ফারুক আহমদ

২৫ মে, ২০১৬ ০২:১২

ক্যারিয়ার গড়তে কৃষি ডিপ্লোমা

শিক্ষা ব্যবস্থার অন্যতম একটি ধারা হচ্ছে কারিগরি শিক্ষা। কর্ম দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ে তুলতে পৃথিবীর সব দেশেই কারিগরি শিক্ষার ওপর যথেষ্ট জোর দেয়া হয়। দেরিতে হলেও আমাদের দেশে কারিগরি শিক্ষাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ২০০৮ সালে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষার্থী ভর্তির হার ছিল ১ দশমিক ২ শতাংশ। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ১১ শতাংশ। ২০২০ সালের মধ্যে এ হার ২০ শতাংশে উন্নীত করা হবে। তিনি বলেন, ২৩টি আন্তর্জাতিক মানের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে নতুন কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হচ্ছে। বিদ্যমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে নতুন আরও এক লাখ শিক্ষার্থী ভর্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

একজন শিক্ষার্থী ভালো ফলাফল থাকা সত্ত্বেও চাকরির বাজারে সাফল্য অর্জন করতে ব্যর্থ হয় শুধু কর্মনির্ভর শিক্ষার অভাবে। অনেক সময় বেকারত্বের অভিশাপও বরণ করতে হয়। প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে প্রতিনিয়ত প্রতিযোগিতা যেভাবে বাড়ছে একইভাবে বাড়ছে উন্নত ক্যারিয়ার গড়ার অসংখ্য সুযোগ। বর্তমানে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা শেষ করে দেশে বা দেশের বাইরে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ পাচ্ছে। এ সুযোগকে কাজে লাগানোর জন্য প্রয়োজন সঠিক ক্যারিয়ার পরিকল্পনা। শিক্ষার্থীদের এ পরিকল্পনায় সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে কর্মমুখী শিক্ষা। আর কর্মমুখী শিক্ষার মধ্যে সবচেয়ে যুগান্তকারী উন্নয়ন ঘটেছে কারিগরি শিক্ষায়।

কৃষি ডিপ্লোমা কি
কর্মমুখী শিক্ষার অন্যতম একটি ধারা হচ্ছে কৃষি ডিপ্লোমা। বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ হলেও আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ সামান্যই। আর এমনই সীমিত সম্পদ দিয়ে বিপুল জনগোষ্ঠীর খাদ্য সমস্যা মেটানোর জন্য উন্নত যেসব ফলনশীল শস্য আর প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন কৃষিবিজ্ঞানী ও কৃষিবিদরা, সেগুলোই কৃষকের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন ডিপ্লোমা কৃষিবিদরা।

আবার নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে কৃষকের সুবিধা-অসুবিধা এবং চাহিদার তথ্য পৌঁছে দিচ্ছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান। তাই নিজের ক্যারিয়ার গড়ার পাশাপাশি কৃষিতে ডিপ্লোমাধারীদের রয়েছে দেশের উন্নয়নে সরাসরি ভূমিকা রাখার সুযোগ। চাকরি করা ছাড়াও নিজ উদ্যোগে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার সুবিধা তো আছেই। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের তথ্যানুযায়ী কৃষি ও মৎস্য সেক্টরে প্রশিক্ষিত জনসম্পদ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১৩টি সরকারি ও ১০১টি বেসরকারি কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট রয়েছে সারাদেশে। এগুলোতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে দুই রকম। মুখোমুখি প্রশিক্ষণ ব্যবস্থায় ইনস্টিটিউটে থেকে পড়াশোনা করতে হয়। আর চাকুরিজীবীদের জন্য দূরশিক্ষণ পদ্ধতিতে সেমিস্টার সিস্টেমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। ব্যবহারিক ক্লাস হয়ে গেলে পরবর্তী সময়ে সপ্তাহে একটি ক্লাস ও পরীক্ষায়ই অংশ নিতে হয় শুধু। এই পদ্ধতিতে পড়তে পারবে শুধু চাকুরিজীবীরা। অন্যান্য ডিপ্লোমার ন্যায় এ কোর্সটিও ৪ বছরের। কোর্সটি সম্পন্ন করতে মোট ৮টি সেমিস্টার পড়তে হবে। প্রতি সেমিস্টারের মেয়াদকাল ছয়মাস। এসএসসির পর ডিপ্লোমা কোর্সটি সম্পন্ন করলে কৃষি শিক্ষার শিক্ষক হিসেবে সরাসরি বিএড ডিগ্রিধারীগণের সমান বেতন স্কেল পাবেন। অন্যান্য চাকুরীর ক্ষেত্রে দ্বিতীয় শ্রেণীর সমমর্যদা পাওয়া যেতে পারে।

কাজের ক্ষেত্র
কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা কোর্স শেষ করে যেকোনো শিক্ষার্থী কৃষি, মাছের চাষ ও পশুপালনের জন্য কাজ করে এমন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে পারেন। এ ছাড়া সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুলে কৃষি শিক্ষার শিক্ষক হিসেবে যোগদান, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনে উপসহকারী পরিচালক পদে, উপসহকারী কৃষি কর্মকতা পদে ও বিভিন্ন কৃষি নিয়ে কাজ করে এমন এনজিওগুলোতে কাজের প্রচুর সুযোগ রয়েছে। কৃষি, পশুপালন ও মৎস্য চাষের ওপর ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্নকারীরা কোটাভিত্তিক এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ পেয়ে থাকেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন, মৃত্তিকা গবেষণা কেন্দ্র, ধান গবেষণা কেন্দ্র ও কৃষি মন্ত্রণালয়েও এখান থেকে ডিপ্লোমা সম্পন্নকারীদের কাজের সুযোগ রয়েছে।

গোয়াইনঘাট উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জয়নুর রশিদ জানালেন, ‘আমি জৈন্তাপুরের তৈয়ব আলী কৃষি প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা করার পরপরই এখানে চাকরি পেয়েছি। এ ছাড়া বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠান কৃষি বিষয়ক কার্যক্রম পরিচালিত করায় আমাদের এখন কাজের ক্ষেত্র অনেক বেশি।’

কী পড়ানো হয়
বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সহ এখানে চার বছরে আটটি পর্বে পড়ানো হয় পরিবেশ বিদ্যা, মাছের চাষ, গৃহপালিত পাখি পালন, মাঠ ফসলের চাষাবাদ, চিংড়ি চাষ ব্যবস্থাপনা, উদ্যান নার্সারি ব্যবস্থাপনা, হ্যাচারি ব্যবস্থাপনা, মাছের পুষ্টি ও খাদ্য ইত্যাদি বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে পড়ানো হয়ে থাকে।

এসএসসি পাসের পর যাঁরা ভাবছেন কোনো বিষয়ে ডিপ্লোমা করবেন, তাঁদের জন্য বলছি, কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলো থেকে কৃষি, মৎস্য চাষ ও পশুপালনের ওপর আপনি ডিপ্লোমা করতে পারেন। এ বিষয়ে ডিপ্লোমা সম্পন্নকারীদের কাজ সরাসরি মাটি ও মানুষের সঙ্গে। ফলে দেশের কৃষি উন্নয়নে অবদান রাখা যায় অনেকাংশে। এর মধ্য দিয়ে নিজের আত্মতৃপ্তিটাও বেশি পাওয়া যায় দেশের উন্নয়নে কাজ করে।  

ভর্তির যোগ্যতা ও খরচাপাতি
এসএসসি বা সমমান পরীক্ষায় নূন্যতম জিপিএ থাকতে হবে ২.৫ এবং আলাদাভাবে গণিতে ও বিজ্ঞানে ৩.০০ থাকতে হয়। যেকোনো বিভাগ থেকে এসএসসি পাস বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা এখান থেকে ডিপ্লোমা করার জন্য আবেদন করতে পারেন। সরকারি কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলোতে চার বছরে শিক্ষা খরচ হবে সব মিলিয়ে ২০ হাজার টাকার মত। আর বেসরকারি কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলোতে ইনস্টিটিউট ভেদে খরচ কমবেশি হতে পারে।

সিলেটে কোথায় ভর্তি হবেন
সিলেট বিভাগের মধ্যে মাত্র দুটি কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট রয়েছে। এর মধ্যে একটি সিলেটের খাদিম নগরে অবস্থিত ‘সিলেট এটিআই’। প্রতিষ্ঠানটি সরকারী। এখানে শুধুমাত্র কৃষি ডিপ্লোমা বিষয়ে কোর্সটি চালু আছে। এছাড়া বেসরকারী উদ্যোগে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলা সদরে অবস্থিত তৈয়ব আলী কারিগরি কলেজে ২০০৪ সালে কৃষি ডিপ্লোমা কোর্সটি চালু হয়। পরবর্তীতে ২০১২ সালে ‘‘তৈয়ব আলী এটিআই’’ নামে সতন্ত্র  প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরু করে। এ ইনস্টিটিউটে  কৃষি ডিপ্লোমা ও ফিসারিজ ডিপ্লোমা কোর্স দুটি চালু আছে।

লেখক : সাংবাদিক ও জৈন্তাপুর তৈয়ব আলী কারিগরি কলেজের পরিচালনা পর্যদের সভাপতি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত