মঙ্গল গ্রহে সফলভাবে অবতরণ করেছে আমেরিকান মহাকাশ সংস্থা নাসার মহাকাশযান। বাংলাদেশ সময় শুক্রবার রাত ২টা ৫৫ মিনিটে মঙ্গলগ্রহ থেকে টুইট করে নিজের সফল অবতরণের তথ্য নিশ্চিত করে এই মহাকাশচারী রোবট ‘পারসিভিয়ারেন্স’।

ছয় চাকার এই স্বয়ংচালিত যানটি পৃথিবী থেকে তার ৪৭০ মিলিয়ন কিলোমিটার (৪৭ কোটি মাইল) পথের যাত্রা শুরু করেছিল সাত মাস আগে।

যেখানে এই মহাকাশ রোবটের মঙ্গলপৃষ্ঠ স্পর্শ করছে সেই স্থানটি হল জেযেরো ক্রেটার। একসময় এই গহ্বরের স্থানটিতে বিশাল একটি হ্রদ থাকার লক্ষণ উপগ্রহে পাওয়া ছবি থেকে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন। তাদের ধারণা এই হ্রদটিতে প্রচুর পানি ছিল এবং সম্ভবত সেখানে জীবনও ছিল।

পারসিভেয়ারেন্সের অবতরণের স্থান জেযেরো গহ্বরের ধুলাবালুর মধ্যে থেকে নমুনা সংগ্রহ করবে রোবট যানটি, যা বিশ্লেষণ করে দেখা হবে গ্রহটিতে অতীতে জৈব কোন কর্মকাণ্ডের হদিস ছিল কিনা। সবচেয়ে লক্ষণযুক্ত ও সম্ভাবনাময় নমুনা পৃথিবীতে পাঠানো হবে ভবিষ্যত মিশনের প্রস্তুতির জন্য।

অবতরণের আগে নাসায় পারসিভেয়ারেন্সের উপ প্রকল্প ম্যানেজার ম্যাট ওয়ালেস বলেছেন, মহাকাশ মিশনে সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জগুলোর অন্যতম হল সফল অবতরণ। মঙ্গলগ্রহে এর আগে যেসব মিশন পাঠানো হয়েছে তার মধ্যে ৫০ শতাংশ যান মঙ্গলের পিঠে সফলভাবে অবতরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। কাজেই এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

মহাকাশযানটির সঙ্গে আছে একটি ক্ষুদ্র হেলিকপ্টার, ‘ইনজেনুইনিটি’। সৌরবিদ্যুৎচালিত এই হেলিকপ্টারটি ১০ দিন ধরে সূর্যের আলোয় পুরোপুরি চার্জ হওয়ার পর রোভার থেকে উড্ডয়ন করবে। এরপর এটি চার্জ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত ২০ সেকেন্ড ধরে মঙ্গলপৃষ্ঠের ওপর উড়বে এবং প্রাণের অস্তিত্বের খুঁজতে পারসিভিয়ারেন্সকে সাহায্য করবে।

ছবি তোলার পাশাপাশি শব্দ রেকর্ড করে পৃথিবীতে অডিও ও লিখিত বার্তা পাঠাতেও সক্ষম এই রোবট। ২০৩০ সাল পর্যন্ত এই মহাকাশচারী রোভার মঙ্গলপৃষ্ঠে নজরদারি চালাবে। এরপর মঙ্গলগ্রহের আবহাওয়া ও ভূতাত্ত্বিক তথ্য নিয়ে ফিরে আসবে পৃথিবীতে। পারসিভিয়ারেন্সের পাঠানো সব তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে মঙ্গলগ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব আদৌ ছিল কি না বা এখানে মানুষের বসবাস সম্ভব কি না সেটিও জানা যাবে।

উল্লেখ্য, মঙ্গলগ্রহে নভোযান অবতরণের ১৪টি প্রচেষ্টা আগে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সফল হয়েছে আটটি আর এর সবগুলোই ছিল আমেরিকান মিশন। তবে ১৯৯৯ সালে একবার নাসার মঙ্গল মিশন ব্যর্থ হয়েছিল।