বিনোদন ডেস্ক

২৬ মার্চ, ২০১৬ ২২:১৬

‘যে মেয়েটা হিজাব পরে তার কি দেখে ধর্ষণ করা হলো’

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী ও মঞ্চকর্মী তনুর ধর্ষণ ও হত্যার বিচারে ফুঁসে উঠেছে সচেতন নাগরিক সমাজ। পথে নেমেছেন সাংস্কৃতিক কর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে সোচ্চার প্রতিবাদ চলছে।

সেই প্রতিবাদে মিডিয়া অঙ্গণের তারকারাও পিছিয়ে নেই। নিজেদের মতো করে তনু হত্যার বিচারের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন তারা।

ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শবনম ফারিয়াও তনু হত্যার বিচার দাবি করে তার ফেসবুক পেজে পোস্ট দিয়েছেন।

ফারিয়া লিখেছেন: আমার নাম ফারিয়া শবনম তৃপ্তি (যদিও আপনারা চেনেন শবনম ফারিয়া নামে)। বাবা মা’র ছোট মেয়ে, বেশ আদরের মেয়ে। বাবার সরকারি চাকরির সুবাদে আমার ছোটবেলা কেটেছে মফস্বলে। জানেন মফস্বলে থাকা তৃপ্তির স্বপ্ন কি ছিলো? আমার স্বপ্ন ছিলো সাংবাদিক হওয়ার। কিন্তু কেন হতে পারিনি জানেন? কারণ আমার বাবা মায়ের ধারণা একটা মেয়ের যথেষ্ট নিরাপত্তা নেই এদেশে সাংবাদিকতা করার।

কিভাবে কিভাবে যেনো আমি অভিনয়ে যুক্ত হই, কিন্তু জানেন এখনো আমি গাড়ি ছাড়া বাসা থেকে বের হই না? আমি ঢাকার বাইরে কখনো শুটিং করতে যাই না, গেলেও রাত ১২টার মধ্যে বাসায় পৌঁছাতে পারবো সেই দুরত্বে যাই। এখনো বেশি রাত হলে আমার মা আমাকে আনতে যায়।

কেন জানেন? কারণ আমার বাবা মা এখনো বিশ্বাস করে এদেশে একটা মেয়ের চলাফেরা করার জন্য এখনো নিরাপদ না, রাত হয়ে গেলে একা আমি আমার নিজের ড্রাইভারের সাথেও নিরাপদ না।

আমাকে পহেলা বৈশাখে বাসা থেকে বের হতে দিতে চায় না, থার্টি ফার্স্ট নাইটে বাসার বাইরে তো দূরের কথা, দিনেও যেতে দেয় না। কিন্তু জানেন? আমি যে দেশে বাস করি সে দেশের প্রধানমন্ত্রী একজন নারী। বিরোধী দুই দলের প্রধানও নারী, কিন্তু আমার রাষ্ট্র আমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি।

আমি মাঝে মাঝে হিজাব পরে মার্কেটে যেতাম, মনে হতো আমি একটু হলেও নিরাপদ কিন্তু না, গতকাল জানলাম আমি বোরখা পরলেও নিরাপদ না। কারণ নিরাপদ হলে ১৮ বছর বয়সী তনুকে মরতে হতো না। এতোদিন শুনে এসেছি মেয়েদের আশালীন কাপড় দায়ী এসব ঘটনার জন্য, মেয়েরা পহেলা বৈশাখে নাভি দেখায়ে শাড়ী পরে, তাই আমাদের ফুলের মত ইনোসেন্ট ভাইয়ারা একটু দুষ্টামি করে শাড়ি ধরে টান দেয়।

তো যে মেয়েটা হিজাব পরে সেই মেয়েটার কি দেখে রেপ করে গলা কেটে খুন করা হলো? আজ থেকে আর কোনো মেয়ের পোশাক নিয়ে শঙ্কা/ অভিযোগ দিবেন না।

আপনার ছেলেকে, ছোট ভাইকে মেয়েদের সম্মান করতে শেখান, ভক্ষক হওয়ার চেয়ে রক্ষক হওয়ায় কতটা বীরত্বের- তা বোঝান। তনু একজন না, তনু হাজারজন, এক তনুকে হারিয়েছি, আর কোনো তনু যেনো না হারায়।

তাই তনু হত্যার এমন বিচার হওয়া উচিত, এরপর যাতে কোনো ছেলে কোন মেয়ের দিকে বাজেভাবে তাকাতেও ভয় পায়। চলুন আমরা সবাই এবার একটু সোচ্চার হই, আমি নিজে বের হতে না পারলেও আমার ভাগ্নি যাতে নিশ্চিন্তে বের হতে পারে, পরের প্রজন্মটা যাতে নিরাপদ থাকতে পারে সেটা নিশ্চিন্ত করি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত