সিলেটটুডে ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক

১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ১৩:০৩

যুদ্ধের সেই বিখ্যাত ছবি ফিরিয়ে আনলো ফেসবুক

১৯৭২ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় তোলা যে ছবিটি তখন বিশ্বজুড়ে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিল, সেটি ফেসবুক থেকে তুলে নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে আবার ফিরিয়ে এনেছে ফেসবুক।

নাপাম বোমায় পুড়ে যাওয়া নয় বছরের এক নগ্ন মেয়ে রাস্তা দিয়ে দৌড়ে পালাচ্ছে। পেছনে দেখা যাচ্ছে বোমা হামলার পর কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী। ভিয়েতনাম যুদ্ধের ভয়াবহতা ফুটে উঠেছিল এই ছবিতে। বিশ্বের শত শত প্রকাশনায় বহুবার প্রকাশিত হয়েছে এই ছবি।

কিন্তু সম্প্রতি ফেসবুক একটি পোস্ট থেকে 'নগ্নতার' অভিযোগে এই ছবিটি সরিয়ে নিয়েছিল। তবে সমালোচনার মুখে সেটি আবার ফেসবুক শেয়ার করার সুযোগ করে দিয়েছে।

নরওয়ের সর্বাধিক প্রচারিত আফটেনপোস্টেন পত্রিকার সম্পাদক এস্পেন এজিল হ্যানসেন অভিযোগ করেন, ফেসবুক এই ছবিসহ পুরো পোস্ট ডিলিট করে দিয়েছে। এমনকি যে রিপোর্টার এই ছবি পোস্ট করেছিলেন, তার একাউন্ট পর্যন্ত সাসপেন্ড করে দেয়া হয়েছে। তিনি দাবি করেন, মার্ক জাকারবার্গ আসলে তার ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন।

ফেসবুক অবশ্য বলছে, সাংস্কৃতিক কারণে 'নগ্নতা' বলে বিবেচিত হতে পারে- এমন বিষয় তাদের নিষিদ্ধ করতে হয়। তবে হ্যানসেন এই যুক্তি মানতে নারাজ। তিনি বলেন, নাপাম বোমা হামলার এই বিখ্যাত ছবিটি ফেসবুকে পোস্ট করার ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে সরিয়ে নেয়া হয়।

মার্ক জাকারবার্গের কাছে লেখা এক খোলা চিঠিতে হ্যানসেন তার বিরুদ্ধে সেন্সরশিপের অভিযোগ তুলেছেন। এতে তিনি মার্ক জাকারবার্গকে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর সম্পাদক বলে বর্ণনা করেন। তিনি লিখেছেন, "বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম এখন স্বাধীনতা খর্ব করতে চাইছে এবং অনেক সময়ই এটি করা হচ্ছে স্বৈরাচারী কায়দায়।"

হ্যানসেন বলেন, "যদি আপনি একটি যুদ্ধের প্রামাণ্য ছবির সঙ্গে শিশুদের নগ্ন ছবির পার্থক্য বুঝতে না পারেন, তাহলে তা কেবল নির্বুদ্ধিতারই প্রসার ঘটাবে।"

ছবিটি ফিরিয়ে আনায় স্বস্তি ও আনন্দ প্রকাশ করেছে ছবি পোস্ট করায় অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ড হয়ে যাওয়া টম এগেল্যান্ডও।

ছবির এই মেয়েটি কে?

বিখ্যাত ছবিটিতে যে মেয়েটিকে দৌঁড়ে পালাতে দেখা যাচ্ছে তার নাম কিম ফুক। সায়গনের (বর্তমানে হো চি মিন সিটি) উত্তরে ১৯৭২ সালে যখন নাপাম বোমা হামলা হয়, তখন তার বয়স মাত্র নয়। কিম ফুকের সমস্ত শরীর মারাত্মকভাবে দগ্ধ হয়। ছবিটি তুলেছিলেন ফটোগ্রাফার নিক উট। তিনি এবং ব্রিটিশ টেলিভিশন সাংবাদিক আইটিএন-এর ক্রিস্টোফার ওয়েন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান।

কিম ফুক বাঁচবেন তেমন আশা ছিল না। তবে বিস্ময়করভাবে তিনি বেঁচে যান। ১৪ মাস হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার পর তিনি বাড়ি ফিরে যান।

ক্রিস্টোফার ওয়েন ২০১০ সালে এই ঘটনার স্মৃতিচারণ করে বলেন, "বোমা হামলার পর প্রচণ্ড উত্তাপে মনে হচ্ছিল কেউ যেন নরকের দরজা খুলে দিয়েছে। আমরা তারপর দেখলাম কিম এবং অন্য শিশুরা দৌঁড়ে আসছে। তাদের কেউ কোনো শব্দ করছিল না। কিন্তু বড়দের দেখার সঙ্গে সঙ্গে তারা চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করল।"

কিম ফুকের বয়স এখন ৫৩। তিনি থাকেন কানাডার টরোন্টোতে। কিন্তু ৪৪ বছর আগে বোমা হামলার আঘাতের যন্ত্রণা এখনো বয়ে বেড়াতে হচ্ছে তাঁকে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত