২৯ ডিসেম্বর, ২০১৪ ১২:১৪
নদী বা সমুদ্রের পানিতে ভেসে থাকা তেল অপসারণের জন্য নতুন একটি যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী মো. ফারুক বিন হোসেন ইয়ামিন৷ তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে এই পরীক্ষা সফল হয়েছে৷
সুন্দরবনের শেলা নদীতে তেল ট্যাংকার ডুবে যাওয়ার পর তেল ছড়িয়ে পড়ে নদীতে, যা অপসারণে স্থানীয় মানুষকে কাজে লাগানো হয়৷ নারী ও শিশুসহ সবাই খালি হাতে সেই তেল তোলার কাজ করেন৷ এটা আহত করে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী মো. ফারুক বিন হোসেন ইয়ামিনকে৷ তিনি চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে সাধারণ মানুষের এই তেল তোলার কাজকে কম খরচে যান্ত্রিকভাবে করার কথা ভাবতে থাকেন৷
আর সেই ভাবনা থেকেই দেশীয় পদ্ধতিতে তৈরি করে ফেলেন তেল অপসারণের যন্ত্র৷ প্রাথমিকভাবে তিনি ছোট আকারে ‘কর্কসিট' দিয়ে যন্ত্রটি তৈরি করে সফল হলেও, এটি বড় আকারেও করা সম্ভব৷
মো. ফারুক বিন হোসেন ইয়ামিন ডয়চে ভেলেকে জানান, যন্ত্রটির দুটি অংশ – তেল শোষক এবং পাম্প৷ নির্দিষ্ট স্তরের তেল শোষন ক্ষমতা সম্পন্ন শোষক অংশটি দুটি স্তর বিশিষ্ট মুখের মতো কাঠামো, যা তেলের নির্দিষ্ট স্তরকে শোষন করে ভেতরের দিকে প্রবাহিত করে৷ সেই প্রবাহিত তেল পাম্পের মাধ্যমে শোষিত হয়ে সংগ্রাহক আধারে জমা হয়৷ অর্থাৎ সংগ্রাহক পাত্রে তেল এবং কিছু পরিমাণ পানি জমা হয়৷ কিন্তু আধারটির নীচের দিকের নিষ্কাশন ভাল্ব খুলে দিয়ে পানির স্তরটি অপসারণ করলে ঐ সংগ্রাহক পাত্রে শুধু তেলই জমা হবে, যা কিনা পরবর্তীতে ড্রামে ভরে ব্যবহারের জন্য অপসারণ করা যাবে৷
তিনি বলেন, বড় আকারে স্টিল দিয়ে তৈরি করা হলে শোষক যন্ত্রটির প্রতিটি ইউনিট দৈর্ঘ্যে ২০ ফুট হবে৷ এছাড়া তেলের স্তরের ওপর নির্ভর করে এর প্রস্থ হ্রাস বা বৃদ্ধি করার ব্যবস্থা থাকবে, যাতে শোষক অংশটির মুখ তেলের স্তরের গভীরতা অনুযায়ী পানির ওপরে স্থাপন করা যায়৷
মো. ফারুক জানান, ২০ ফুটের একটি যন্ত্রের জন্য আট থেকে দশ অশ্ব ক্ষমতা সম্পন্ন ডিজেল পাম্প ব্যবহার করতে হবে, যা প্রতি ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার লিটার তেল উত্তোলন করতে সক্ষম৷ এই ক্ষমতা পাম্পের অশ্ব ক্ষমতার উপর নির্ভরশীল৷ এর অর্থ, কতটি ইউনিট ব্যবহার করা প্রয়োজন সেটা নদীর প্রস্থ এবং তেলের পরিমাণের উপর নির্ভর করবে৷ তাঁর কথায়, দেশীয় উপাদানে একটি শোষক ইউনিট তৈরি করতে দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকা ব্যয় হবে৷
প্রাথমিকভাবে ‘কর্কসিট' দিয়ে তৈরি যন্ত্রটির কার্যকারিতা দেখা হয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পুকুরে মঙ্গলবার৷ এবং এই পরীক্ষা সফল হয়েছে বলে জানিয়েছেন মো. ফারুক বিন হোসেন ইয়ামিন৷
তিনি জানান, দুর্ঘটনা ঘটার পর অতি দ্রুততার সাথে নদীতে আড়াআড়িভাবে রাবার টিউব অথবা রাবার ডেম দিয়ে তেল ছড়িয়ে পড়া এলাকা আবদ্ধ করে দিতে হবে৷ এতে নীচ দিয়ে পানি চলে যাবে, কিন্তু তেলের স্তরটি টিউব বেষ্টিত এলাকায় আবদ্ধ থাকবে৷
পরবর্তীতে এ যন্ত্রটি ব্যবহার করে ৮০ থেকে ৯০ ভাগ তেল অপসারণ করা সম্ভব৷
মো. ফারুক বলেন, যন্ত্রটি ৭০ ভাগ তেল এবং ৩০ ভাগ পানি শোষন করে৷ পরে তেল এবং পানি আলাদা করে ঐ তেল ব্যবহারের উপযোগীও করা যাবে৷
ইয়ামিন বলেন, ‘‘আমি এই যন্ত্রটি দেশের কাজে লাগাতে চাই৷ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় বা সরকারের কোনো কর্তৃপক্ষ এগিয়ে এলে আমি বড় আকারের এই শোষক যন্ত্র তৈরি করব৷'' এছাড়া বাণিজ্যিকভাবে কোনো প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এলেও তাঁর কোনো আপত্তি নেই বলে জানান মো. ফারুক বিন হোসেন ইয়ামিন৷
আপনার মন্তব্য