বাঙালির জিভে জল আনা আমসত্ত্ব দিয়ে এ বারে প্রতিমা তৈরি করে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন ভারতের উত্তরবঙ্গের মালদহের সমর পাল। মণ্ডপে পৌঁছানোর আগেই  তাঁর এই আমসত্ত্বের প্রতিমা দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন এলাকার মানুষ। বিশেষ করে কচিকাঁচারা।

শিল্পীর কথায়, ‘‘মালদহের আম ও আমসত্ত্বের সুনাম দেশ জুড়ে। তাই বছর খানেক আগে ভেবেছিলাম আমসত্ত্ব দিয়ে দুর্গা প্রতিমা তৈরি করা যায় কি না। প্রথম দিকে সমস্যা হচ্ছিল প্রতিমা তৈরি করতে। এক ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করে তবে কাজটা করা গিয়েছে।’’

হবিবপুর ব্লকের বুলবুলচন্ডীর ডাঙাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সমরবাবু। বাবা নারায়ণচন্দ্র দাসের কাছে প্রতিমা তৈরির হাতেখড়ি হয়েছিল। বছর দশেক ধরে প্রতিমা গড়ছেন তিনি। এ বার বাবা, ছেলে মিলে তৈরি করেছেন মোট ১৫টি মাটির দুর্গা। তবে আমসত্ত্ব দিয়ে তৈরি প্রতিমা প্রথম থেকেই নজর কেড়েছে সাধারণ মানুষের।

আমসত্ত্ব প্রস্তুতকারকদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, খোলা জায়গায় রেখে দিলে তা নষ্ট হয়ে যায়। রঙও পাল্টে যায়। খুব যত্নে রাখতে হয় আমসত্ত্ব। তাই তা দিয়ে প্রতিমা তৈরি করা খুব সহজ কাজ নয় বলেই মনে করছেন প্রস্তুতকারকেরা। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়েছেন সমরবাবুই।

গত তিন মাস ধরে আমসত্ত্ব দিয়ে গড়েছেন দেবী মূর্তি। প্রতিমা তৈরি করতে আমসত্ত্ব লেগেছে প্রায় ৮০ কেজি। সাড়ে তিনশো টাকা কেজি দরে বাজার থেকে তা কিনেছেন তিনি। আমসত্ত্ব ছাড়াও উপকরণ হিসেবে তিনি ব্যবহার করেছেন খড়, কাগজ এবং রাঙতা।

প্রথমে বাঁশ ও খড় দিয়ে তৈরি করেছেন কাঠামো। তারপর কাগজ দিয়ে ঢেকেছেন সেই কাঠামো। এরপর কাগজের উপর আমসত্ত্ব দিয়ে প্রতিমা তৈরি হয়েছে। এমনকি দেবী মূর্তির অলঙ্কারও তৈরি হয়েছে আমসত্ত্বের। আর মাঝে দেওয়া হয়েছে রাঙতা। প্রথম দিকে সমস্যায় পড়তে হয়েছিল সমরবাবুকে।

আমসত্ব ব্যবহার করার পর তা রস হয়ে তা পড়ে যাচ্ছিল এবং পিঁপড়ের উপদ্রব বাড়ছিল। তাই বিশেষ এক ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করেছেন তিনি। সেই রাসায়নিক এখনও পর্যন্ত দু’বার স্প্রে করা হয়েছে।  প্রতিমা মণ্ডপে যাওয়ার আগে আরও একবার স্প্রে করা হবে।

অভিনব উপকরণ দিয়ে তৈরি এই প্রতিমাটি শোভা পাবে ইংরেজবাজার শহরের গয়েশপুরের মালদহ ঐক্য সম্মেলনীর পুজো মণ্ডপে। সমরবাবু বলেন, ‘‘পুজো উদ্যোক্তারাও আমাকে খুব সহযোগিতা করেছেন। আমার ভাবনা শুনে তাঁরা উৎসাহিত হয়েছিলেন। এরপরেই আমি আমসত্ত্ব দিয়ে প্রতিমা তৈরি করার ঝুঁকি নিয়েছিলাম।’’

বছরের পর বছর ধরে গতানুগতিকভাবে মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরি করে আসছেন নারায়ণ চন্দ্র পাল। ছেলে নতুন কিছু করার উদ্যোগ নেওয়ায় খুশি তিনিও। তিনি বলেন, ‘‘আমরা কখনও ভাবতে পারিনি যে আমসত্ত্ব দিয়ে প্রতিমা তৈরি করা যায়। আমরা শুধু মাটি দিয়েই প্রতিমা গড়েছি।’’ শিল্পী থেকে শুরু করে পুজো উদ্যোক্তাদের আশা, জিভে জল আনা আমসত্ত্বের তৈরি প্রতিমা দেখতে কচিকাঁচাদের সঙ্গে ভিড় জমাবেন বড়রাও।

সুত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা।