সিলেটটুডে ডেস্ক

০৮ জুলাই, ২০১৭ ১৪:০৭

সত্য নেতিবাচক প্রচারণা নয়, বাংলাদেশকে এইচআরডব্লিউ

‘সত্য বললেই তাকে নেতিবাচক প্রচারণা বলা যায় না’ হিসেবে মন্তব্য করেছে নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। বিরোধী নেতাসহ কয়েকশ’ গুম ও গোপন আটক বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের দাবিকে নাকচ করে দিয়েছে সংস্থাটির দাবি করেছে, তাদের প্রকাশিত প্রতিবেদন সত্য। নিজেদের ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বিবৃতিতে এইচআরডব্লিউ বাংলাদেশের উদ্দেশে বলেছে, ‘সত্য বললেই তাকে নেতিবাচক প্রচারণা বলা যায় না।’

গত বৃহস্পতিবার ‘তিনি আমাদের কাছে নেই: বাংলাদেশে গোপন আটক আর গুম’ শিরোনামে ৪৮ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন প্রকাশ করে এইচআরডব্লিউ।

এতে বলা হয়, ২০১৩ সাল থেকে কয়েকশ' মানুষ গুম কিংবা গোপন আটকের শিকার হয়েছেন, যাদের মধ্যে কয়েকজন বিরোধী নেতাও রয়েছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, শুধুমাত্র ২০১৬ সালেই ৯০ জন গুম হয়েছেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগকে এক সপ্তাহ বা এক মাস গোপন স্থানে আটকে রাখার পর আদালতে হাজির করা হয়েছে।

২০১৭ সালের প্রথম পাঁচ মাসে এ রকম ৪৮ জন নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে বলে দাবি এইচআরডব্লিউ’র।

তাদের কাছে তথ্য থাকার দাবি করে সংস্থাটি বলছে, এ রকম আটক ২১ জনকে পরে হত্যা করা হয়েছে। আর নয়জনের কোনো তথ্যই আর জানা যায়নি।

এই প্রতিবেদন নাকচ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল অভিযোগ করেন, বাংলাদেশে শত শত ‘গোপন আটক’ আর ‘গুম’ মূলত হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ‘নেতিবাচক প্রচারণা’।

শুক্রবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের সময়ও আমাদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা করেছে এই সংগঠনটি। তাদের বর্তমান প্রতিবেদনটিও সেই প্রচারণার অংশ।’

বাংলাদেশ সরকারের এই বক্তব্যেরই প্রতিক্রিয়ায় শুক্রবার এক বিবৃতিতে এইচআরডব্লিউ’র এশিয়া বিষয়ক পরিচালক মিনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, ‘না বাংলাদেশ, সত্য বলার মানে ‘নেতিবাচক প্রচারণা’ নয়।’

প্রতিবেদন প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা আছে। তারা এসব নিয়ে কিছু বলে না। তারা (এইচআরডব্লিউ) এতো গায়ে পড়ে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে আসে কেন?’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এ প্রশ্নের জবাবে এইচআরডব্লিউ’র বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত শীর্ষ ব্যক্তি হিসেবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, জাতিসংঘ কখনো বাংলাদেশের কথিত গুমের ব্যাপারে কিছু বলেনি।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দাবি, তাদের মতোই গুম-সংক্রান্ত বিষয়ে কাজ করা জাতিসংঘ ওয়ার্কিং গ্রুপের ক্ষেত্রেও বারবার অভিযোগগুলোর ব্যাপারে মন্তব্য করার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ।

জাতিসংঘ এ ব্যাপারে 'কঠোর সতর্কতা' জারি করেছে বলেও উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।

শুক্রবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘নানা কারণে আমাদের দেশে মানুষ গুম হয়। কোনো সময় ব্যবসায়িক কারণে, যখন দেনা হয়ে যায় তখন লুকিয়ে থাকে। কখনো বা সামাজিক কারণে লুকিয়ে থাকে। কখনো বা বড় বড় অপরাধী যখন দেখে, পাপের ভার এমনই হয়ে গেছে যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার খোঁজ শুরু করেছে, সেই সময় সে আত্মগোপনে যায়।’

তিনি বলেন, ‘এগুলো যদি গুম বলতে হয় তাহলে গুমের সংজ্ঞাই পরিবর্তন করতে হবে।’

আসাদুজ্জামান খান কামাল দাবি করেন, ‘গুমের যে খবর আছে, এর অধিকাংশই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খুঁজে বের করেছে। যারা ব্যবসায়িক কারণে গুম হয়েছে, আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী তাদের খুঁজে বের করেছে।’

এসবের জবাবে এইচআরডব্লিউ’র দাবি, তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখিত প্রতিটি ঘটনার বিস্তারিত বিশ্লেষণ হাজির করেছে তারা। ডিবি, র‍্যাব কিংবা প্রশাসনের নামে তাদের কোথা থেকে, কখন, কীভাবে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তার বিস্তারিত বিবরণ উল্লেখ করা হয়েছে।

সংস্থাটি আরো দাবি করেছে, ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পর স্বজনদের পক্ষ থেকে এদের খোঁজ জানতে চাইলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের আটক রাখার কথা অস্বীকার করেছে। বিনা বিচারে দিনের পর দিন আটক রাখার পর এদের কাউকে কাউকে আদালতে হাজির করা হয়েছে আদালতে, কাউকে কাউকে চুপ থাকার হুমকি দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ গুম বা ‘ক্রসফায়ার’র শিকার হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন তৈরি করতে গিয়ে নিখোঁজ পরিবারের সদস্য ও প্রত্যক্ষদর্শীসহ ১০০ জনের বেশি মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। সেখানে পুলিশের কাছে করা অভিযোগ ও অন্যান্য আইনি কাগজপত্রও রয়েছে।

সংস্থাটি বলছে, এসব অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা চাইলেও তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, এসব ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগও গ্রহণ করে না পুলিশ।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারকে এসব অভিযোগ তদন্ত করার আহবান জানিয়ে এইচআরডব্লিউ বাংলাদেশ সরকারকে ন্যায়বিচার নিশ্চিতের তাগিদ দেয়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিবৃতিতে সংস্থাটি আরো বলছে, প্রতিবেদনে উল্লেখিত অভিযোগগুলো তদন্তের আওতায় না নিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।

এদিন এইচআরডব্লিউ প্রতিবেদনের স্বপক্ষে ভিকটিমদের সাক্ষাৎকারের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত