নিউজ ডেস্ক

০৬ ফেব্রুয়ারি , ২০১৫ ০০:০৭

হাসিনা সরকারের পাশে থাকতে চায় বিজেপি

ফাইল ছবি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

বাংলাদেশে চলমান অস্থিরতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুত রয়েছে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি। বৃহস্পতিবার বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে একথা বলা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিজেপির প্রথম সারির নেতারা জানিয়েছেন- শেখ হাসিনার মতো ‘পরীক্ষিত বন্ধুর’ পাশ থেকে সরে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। তবে একান্ত আলোচনায় তারা এটাও স্বীকার করছেন, বিরোধী বিএনপির সঙ্গেও তাদের যোগাযোগ আছে – কিন্তু সেটা স্বাভাবিক রাজনৈতিক সম্পর্কর বাইরে কিছু নয়।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সাম্প্রতিক ভারত সফরেও বাংলাদেশে গণতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তার ওপর ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়েই গুরুত্ব আরোপ করেছে বলে তারা জানান।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে গত বছরের ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের বর্ষপূর্তি থেকে বর্তমান সঙ্কটের শুরু, সেই নির্বাচনকে বলিষ্ঠভাবে সমর্থন করেছিল প্রতিবেশী ভারত। তার কয়েক মাসের মধ্যে খোদ ভারতেই ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে – কিন্তু কংগ্রেসকে হটিয়ে যারা দিল্লির ক্ষমতায় এসেছে সেই বিজেপি নেতৃত্বও শেখ হাসিনার ওপর পুরোপুরি ভরসা রাখতে রাজি বলেই আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত বিজেপি নেতা সিদ্ধার্থ নাথ সিং, যিনি বাংলাদেশের রাজনীতিকদের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন – তিনি সেটা একরকম স্বীকারও করে নিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘ভারতের সম্পর্কটা যদিও বাংলাদেশের সঙ্গে, তারপরও কোন দল সেখানে ক্ষমতায় সেটাও কিন্তু একটা ফ্যাক্টর। আর সে দিক থেকে বলতেই হবে, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের স্বার্থের প্রতি, আমাদের উদ্বেগের প্রতি দারুণ বিবেচনা দেখিয়েছেন। আর বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে ভারত যে জাতীয় স্বার্থকেই সবচেয়ে গুরুত্ব দেবে, তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না।’

ফলে শেখ হাসিনার ব্যাপারে ভারতের মোটেই কোনও ধৈর্যচ্যুতি হয়নি বলেই বিজেপি নেতারা বলছেন। বরং তাদের যুক্তি, ‘গণতন্ত্রের ওপর আস্থা রাখতে গেলে শেখ হাসিনাই কিন্তু আমাদের একমাত্র অপশন – কারণ ভারত মনে করে তিনি বাংলাদেশে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একটি সরকারের প্রধান।’

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের এই মুহূর্তে যে সঙ্কট চলছে, সেটাকে ঠিক ‘নজিরবিহীন’ না মনে-করলেও সেখানকার নিরাপত্তা পরিস্থিতি তাদের কপালেও কিন্তু ধীরে ধীরে ভাঁজ ফেলছে।

বিজেপির পক্ষ থেকে তাদের জাতীয় মুখপাত্র এম জে আকবর বাংলাদেশ-সংক্রান্ত অনেক বিষয় দেখাশোনা করেন। সেই আকবরও বলছিলেন ভারত চায় সেখানে পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হোক – কিন্তু তার জন্য ভারত আদৌ কোনও হস্তক্ষেপ করতে রাজি নয়।

তার কথায়, ‘আমরা সব সময় চাই আমাদের দেশে ও প্রতিবেশী দেশে শান্তি থাকুক। কিন্তু প্রতিবেশী দেশে পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে উঠলেও সেখানে নাক গলানো বা হস্তক্ষেপ করাটা কিন্তু ভারতের নীতি নয়। সেটা ভারত কখনও করেনি, করবেও না।’

শ্রীলঙ্কা, নেপাল বা তিব্বতের ইতিহাসের দিকে তাকালে তার এই বক্তব্য মেনে নেওয়া কঠিন ঠিকই – কিন্তু বিজেপি নেতারা দাবি করছেন বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটা পুরোপুরি সত্যি কথা – কারণ বাংলাদেশ পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করে ভারত শেখ হাসিনার সমস্যা বাড়াতে চায় না।

তবে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ভারতের ক্ষমতাসীন নেতৃত্বের ধারণা – বাংলাদেশে এই মুহূর্তে সামরিক অভ্যুত্থানের কোনও আশঙ্কা নেই, ফলে অভ্যুত্থান হলে তারা শেখ হাসিনাকে সমর্থন করবেন কি না সে প্রশ্নও অবান্তর।

প্রতিবেদনে বলা হয়, হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা নাকচ করে দিলেও বিজেপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা স্বীকার করছেন, বাংলাদেশে পরিস্থিতির দিকে তাদের সতর্ক নজর আছে – এমনকি বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গেও গত আট মাসে ধীরে ধীরে তাদের একটা রাজনৈতিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।

বিগত ইউপিএ আমলে বিএনপির সঙ্গে ভারতের যোগাযোগ একরকম থেমেই গিয়েছিল, সেটা আবার নতুন করে শুরু হয়েছে।

তবে প্রসঙ্গটা এমনই স্পর্শকাতর, যে বিজেপি নেতারা বিএনপির সঙ্গে তাদের সম্পর্কর বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতেও চান না – আবার অস্বীকারও করতে পারছেন না।

এই পরিস্থিতিতে বিজেপি নেতারা একটা কথাই শুধু জোর দিয়ে বলছেন, বাংলাদেশ সঙ্কটের সমাধান খুঁজতে হবে গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যেই – তার অর্থ যেভাবেই করা হোক না কেন। গণতন্ত্রের বাইরে এই সঙ্কটের অন্য কোনও সমাধান নেই – সেটাও তারা বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন।

উল্লেখ্য, ভারতের সর্বশেষ নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির জয়লাভের পর উল্লাস প্রকাশ করেছিল বিএনপি এবং তারা আশা করেছিল কংগ্রেস সরকারের মতো বিজেপি সরকার আওয়ামিলীগের প্রতি সমর্থনের হাত বাড়াবে না। কিন্তু মোদি ক্ষমতায় আসার কয়েক দিনের মধ্যে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরের পর হাসিনা সরকারের সাথে মোদির সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ পায়। এছাড়াও নিজ কার্যালয়ে 'অবরুদ্ধ' থাকার পর বিজেপি সভাপতি অমিত খালেদা জিয়াকে টেলিফোন করেছিলেন বলে ভূয়া সংবাদ প্রচার কারণে বিএনপির প্রতি আস্থা রাখতে পারেনি ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত