবের উপর আক্রমণ বলে ভালো লাগে না তো বটেই, তা ছাড়াও আরও বড়ো একটা কারণ হলো, এই ঘটনাগুলি সীমানার এই পারে গোঁড়া হিন্দুত্ববাদীদের বড়ো সুবিধে করে দেয়। তাদের আস্ফালন বাড়ে, ধর্মের জিগির তুলে, এই উদাহরণ টেনে, মানুষের মনে অন্য সম্প্রদায় সম্বন্ধে ঘেন্না জন্মিয়ে রাজনৈতিক মুনাফা তোলার পথ মসৃন হয়।’

দীর্ঘ স্ট্যাটাসে পরমব্রত লেখেন, ‘গোঁড়ামি, মৌলবাদ, ইংরিজিতে যাকে বলে ফানাটিসিজম, সেটা সব ধর্মেই থাকে, থেকে এসেছে হাজার বছর ধরে। যখন যে ধর্মের মৌলবাদী জিগির সামনে আসে, তখন সেগুলোর থেকে বেরোনোর, সেগুলির সমালোচনা করার বা সেই বিস্বাসে বিশ্বাসী শক্তিগুলিকে পরাস্ত করার দায়িত্ব কিন্তু সেই ধর্মের শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষকেই আরও বেশি করে নিতে হবে!

‘আমরা প্রত্যেকে নিজের নিজের ধর্মের অতিরিক্ততার বিরুদ্ধে কথা বলা আরম্ভ করি। ধর্ম মানে বিশ্বাস, কিছু মানুষের এক সঙ্গে হওয়া, অনেক বছর ধরে চলে আসা কিছু আচার, কিংবা সমাজকে এক রকমভাবে সংঘবদ্ধ রাখার জন্যে তৈরি করা কিছু নিয়ম বা হয়তো নানান উৎসব! যেটাই হোক, বিশ্বাস আর অতি বা অন্ধ বিশ্বাস (যা অন্য মানুষকে জোর করে, বা ক্ষতি করে) এর মধ্যে সুক্ষ লাইনটা কোথায় সেটা আমাদেরই বুঝে নিতে হবে!

‘আমাদের উপমহাদেশের ইতিহাস খুব জটিল। তাই আমাদের, মানে এই ভূমির বাসিন্দাদের দায়িত্বও অনেক বেশি। নিঃশ্বাস নেয়া যেমন দরকার, ঠিক তেমন দরকার এই বোধগুলো নিজেদের মধ্যে মোমবাতির মতো জ্বালিয়ে রাখা।’

পরমব্রত তার লেখা শুরু করেন এভাবে- ‘ফেসবুকে বড়ো একটা আসা হয় না, কিন্তু একটি বিশেষ কারণে এলাম। বাংলাদেশে কয়েক জায়গায় দুর্গা পূজার মণ্ডপে ইসলামি মৌলবাদীদের তাণ্ডব নিয়ে কিছু পোস্ট নবমীর দিন সকাল থেকে চোখ পড়লো।’

পরমব্রত দুজনের কথা উল্লেখ করে লেখেন, ‘আমাকে যে ছেলেটি শ্যুটে অ্যাটেন্ড করে, আমার স্পট বয়, তার নাম নাসির গাজী। পূজার পাঁচটা দিন নিয়ম করে আমাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে গেছে। শুভ ষষ্ঠী থেকে বিজয়া! প্রতিবারই জানায়। সরস্বতী পূজার দিন-ক্ষণ আমার না থাকলেও ওর মনে থাকে এবং মনে করিয়েও দেয়। বাইরে শ্যুট করতে গিয়ে কোনো দর্শনীয় মন্দিরের সন্ধান পেলে সেটাও নাসিরই আমাকে এনে দেয়।

“নবমীর দিনই সকালে আমার কাঠের মিস্তিরি সানোয়ার আলী ফোন করেছিলেন একটা কাজের কথা বলতে। ফোনালাপ শুরুই করলেন ‘শুভ নবমী, দাদা’ বলে।”

আপনার মন্তব্য

আলোচিত