বিনোদন ডেস্ক

১৮ এপ্রিল, ২০১৬ ০১:৫৮

বৃহন্নলা নির্মাতার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার

বৃহন্নলা চলচ্চিত্রকে কয়েকটি শাখায় জাতীয় পুরষ্কার দেয়ার দু’মাসের মধ্যেই সেগুলোকে বাতিল ঘোষণা করেছে সরকার।

এই চলচ্চিত্রটির বিরুদ্ধে অভিযোগ - এর কাহিনী মৌলিক নয়, এবং মূল গল্পকার কিংবা তার পরিবারের অনুমতি নেয়া হয়নি। চলচ্চিত্রের কোথাও লেখককে কোন স্বীকৃতিও দেয়া হয়নি।

সরকার বলছে, শুধু পুরস্কার বাতিল নয়, চলচ্চিত্রটির নির্মাতার বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নির্মাতা মুরাদ পারভেজ বলেছেন, তিনি অভিযোগ মেনে নিচ্ছেন কিন্তু এর বেশি কিছু তিনি বলবেন না।

বাংলাদেশের ইতিহাসে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদানের পর ফিরিয়ে নেবার ঘটনা এটিই প্রথম।

বৃহন্নলা নামের চলচ্চিত্রটি ২০১৪ সালের শ্রেষ্ঠ সিনেমা, শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার ও শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা এই তিনটি শাখায় পুরষ্কার জেতার পরই অভিযোগ ওঠে এর কাহিনী ভারতীয় লেখক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ছোট গল্প 'গাছটি বলেছিল' এর সাথে হুবহু মিলে যায়।

তথ্য সচিব মর্তুজা আহমেদ বলেছেন, অভিযোগ পাবার পরই তদন্ত কমিটি গঠন করে সরকার। এখন সেই কমিটির অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা মেলায় তারা পুরস্কার বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

তিনি বলেন, “পুরষ্কার দেবার পর আমরা জানতে পারি বিষয়টি। নীতিমালায় আছে, কাহিনীটি মৌলিক না হলে তা পুরষ্কারের যোগ্য হবে না। তখন আমরা তদন্ত করতে দিই, সেই কমিটি রিপোর্ট দিয়েছে যে গল্পটি মুরাদ পারভেজের নয়। তিনি নিজেকে কাহিনীকার বলেছেন, তিনি তাও নন। এই রিপোর্ট আমরা ক্যাবিনেট কমিটিকে পাঠাই, তারা এই পুরষ্কার বাতিল করেছে।”

মর্তুজা আহমেদ বলেন, গল্পটির জন্য লেখকের বা তার পরিবারের অনুমতি নেয়া হয়নি, এমনকি চলচ্চিত্রের ভেতরে লেখককে কোনোরকম স্বীকৃতিও দেয়া হয়নি।

তিনি জানান, চলচ্চিত্রটির নির্মাতা ও কাহিনীকারের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেবে সরকার, যার মধ্যে রয়েছে অনুদানের অর্থ ফেরত নেয়াসহ অন্যান্য বিধিবদ্ধ ব্যবস্থা।

এর জবাবে বৃহন্নলার নির্মাতা মুরাদ পারভেজ বলেন, তিনি অভিযোগ মেনে নিচ্ছেন, কিন্তু একই সঙ্গে, এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোন মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

এই চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস। তিনি পুরো ঘটনাটিকেই দু:খজনক বলে মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, “যখন কাজ করি, তখন কিছুই জানতাম না এ বিষয়ে। পুরষ্কার পাবার পর এ নিয়ে পত্রিকায় পড়ে জেনেছি, তখন মুরাদকে জিজ্ঞেস করলে, ও বলেছিল, কারো চিন্তার সঙ্গে অন্য কারো চিন্তা মিলতেই পারে। আমি বলেছিলাম, গল্পটা অন্য কারো হলে তাকে ক্রেডিট দিতে অসুবিধা কোথায়?”

নায়ক ফেরদৌস বলেন, “তবে, বিষয়টা খুবই দুঃখজনক। বেচারা কষ্ট করে সিনেমাটা তো বানিয়েছে। সবগুলো পুরষ্কার ফিরিয়ে নিয়েছে, সেটা খারাপই লাগছে। কিন্তু আবার একটা অন্যায়কে তো প্রশ্রয় দেয়াও উচিত না।”

২০১৪ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার প্রদানের যে জুরি কমিটি ছিল তার সদস্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান শফিউল আলম ভুঁইয়ার কাছে জানতে চেয়েছিলাম, পুরষ্কার প্রদানের আগে কেন বিষয়টি চিহ্নিত করা যায়নি?

“এটা অনুদান কমিটি বা সেন্সর বোর্ডের দেখার দায়িত্ব। কিন্তু অনুদান নেবার সময়, নির্মাতা এ মর্মে নিশ্চয়তা দেন যে, তার গল্প ও অন্যান্য সব আয়োজন মৌলিক ও তার নিজস্ব। এক্ষেত্রে তো মুরাদ পারভেজ সে অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছেন।”

সরকারি অনুদানের চলচ্চিত্র বৃহন্নলা মুক্তি পায় ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত