নিজস্ব প্রতিবেদক

১১ জুন, ২০২২ ২৩:৫৪

বাংলাদেশ ব্যাংকের ১২ গভর্নরের ৮ জনই আমলা

বাংলাদেশ ব্যাংকের ১২তম গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অর্থসচিব আব্দুর রউফ তালুকদার। তিনি বর্তমান গভর্নর ফজলে কবিরের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন।

শনিবার (১১ জুন) অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের উপসচিব জেহাদ উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়। চার বছরের জন্য তাকে নিয়োগ দিয়েছে সরকার, যা আগামী ৪ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।

স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত ১১ জন গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাদের মধ্যে ব্যাংকার ছিলেন ৩ জন, আমলা ছিলেন ৭ জন এবং আমলা ও ব্যাংকারদের বাইরে ছিলেন একজন। আব্দুর রউফ তালুকদার নতুন গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের দিন আমলা থেকে গভর্নর পদে দায়িত্বপ্রাপ্তের এই সংখ্যা হবে ৮ জন।

দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকটির প্রথম গভর্নর আ ন ম হামিদুল্লাহ (১৯৭২-৭৪) ছিলেন একজন ব্যাংকার। আজ যেটি উত্তরা ব্যাংক, তা ছিল মূলত পাকিস্তানের ইস্টার্ন ব্যাংকিং করপোরেশন। ওই ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ছিলেন হামিদুল্লাহ।

দ্বিতীয় গভর্নর এ কে নাজিরউদ্দীন আহমেদ (১৯৭৪-৭৬) ছিলেন স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের নির্বাহী পরিচালক, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক অব পাকিস্তানের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডি । এ কে এন আহমেদ নামে পরিচিত এই ব্যাংকার বিশ্বব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলেও (আইএমএফ) কাজ করেছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর পদে আমলা নির্ভরতার শুরু হয় জিয়াউর রহমানের শাসনামলে। ১৯৭৬-৮৭ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ এগারো বছর তিনি দায়িত্ব পালন করেন। এম নূরুল ইসলাম দেশের প্রথম আমলা গভর্নর। পাকিস্তান সেন্ট্রাল সার্ভিস কমিশনের (সিএসপি) সাবেক কর্মকর্তা ছিলেন তিনি।

তার পরের গভর্নরও আরেক আমলা শেগুফতা বখত চৌধুরী (১৯৮৭-৯২)। তিনি ছিলেন কর ক্যাডারের কর্মকর্তা।

এর পরের গভর্নর এম খোরশেদ আলমও (৯২-৯৬) ছিলেন সাবেক সিএসপি কর্মকর্তা।

আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে জিয়া-এরশাদ ও খালেদা জিয়ার শাসনামলের আমলা নির্ভরতা ভেঙে গভর্নর করেন দেশের বিশিষ্ট ব্যাংকার লুৎফর রহমান সরকারকে (১৯৯৬-৯৮)।

এইধারা আর বজায় থাকেনি। এর পরের গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন (১৯৯৮-২০০১) একাধারে অর্থনীতির শিক্ষক ও সাবেক আমলা।

গভর্নর ফখরুদ্দীন আহমদ (২০০১-২০০৫) ছিলেন অর্থনীতির শিক্ষক, আমলা এবং বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তা।

সালেহউদ্দিন আহমেদও (২০০৫-২০০৯) তাই ছিলেন।

২০০৯ সালে আমলানির্ভরতা ফের ভাঙা হয়। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও শিক্ষক আতিউর রহমানকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০০৯ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত তিনি দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ চুরির ঘটনায় তখনকার গভর্নর আতিউর রহমান পদত্যাগ করেন।

আতিউর রহমানের পদত্যাগের পর ওই বছরের ১৬ মার্চ সাবেক অর্থসচিব ফজলে কবিরকে চার বছরের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পদে নিয়োগ দেয় সরকার। পরে ২০ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকে ১১তম গভর্নর হিসেবে যোগদান করেন সাবেক আমলা, একসময় অর্থসচিব ফজলে কবির। সে হিসেবে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের ১৯ মার্চ। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার ৩৪ দিন আগে ওই বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি গভর্নর হিসেবে তার মেয়াদ ৩ মাস ১৩ দিন বাড়িয়ে দেয় সরকার। যা ওই বছর ৩ জুলাই শেষ হওয়ার কথা ছিল। ওই সময় এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ৬৫ বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত তিনি গভর্নর থাকবেন। কিন্তু এরপর গভর্নর পদের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়িয়ে ৬৭ বছর বয়স করে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার সংশোধন করা হয়। যার ফলে ফজলে কবিরের মেয়াদও ২০২২ সালের ৩ জুলাই পর্যন্ত বেড়ে যায়। প্রথম দফায় ৪ বছর, দ্বিতীয় দফায় ৩ মাস ১৩ দিন এবং তৃতীয় দফায় ১ বছর ১১ মাস ১৫ দিন অর্থাৎ মোট ৬ বছর ৩ মাস গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ফজলে কবির।

ফজলে কবিরের স্থলাভিষিক্ত রউফ তালুকদারও আমলা ও অর্থসচিব। তিনি দেশের ১২তম গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত